Join Telegram Join Facebook বাংলা রচনা
সাহিত্যের ইতিহাস সাজেশান Question-Paper
WBCS স্কুল নোটস ইতিহাস

অ্যারিস্টটলের পোয়েটিক্স বা কাব্যতত্ত্ব এর মূলপাঠ, Full Text

প্রিয় শিক্ষার্থীরা,

আজকে তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো অ্যারিস্টটলের কাব্যতত্ত্ব এর মূলপাঠ ||  NET SET Bengali, নেট সেট বাংলা বিষয়ের জন্য এই অংশটি গুরুত্বপূর্ণ। এই মূলপাঠ  তোমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হতে পারে।




✅ Join Our Telegram Channel ✅









অ্যারিস্টটলের কাব্যতত্ত্ব এর মূলপাঠ থেকে বাংলা বিষয়ের নেট সেট ছাড়াও এম.এ. এর জন্য উপকারী অনেক তথ্য পাওয়া যাবে। তাছাড়া অ্যারিস্টটলের কাব্যতত্ত্বের মূল দিকগুলি সম্বন্ধে সাধারণ ধারণা গড়ে উঠবে। আমাদের আশা এই পোস্ট তোমাদের পরীক্ষায় খুবই কাজে আসবে।


অ্যারিস্টটলের কাব্যতত্ত্ব এর মূলপাঠ


অ্যারিস্টটলের পোয়েটিক্স বা কাব্যতত্ত্ব এর মূলপাঠ, Full Text of Poetics By Aristotle in Bengali




গ্রীকভাষায় একটি প্রবাদ আছে, 'মেগা বিবলিওন্ মেগা কাকোন', অর্থাৎ বড় বই মানেই বড় জঞ্জাল। প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীতে বহু বড় বড় বই-ই পৃথিবীর জঞ্জাল বাড়িয়েছে। অথচ অনেক ছোট ছোট বই বারবার পঠিত হয়েছে, মানুষকে ভাবিয়েছে, নতুন চিন্তায় উদ্বুদ্ধ করেছে, সাবলীল ডানায় কাল থেকে কালান্তরে উড়ে এসেছে। আরিস্টটলের 'কাব্যতত্ত্ব' সেই রকম একটি ছোট বই, কিংবা বই বলা চলে না, বই-এর খসড়া মাত্র।


আজ আমরা মোটামুটি জানি যে আরিস্টটল 'কাব্যতত্ত্ব' প্রকাশের উপযোগী ক'রে রচনা করেননি। এর মধ্যে আছে পরিভাষার অসঙ্গতি, চিন্তার অসংলগ্নতা, শব্দপ্রয়োগে উদাসীনতা এবং বহুক্ষেত্রে স্মৃতি বিভ্রমের চিহ্ন। তার কারণ হ'ল, সম্ভবত, টুকরো টুকরো, ভাবে এর বিভিন্ন অংশ লেখা হয়েছিল, কখনও অনুচ্ছেদের আকারে, কখনও পরিচ্ছেদের আকারে, কখনও বা সংক্ষিপ্ত বাক্যে। আরিস্টটল তাঁর ছাত্রদের সঙ্গে সাধারণভাবে সাহিত্যপ্রসঙ্গ, গ্রীক সাহিত্যের ইতিহাস ও প্রকৃতি সম্বন্ধে নানা আলোচনা করতেন। বর্তমান 'কাব্যতত্ত্ব' সেইসব আলোচনার বিষয় সূত্রাকারে লেখা। অর্থাৎ তাঁর সাহিত্যবিষয়ক বক্তৃতামালার 'নোটস্'-এবং কোন কোন অংশ হয়ত ছাত্রদের নেওয়া নোট্স। এর কোন কোন জায়গা বিশদ, সরল, স্পষ্ট; কোন কোন জায়গা সংক্ষিপ্ত, অতি সংক্ষিপ্ত, কখনও বা অস্পষ্ট, কখনও দুর্বোধ্য। বক্তব্যের সংক্ষিপ্ততার জন্যই মার্গোলিউথ 'কাব্যতত্ত্বে'র সঙ্গে পাণিনির সূত্রের তুলনা করেছেন। ষড়বিংশ অধ্যায়ে যেখানে মহাকাব্য ও ট্রাজেডির ছন্দ প্রসঙ্গ উঠেছে সেখানকার অর্থোদ্ধার বেশ কঠিন। অধ্যাপক এস্ বলেছেন, এখানে যেন কয়েকটি সূত্র, শর্টহ্যাণ্ডে লেখার মতন। পূর্ণবাক্যও নেই সর্বত্র। আবার অনেক জায়গায় আরিস্টটল উদাহরণ দিয়েছেন ব্যাখ্যা করেননি-সম্ভবত তাঁর বক্তৃতায় আরিস্টটল সেইসব উদাহরণ বিশদভাবে ব্যাখ্যা করতেন। অর্থাৎ, একথা বলা খুব অন্যায় হবে না যে 'কাব্যতত্ত্ব' একটি পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ নয়, গ্রন্থের খসড়া মাত্র।


'কাব্যতত্ত্ব' নিশ্চয়ই গ্রীকসমাজে সমাদৃত হয়েছিল, হয়ত বেশ প্রচলিত ছিল। কিন্তু সে ইতিহাস খুব স্পষ্ট নয়। আরিস্টটলের অন্যান্য বহু গ্রন্থের প্রচলনের যে অবিচ্ছিন্ন ধারা আছে, 'কাব্যতত্ত্বে'র ক্ষেত্রে সেই অবিচ্ছিন্নতা নেই। বহুদিন পর্যন্ত রচনাটি সুধী সমাজের দৃষ্টির বাইরে ছিল। রেনেসঁসের সময় রচনাটির নতুন করে আবির্ভাব ঘটে। প্রকৃতপক্ষে 'কাব্যতত্ত্বে'র মূল গ্রীক সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৫০৮ খ্রীস্টাব্দে, কিন্তু তার দশ বছর আগে প্রকাশিত হয়েছিল জর্জ ভাল্লোর ল্যাটিন অনুবাদ। অর্থাৎ 'কাব্যতত্ত্বে'র গ্রীকরূপ প্রথম প্রকাশিত হবার সৌভাগ্য পায়নি। পাণ্ডুলিপির ক্ষেত্রেও কালের সেই পরিহাস। যে-গ্রীক পুঁথিটি 'কাব্যতত্ত্বে'র আদর্শ-পুঁথিরূপে গৃহীত, তাকে বলা হয় পারী পাণ্ডুলিপি, দ্বাদশ শতাব্দীতে লেখা।






বিশেষ কথা

👉 এই অনুবাদে দুরকম বন্ধনীর ব্যবহার করা হয়েছে। [ ] বন্ধনা ব্যবহৃত হয়েছে অনুবাদের থেকে স্বতন্ত্রভাবে। সাধারণত বিভিন্ন অংশের মূল বক্তব্যের একটি শিরোনাম দিয়েছি এই বন্ধনীর মধ্যে। ( ) বন্ধনীর ব্যবহার করা হয়েছে অনুবাদের মধ্যে, কখনও মূল বক্তব্যকে বিস্তারিত করার জন্য, কখনও অতিরিক্ত কোনো তথ্য জানাবার জন্য।





২৬টি অধ্যায় সম্বলিত অ্যারিস্টটলের পোয়েটক্স বা কাব্যতত্ত্ব -এর মূল পাঠ দেওয়া হলো :




কাব্যতত্ত্ব (মূলপাঠ)

অ্যারিস্টটল





১. প্রথম অধ্যায়



কাব্য ও তার শ্রেণীবিভাগ, প্রত্যেকটি শ্রেণীর সম্ভাবনা, কীভাবে একটি কাহিনীর গ্রন্থন হলে কাব্য সুষ্ঠু হয়, (বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে কতটা পার্থক্য, পার্থক্যের প্রকৃতি কী এবং) কাব্যের বিভিন্ন অঙ্গ ও অঙ্গের প্রকৃতি ইত্যাদি বিষয় আমি আলোচনা করব। স্বাভাবিক নিয়ম অনুসারেই প্রথম বিষয়টি প্রথমে আলোচনা করা যাক।


মহাকাব্য, ট্রাজেডি, কমেডি এবং দিথুরাম্ব-কাব্য, বাঁশি বাজানো, কিথারা বাজানো - এই সব-কিছুই সাধারণভাবে বলা চলে অনুকরণ। এরা (অবশ্য) পরস্পরের থেকে তিনভাবে পৃথক, হয় তাদের মাধ্যমে, কিংবা বিষয়বস্তুতে কিংবা অনুকরণের রীতিতে।


[অনুকরণের মাধ্যম ]


যেমন কেউ কেউ নৈপুণ্যের সঙ্গে, কেউ বা নিতান্ত অভ্যাসের বশে অনুকরণ করে, কখনও রং ও রূপের সাহায্যে, কখনও কণ্ঠস্বরের সাহায্যে, সেইরকমই যে-সব শিল্পের কথা বলছি তারাও অনুকরণ করে কখনও শুধু ছন্দে, কখনও শুধু ভাষায়, কিংবা সুরে, আর কখনও এদের সমাহারে। শুধু সুর আর ছন্দ ব্যবহার করা হয় বাঁশিতে কিংবা কিথারা বাজানোতে এবং সমধর্মী অন্যান্য শিল্পে, যেমন পাইপ-বাজানোয়। আবার নাচের সময় নর্তকেরা সুর নয়, শুধু ছন্দের ওপর নির্ভরশীল, ছন্দোময় দেহভঙ্গির সাহায্যে তাঁরা অনুকরণ করেন চরিত্র, অভিজ্ঞতা এবং ঘটনা।


আর একটি শিল্প আছে, যেখানে অনুকরণ করা হয় কখনও পদ্যে, কখনও গদ্যে। কখনও বা এক ধরনের ছন্দে, কখনও বা একাধিক ছন্দে সেই শিল্প গঠিত হয়। এই শিল্পটির এখনও পর্যন্ত নামকরণ করা হয়নি — (বিচিত্র এই শিল্প) একদিকে সোফরন এবং জেনারখসের 'মাইমস’ এবং সোক্রাতিক কথোপকথন, অন্যদিকে নানা ছন্দোবদ্ধ রচনা, আইআমবিক, এলিজি ইত্যাদি।—এদের কোন সাধারণ নাম নেই। লোকে অবশ্য বিশেষ বিশেষ ছন্দের সঙ্গে কবি শব্দটি জুড়ে দিয়ে কাউকে বলে এলিজির কবি, কাউকে মহাকাব্যের কবি। অর্থাৎ অনুকরণের ক্ষমতা আছে ব'লে যে তাঁদের কবি আখ্যা দেয় তা নয়; তাঁরা ছন্দে পদ্য লেখেন ব'লে তাঁদের কবি বলা হয়। এমনকি চিকিৎসাবিদ্যা কিংবা প্রাকৃতিক বিজ্ঞান সম্বন্ধেও পদ্যে বই লিখলেই লোকে প্রথাবশত তার রচয়িতাকে কবি আখ্যা দেয়। অথচ হোমার (হোমের) আর এমপেদোক্লেস–এর (রচনার) মধ্যে ছন্দ ছাড়া আর কোন মিল নেই। এদের একজনকে কবি ও অন্যজনকে বিজ্ঞানী বলাই সংগত। সেইরকম, যদি কেউ নানাছন্দের সমাহারে অনুকরণ করেন, যেমন খাইরেমোন করেছিলেন তাঁর কেন্-তাউর নামক রাপ্সোদিতে, তাঁকেও কবি আখ্যা দেওয়া উচিত। (কবি অ-কবির) পার্থক্য নির্ণয়ে এইটুকু কথাই যথেষ্ট।


আমি অনুকরণের যে-সব মাধ্যমের কথা বলেছি, যেমন ছন্দ, সুর এবং মিতছন্', কোন কোন শিল্প তার সব-কটিই ব্যবহার করে, যেমন দিথুরাম্ব বা নোম কবিতা, ট্রাজেডি এবং কমেডি। এদের মধ্যে পার্থক্য হল এই যে, কোন কোন শিল্পে একসঙ্গেই সব-কটি পদ্ধতির ব্যবহার হয়, আর কোন কোন শিল্পে কখনও একটি পদ্ধতি, আবার কখনও অন্য একটি পদ্ধতির ব্যবহার। বিভিন্ন শিল্পের মধ্যে পার্থক্যের কারণই হল অনুকরণের পদ্ধতি।



২. দ্বিতীয় অধ্যায়




[ অনুকরণের বিষয় ]


অনুকরণের বিষয় হ'ল মানুষ ও তার ক্রিয়াকলাপ। ভালো, অথবা মন্দ — এই দু শ্রেণীতেই মানুষকে ভাগ করা চলে [যেহেতু সাধারণত সাধুতা ও নীচতার মানদণ্ডেই মানুষের নৈতিক চরিত্রের বিচার হয়।] অর্থাৎ হয় এই লোকেরা আমাদের চেয়ে ভালো, কিংবা আমাদের চেয়ে খারাপ, কিংবা আমাদেরই মতো। একথা কাব্যেও যেমন সত্য, চিত্রকলা সম্বন্ধেও তেমনই সত্য। পোলুনোতুস-এর মানুষগুলি বাস্তবের চেয়ে সুন্দর। পাউসোন এঁকেছিলেন বাস্তব মানুষের চেয়ে হীনতর ক'রে, আর দিওনুসিওসের চেষ্টা ছিল বাস্তবের সাদৃশ্য ফুটিয়ে তোলায়। সমস্ত শিল্পই এই পার্থক্য স্বীকার করে; বিভিন্ন বস্তুকে অনুকরণ করে বলেই তো তারা বিভিন্ন বা পৃথক। চিত্রকলায়, বাঁশি বা বীণা বাজানোতে-ও এই বৈচিত্র্য নিশ্চয়ই ধরা পড়ে, ঠিক সেই রকমই ধরা পড়ে গদ্যরচনায় কিংবা পদ্যে। বলা চলে যে হোমারের চরিত্রগুলি 'উন্নততর', ক্লেওফোনের চরিত্রগুলি 'বাস্তব'- আর হেগেমোনের, যিনি হলেন প্রথম প্যারডি-রচয়িতা, কিংবা দেলিআদ-গ্রন্থের প্রণেতা নিকোখারসের চরিত্রগুলি হল 'নিম্নতর'। দিথুরাম্ব বা নোম সংগীত সম্বন্ধেও এই কথা খাটে, এখানেও একজন লেখক নানাধরনের চরিত্রের সৃষ্টি করতে পারেন, যেমন তিমোথেউস আর ফিলোজ়েনোস — দুজনেই কুকলোপসের ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র এঁকেছেন। ঠিক এই ব্যাপারেই ট্রাজেডি আর কমেডির পার্থক্য : কমেডি বাস্তব মানুষের হীনতর ছবি সৃষ্টি করে, আর উন্নততর চরিত্র সৃষ্টি করে ট্রাজেডি।







৩. তৃতীয় অধ্যায়


[অনুকরণের পদ্ধতি ]



বিভিন্ন শিল্পের মধ্যে পার্থক্যের তৃতীয় কারণ হল এদের অনুকরণের পদ্ধতি। যেমন একই বিষয় একই পদ্ধতিতে রচনা করার সময় এটা খুবই সম্ভব যে কিছুটা বর্ণনার মধ্য দিয়ে বলা যায়, আর কিছুটা, যেমন হোমার করেছেন, লেখক যেন একটি চরিত্রের ভূমিকা নিয়েছেন, কিংবা সোজাসুজি নিজেই বলা যায়, কিংবা চরিত্রগুলিই যেন জীবন্ত, তারাই সব ঘটাচ্ছে এমনভাবেও বর্ণনা করা সম্ভব।


তাহলে এই তিনটিই কাব্যের বিভিন্ন শ্রেণীর অনুকরণের পার্থক্যের মূলে, মাধ্যম, বস্তু আর পদ্ধতি। এই সূত্র ধরে বলা চলে যে, একদিকে সোফোক্লেস, হোমার শ্রেণীর শিল্পী, কারণ দুজনেই উন্নততর মানুষ সৃষ্টি করেছেন, আবার আর একদিক থেকে তিনি আরিস্তোফানেস শ্রেণীর শিল্পী, কারণ দুজনেই এমন মানুষের ছবি আঁকছেন, যারা সক্রিয়, যারা কিছু করছে, কিছু ঘটাচ্ছে।


সেজন্যই কেউ কেউ তাঁদের কাব্যকে নাটক আখ্যা দিয়েছেন, কারণ এই সব কাব্য ক্রিয়াশীল মানুষের অনুকরণ করছে। আর সেজন্যেই দোরিয়ানরা ট্রাজেডি এবং কমেডি দুয়েরই উদ্ভাবনের (কৃতিত্ব) দাবি করে। কমেডির ওপরে অবশ্য গ্রীসে মেগারীয়দের দাবি আছে : তারা বলে যে তারাই এদের উদ্ভাবক, গ্রীসে তাদের গণতন্ত্রের সময়েই এর জন্ম—, সিসিলি থেকে কবি এপিকার মুস এসেছিলেন, তিনি থিওনিদেস এবং মাগনেসের-ও আগের লোক। ট্রাজেডির ওপরেও পেলোপনেশীয়দেরও দাবি আছে। তাদের স্বপক্ষে যুক্তি হ'ল দুটি শব্দ। তারা বলে, তাদের ভাষায় গ্রামের প্রান্তবর্তী অঞ্চলকে বলে 'কোমাই', আথেনীয়রা বলে 'দেমোই’। তাদের বক্তব্য হ'ল যে 'কোমাজেইন' অর্থাৎ 'আনন্দে মাতোয়ারা হওয়া' শব্দ থেকে কমেডির লেখকদের নাম হয়নি, হয়েছে 'কোমাই' শব্দ থেকে, কারণ তারা শহর থেকে বিতাড়িত হয়ে গ্রামের প্রান্তে ঘুরে বেড়াত। ওরা বলে, তাদের ভাষায় ক্রিয়া বা সংঘটনকে বলে দ্রান, আর আথেনীয়রা বলে প্রাত্তেইন । বিভিন্ন ধরনের অনুকরণের প্রকৃতি এবং সংখ্যা সম্বন্ধে যথেষ্ট বলা হল।






৪. চতুর্থ অধ্যায়


[কাব্যের উদ্ভব ও বিকাশ]



স্পষ্টতই কাব্যের উদ্ভবের মূলে আছে দুটি কারণ, আর এই দুটি কারণই মানুষের স্বভাবের মধ্যে নিহিত। শৈশব থেকেই অনুকরণ মানুষের স্বাভাবিক (বৃত্তি)। অন্য পশুর থেকে মানুষের সুবিধে হল এই যে, সে পৃথিবীর সব চেয়ে বেশি অনুকরণকারী জীব, অনুকরণের মধ্যেই তার শিক্ষার শুরু। আর অনুকরণ থেকে আনন্দ পাওয়া আমাদের স্বভাব; এই উক্তির সারবত্তা আমাদের অভিজ্ঞতার দ্বারা পরীক্ষিত। যদিও অনেক জিনিস দেখা বেদনাদায়ক, যেমন অতি নিকৃষ্ট জীবজন্তু কিংবা শবদেহ–কিন্তু শিল্পে যখন তার অতি নিখুঁত প্রতিরূপ দেখি তখন আমরা আনন্দ পাই। এর কারণ হল যে কোন কিছু শিক্ষামাত্রেই আনন্দদায়ক, আর তা শুধু দার্শনিকদের পক্ষেই সত্য নয়, সমস্ত মানুষের পক্ষেই সত্য, তা তাদের বিদ্যাবুদ্ধি যত সীমাবদ্ধই হোক-না কেন। একটি ছবি দেখে আনন্দ হয় কারণ মানুষ সেই ছবি দেখতে দেখতে শিক্ষালাভ করছে, সে সঞ্চয় করছে বস্তুর নানা তাৎপর্য, (সে ভাবছে) ঐ যে ওখানে লোকটিকে দেখছি তাকে জানি; যদি একজন (ব্যক্তি বা) বস্তুটিকে ইতিপূর্বে না দেখে থাকে তাহলে অবশ্য (মূলের) অনুকরণ দেখার আনন্দ সে পাবে না, কিন্তু সে যে আনন্দ পাবে তা হল ছবিটির গঠননৈপুণ্যে, বর্ণবিন্যাসে কিংবা ঐ ধরনের কোন কারণে।


কাজেই অনুকরণ মানুষের স্বভাবগত; ঠিক সেইরকম স্বভাবগত হল সুষমা ও ছন্দের বোধ। এইসব স্বাভাবিক প্রবৃত্তি ক্রমশই পরিণত হয়েছে এবং নানা পরীক্ষার মধ্য দিয়ে জন্ম নিয়েছে কাব্য। সুতরাং কবির স্বভাব অনুসারে কাব্যের শ্রেণী দু’রকমের। যাঁরা গভীর প্রকৃতির তাঁরা প্রকাশ করেন মহৎ বা উন্নত ক্রিয়া, এবং প্রকাশ করেন উন্নত বা মহৎ চরিত্র; আর যাঁরা লঘু প্রকৃতির তাঁরা প্রকাশ করেন লঘু চরিত্রের লঘু কার্যকলাপ। দ্বিতীয় শ্রেণীর কবিদের হাতে সৃষ্টি হয়েছে ব্যঙ্গাত্মক রচনা, আর প্রথম শ্রেণীর কবিদের হাতে সৃষ্টি হয়েছে প্রার্থনা এবং স্তুতি। হোমারের আগে এই ধরনের কোন (লঘু) রচনার অস্তিত্ব আমাদের জানা নেই, যদিও হোমারের আগে কবি ছিলেন অনেক। তবে হোমারের পর থেকে এই ধরনের লেখার নমুনা পাওয়া যায়, যেমন তাঁর মারগিতেস এবং ঐ ধরনের রচনা। এই ধরনের কবিতার উপযুক্ত ছন্দ ছিল আয়াম্বিক পদবন্ধ, এই সব লেখাকে বলা হত ‘ইআম্‌বেইওন’ কারণ এই পদবন্ধে লোকে অন্যদের বিরুদ্ধে ব্যঙ্গ রচনা করত।


প্রাচীন কবিদের মধ্যে কেউ লিখতেন আয়াম্বিকে, কেউবা ষট্‌পদীছন্দে (হেক্সামিটারে)। গুরুগম্ভীর রীতিতে হোমার শ্রেষ্ঠ, তাঁর রচনা শুধু উত্তমই নয়, নাটকীয়। আবার তিনিই কমেডির প্রধান ধারার প্রথম শিল্পী, তাঁর নাটক ব্যক্তিগত আক্রমণ বা ব্যঙ্গপ্রসূত নয়, হাস্যকরকে তিনি রচনার বিষয় করেছেন। তাঁর ইলিয়াদ ও ওদিসির সঙ্গে ট্রাজেডির যে সম্পর্ক, তাঁর মারগিতেস-এর সঙ্গে কমেডির সেই সম্পর্ক।


যখন ট্রাজেডি ও কমেডির সৃষ্টি হল, কবিরা তাঁদের স্বাভাবিক প্রবণতা বশত একেকটির প্রতি আকৃষ্ট হলেন। কেউ কেউ নিছক আক্রমণাত্মক রঙ্গব্যঙ্গ রচনার পরিবর্তে লিখলেন কমেডি, আর কেউ কেউ মহাকাব্যের পরিবর্তে ট্রাজেডি। এর কারণ হল ট্রাজেডি ও কমেডি উন্নততর শিল্প, এদের মূল্যও উচ্চতর। ট্রাজেডি এখন সর্বাঙ্গীণ ভাবে পরিণত হয়েছে কিনা বা ট্রাজেডিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ শিল্প হিসেবে, বা দর্শকের (রুচির) সঙ্গে তাকে সম্পর্কিত করে বিচার করা উচিত কিনা, তা অবশ্য স্বতন্ত্র প্রশ্ন। মূল কথাটা হল ট্রাজেডি এবং সেই সঙ্গে কমেডিরও সূচনা হয়েছিল পরিকল্পনাহীন ভাবেই। একটির জন্ম হয়েছিল দিথুরাম্‌ব-গীতির নান্দীমুখ থেকে, অন্যটির ফাল্লিক-গীতির নান্দীমুখ থেকে–ফাল্লিক-গীতি এখনও নানা শহরেই আনুষ্ঠানিকভাবে গাওয়া হয়। ট্রাজেডি ধীরে ধীরে বিকশিত হয়েছে, লোকে যখনই তার কোন একটি বিশিষ্ট উপাদান লক্ষ্য করেছে, তাকে উন্নততর করার চেষ্টা করেছে। ট্রাজেডির ক্রমবিকাশে তার নানা পরিবর্তন ঘটেছে, তারপর যখন তার প্রকৃত স্বভাবটি বোঝা গেছে তখনই পরিবর্তনের গতি স্তব্ধ হয়েছে।


ইস্কিলাস (আয়সখুলস)-ই প্রথম ব্যক্তি যিনি অভিনেতার সংখ্যা এক থেকে দুই-তে বাড়ালেন। তাঁর হাতেই কোরাসের স্থান সংকুচিত হল। সংলাপ পেল (অধিকতর) প্রাধান্য। (তারপরে) তৃতীয় অভিনেতা আর চিত্রিত দৃশ্যের সূচনা করলেন সোফোক্লেস। তারপর প্রসারিত হল ট্রাজেডির আয়তন। ট্রাজেডির পূর্বসূত্র ছিল ‘সাতুর’ নাটকে। সেই ছোট কাহিনী, লঘু রচনারীতির থেকে বেরিয়ে এসে ট্রাজেডি অর্জন করল বিশেষ মহিমা ও ভাবগাম্ভীর্য। ত্রোখাইক (ট্রকী) ত্রিপদীর পরিবর্তে ব্যবহৃত হল আয়াম্বিক। তোখাইক ত্রিপদীর ব্যবহারের কারণ ছিল এই যে সাতুর জাতীয় রচনায় এবং নৃত্যের সঙ্গে সঙ্গতি রাখার পক্ষে তা খুবই উপযোগী। কিন্তু যখন সংলাপের আবির্ভাব হল নাটকে, তখন প্রকৃতি স্বয়ং তার উপযোগী ছন্দ খুঁজে নিলেন। বাস্তবিক সমস্ত ছন্দের মধ্যে সংলাপে ব্যবহারযোগ্যতা সবচেয়ে বেশি আয়াম্বিকের। এর প্রমাণ হল আমরা যখন কথা বলি তখন তার মধ্যে আয়াম্বিকের চরণের ব্যবহার প্রায়ই হয়, আর যখন আমরা স্বাভাবিক কথোপকথন রীতির চেয়ে উঁচু রীতিতে কথা বলি তখন কখনও কখনও এসে পড়ে ষট্‌পদীর চরণ। তারপরে এল দৃশ্য ও ঘটনার বহুলতা। এছাড়া আরো পরিবর্তন হয়েছে (তবে) তাদের ইতিহাস আলোচিত হয়েছে ব'লে ধরে নেওয়া যাক, কারণ তাদের পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা অতি দীর্ঘ কাজ।



৫. পঞ্চম অধ্যায়


[কমেডির উদ্ভব]


কমেডি, আগেই বলেছি, নিম্নতর নরনারীর জীবনের অনুকরণ। নিম্নতর বলতে অবশ্য হীন বা খারাপ বোঝাচ্ছে না। কিন্তু হাস্যকর হল নিম্ন বা অসুন্দরের শ্রেণীভুক্ত। এ হল একধরনের ত্রুটি বা অসুন্দরতা, তবে তা আমাদের বেদনা দেয় না, বা আহত করে না। একটি স্পষ্ট উদাহরণ হল মজাদার মুখোস, (নিঃসন্দেহে) অসুন্দর এবং বিকৃত, কিন্তু বেদনাদায়ক নয়।


ট্রাজেডির পরিবর্তনের ইতিহাস এবং যাঁরা সেই পরিবর্তন এনেছেন তাঁদের কথা, আমাদের অজানা নয়। কিন্তু কমেডিকে লোকে খুব গুরুত্ব দেয়নি, সেজন্য তার বিবর্তনের ইতিহাস খুব স্পষ্ট নয়। খুব সম্প্রতি কমেডি রাষ্ট্রীয় খরচে অভিনীত হচ্ছে, ইতিপূর্বে তা শখের অভিনেতারা অভিনয় করতেন। যাঁরা কমেডি রচয়িতা রূপে পরিচিত তাঁদের আবির্ভাবের বহু আগে থেকেই কমেডি শিল্প হিসেবে একটি নির্দিষ্ট রূপ গ্রহণ করেছিল। (অবশ্য) কে প্রথমে মুখোস, নান্দীমুখ, বা বহু অভিনেতার সূচনা করেছিলেন তা আমাদের অজ্ঞাত। কমেডির কাহিনী নির্মাণের সূচনা হয়েছিল সিসিলিতে, এপিখারমস ও ফোরমিসের হাতে; এথেন্সে সর্বপ্রথম ক্রাতেস আক্রমণাত্মক লঘু রচনা পরিত্যাগ ক’রে শুরু করেছিলেন হাস্যরসাত্মক কাহিনী ও কথোপকথন রচনা।

[মহাকাব্য ও ট্রাজেডি]



মহাকাব্যের সঙ্গে ট্রাজেডির মিল এইখানে যে মহাকাব্যও পদ্যে রচিত, একটি গম্ভীর ও গভীর বিষয়ের অনুকরণ। আর তাদের পার্থক্য হল এইখানে যে মহাকাব্য শুধু একধরনের ছন্দে লেখা, তার রীতি বর্ণনাত্মক। দৈর্ঘ্যেও পার্থক্য রয়েছে : ট্রাজেডির কালসীমা সূর্যের একটি আবর্তনের বা ঐ পরিমাণ সময়ের মধ্যে আবদ্ধ আর মহাকাব্যের কালসীমা অনির্দিষ্ট। অবশ্য গোড়ায়, ট্রাজেডি ও মহাকাব্যে এই পার্থক্য ছিল না। মহাকাব্যে ও ট্রাজেডির অন্যান্য অঙ্গের মধ্যে কোথাও মিল আছে, কোথাও বা তা বিশেষভাবেই তাদের বৈশিষ্ট্য। কাজেকাজেই যিনি ট্রাজেডির ভালোমন্দ বিচার করতে পারেন তিনি মহাকাব্যের ভালোমন্দও বিচার করতে পারবেন। মহাকাব্যের সব উপাদানই ট্রাজেডিতে আছে, কিন্তু ট্রাজেডির সব উপাদান মহাকাব্যে নেই।



৬. ষষ্ঠ অধ্যায়



[ষড়ঙ্গ শিল্প ট্রাজেডি]



ষট্‌পদী ছন্দে লেখা কাব্য (অর্থাৎ মহাকাব্য) এবং কমেডি সম্বন্ধে পরে আলোচনা করব। এতক্ষণ আমরা যা বললাম তার থেকে ট্রাজেডির সংজ্ঞা নির্ণয় করা যাক। তাহলে, ট্রাজেডি হল একটি গম্ভীর, সম্পূর্ণ ও বিশেষ আয়তন বিশিষ্ট ক্রিয়ার অনুকরণ, ভাষার সৌন্দর্যে তার প্রতিটি অঙ্গ স্বতন্ত্র, এই ক্রিয়াটির প্রকাশরীতি বর্ণনাত্মক নয়, নাটকীয়; আর এই ক্রিয়া ভীতি ও করুণার উদ্রেক করে এবং তার মধ্য দিয়ে অনুরূপ অনুভূতিগুলির পরিশুদ্ধি ঘটায়। ‘ভাষার সৌন্দর্য’ বলতে বোঝাচ্ছি সেই ভাষা, যার আছে ছন্দোময়তা, সৌষম্য আর সংগীতধর্ম। ‘প্রতিটি অঙ্গ স্বতন্ত্র’ কথাটির দ্বারা বলতে চাই যে, কোন অংশে ব্যবহৃত হবে মিতছন্দ, কোন অংশে গান। যেহেতু (ট্রাজেডিতে) কবিরা অভিনয়ের মধ্য দিয়ে একটি বিষয়কে উপস্থিত করেন, সেইজন্য ট্রাজেডির একটি আবশ্যিক উপাদান হল দৃশ্যসজ্জা। তারপর ওঠে সংগীত এবং রচনারীতির প্রসঙ্গ, কারণ এগুলি হল অনুকরণের মাধ্যম। রচনারীতি বলতে বোঝাচ্ছি মিতছন্দে শব্দসজ্জা। আর সংগীতের আবেদন সম্বন্ধে কিছু বলাই বাহুল্য।


ট্রাজেডিতে ক্রিয়া অভিনীত হয়, আর অভিনেতাদের চরিত্র এবং অভিপ্রায়ের বিশিষ্টতা অবশ্যই থাকা প্রয়োজন, কারণ তার দ্বারাই একটি ক্রিয়ার গুণ নির্ণীত হয়। কাজেই চরিত্র এবং অভিপ্রায় হল ক্রিয়ার দুটি স্বাভাবিক কারণ, তার ওপরেই নির্ভর করে মানুষের সাফল্য কিংবা ব্যর্থতা। এই যে ক্রিয়ার কথা বলছি তা একটি কাহিনীর মধ্য দিয়ে পরিস্ফুট হয়। কাহিনী বলতে বোঝাচ্ছি ঘটনার সজ্জা (বা সমন্বয়), অন্যপক্ষে চরিত্র হল সেই ব্যাপার যার দ্বারা কাহিনীতে অংশগ্রহণকারীদের ওপর বিশেষ বিশেষ গুণ বা ধর্ম আরোপ করা যায়, আর তারা কোন কিছু প্রমাণ করার জন্য যা কিছু বলে, বা কোন বিষয়ে যে মতামত দেয়, সেই ব্যাপারটি হল ‘অভিপ্রায়'। তাহলে ট্রাজেডি গঠিত হয় ছটি উপাদানে : কাহিনী, চরিত্র, রচনারীতি, অভিপ্রায়, দৃশ্য আর সংগীত। এর দুটি হল অনুকরণের মাধ্যম, একটি হল অনুকরণের রীতি, আর (বাকি) তিনটি অনুকরণের বিষয়। এ ছাড়া আর কোন উপাদান নেই। বলা চলে যে বেশির ভাগ কবিই এই উপাদানগুলি ব্যবহার করেন, প্রত্যেক নাটকেই মোটামুটি দেখা যায় এই উপাদানগুলির ব‍্যবহার—দৃশ্য, চরিত্র, কাহিনী, ভাষারীতি, সংগীত আর অভিপ্রায়।


ষড়ঙ্গের আপেক্ষিক গুরুত্ব



এইসব উপাদানের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ঘটনার সজ্জা কারণ ট্রাজেডি মানুষের অনুকরণ নয়, ট্রাজেডি একটি ক্রিয়ার অনুকরণ, জীবনের সুখদুঃখের অনুকরণ—আর এই সব কিছুই ক্রিয়ার অন্তর্গত; আর জীবনের লক্ষ্য তো বিশেষ ধরনের কার্যকলাপ বা ক্রিয়া, চরিত্রের বিশেষ ধর্ম (অর্জন) নয়।


মানুষের চরিত্র যেমন, মানুষও তেমন; কিন্তু মানুষের ক্রিয়ার ফলেই সে সুখী অথবা অসুখী। অভিনেতারা, সেইজন্য, চরিত্রায়ণের জন্য অভিনয় করেন না; ক্রিয়াটিকে পরিস্ফুট করার জন্যই চরিত্র ব্যবহার করেন। সুতরাং ট্রাজেডির লক্ষ্য হল শেষ পর্যন্ত ক্রিয়া, আর সব জিনিসের শেষই হল চরম গুরুত্বের। তাছাড়া ক্রিয়া বাদ দিলে ট্রাজেডি অসম্ভব, কিন্তু চরিত্র বাদ দিয়ে ট্রাজেডি সম্ভব। বাস্তবিক, আমাদের আধুনিক কবিদের ট্রাজেডিগুলি তাই। মোটামুটি বলা যায় যে অনেক কবি আছেন যাঁদের মধ্যে পার্থক্য প্রায় জেউখিস আর পোলুগ্‌নোতস-এর পার্থক্যের মতো। পোলুগ্‌নোতস চরিত্র সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলেন কিন্তু জেউখিসের ছবিতে তা দেখি না। তাছাড়া, একজন হয়তো রীতি ও অভিপ্রায়ের দিক থেকে অপূর্ব নৈপুণ্যের সঙ্গে বক্তৃতার মালা গেঁথে চরিত্র ফুটিয়ে তুলেও সত্যিকার ট্রাজেডির প্রতিবেদন সৃষ্টিতে ব্যর্থ হতে পারেন। কিন্তু একজন হয়তো এইসব ব্যাপারে অনেক দুর্বল হয়েও, শুধু-কাহিনীর জোরেই ট্রাজেডি রচনায় অনেক বেশি সফল হতে পারেন। তাছাড়া ট্রাজেডির সবচেয়ে শক্তিশালী এবং আকর্ষণীয় দুটি উপাদান—বিপ্রতীপতা ও উদ্‌ঘাটন। এই ব্যাপারে প্রমাণ স্বরূপ বলা চলে যে তরুণ লেখকরা কাহিনী নির্মাণের চেয়ে প্রথমে সাফল্যের পরিচয় দেন রীতিতে এবং চরিত্রে। এবং প্রায় সমস্ত প্রাচীন কবিদের পক্ষেও একথা সত্য। কাজেই, কাহিনীই ট্রাজেডিতে প্রধান, কাহিনীই ট্রাজেডির আত্মা, চরিত্রের স্থান তার পরে। চিত্রকলা প্রসঙ্গেও এই কথা খাটে। সুন্দর রঙে সামঞ্জস্যহীন ভাবে আঁকা ছবির চেয়ে সহজ কালো-সাদায় আঁকা সামঞ্জস্যময় একটি ছবি অনেক বেশি তৃপ্তিকর। ট্রাজেডি যেহেতু একটি ক্রিয়ার অনুকরণ, সেই ক্রিয়াকেই পরিস্ফুট করার জন্য ট্রাজেডি নরনারীর চরিত্র অনুকরণ করে।


অভিপ্রায়ের স্থান তার পর। অভিপ্রায় হল সম্ভাব্য এবং উপযুক্ত ভাব প্রকাশের সামর্থ্য। ট্রাজেডির সংলাপে এর প্রকাশ : এটি মূলতঃ রাষ্ট্রতত্ত্ব ও ভাষণ-কলাশাস্ত্রের অন্তর্গত। প্রাচীন কবিদের সংলাপগুলি হত রাষ্ট্রনেতাদের মতো, আধুনিক কবিদের সংলাপগুলি হয় ভাষণকলাবিদদের মতো। চরিত্রের মধ্য দিয়ে পরিস্ফুট হয় নাটকের কুশীলবদের উদ্দেশ্য অর্থাৎ যখন কর্তব্য-অকর্তব্যের সমস্যা ওঠে তখন তারা কী-করবে ঠিক করে। কাজেই যে-সব বক্তৃতা বা সংলাপে সেই সমস্যা স্পষ্ট নয়, সেখানে চরিত্র নেই। অন্যপক্ষে যেখানে কিছু প্রতিপন্ন বা অপ্রমাণিত করা হচ্ছে কিংবা কোন বিষয়ে সাধারণ অভিমত প্রকাশ করা হচ্ছে সেখানেই অভিপ্রায়ের উপস্থিতি।


ট্রাজেডির চতুর্থ উপাদান হল রীতি (বা ভাষা)। রীতি বলতে, আগেই বলেছি, বোঝাচ্ছে শব্দের মাধ্যমে অর্থ প্রকাশ। গদ্য এবং পদ্য উভয়ক্ষেত্রেই এর কাজ একধরনের। অন্যান্য উপাদানের মধ্যে ট্রাজেডির সবচেয়ে প্রীতিকর উপাদান হল সংগীত। দৃশ্য, যদিও খুব আকর্ষণীয়, অন্যান্য উপাদানের তুলনায় সবচেয়ে কম শিল্পগুণান্বিত, আর কাব্যশিল্পের সঙ্গে এর যোগ যৎসামান্য। অভিনয় ও প্রযোজনা বাদ দিয়েও ট্রাজিক অনুভূতির (প্রতিবেদনের) সৃষ্টি খুবই সম্ভব, তাছাড়া দৃশ্যসজ্জার ব্যাপারটা কবির নয়, অলঙ্করণকারীর।




৭. সপ্তম অধ্যায়



[ কাহিনীর গঠন]



এই সব উপাদানগুলির পরিচয় দেবার পর, আমাদের আলোচনার বিষয় হল কাহিনীর গঠন কেমন হওয়া উচিত, কারণ কাহিনীই ট্রাজেডির প্রথম এবং প্রধান উপাদান। আগেই বলেছি ট্রাজেডি একটি ক্রিয়ার অনুকরণ, সেই ক্রিয়াটি পরিপূর্ণ এবং সমগ্র। আর তার একটি বিশেষ আয়তন আছে, কারণ অনেক জিনিস সমগ্র হয়েও আয়তনহীন হতে পারে। সমগ্র হল সেই জিনিস যার আদি আছে, মধ্য আছে, আর আছে শেষ। যা কোন কিছুর পরবর্তী নয়, কিন্তু স্বাভাবিক ভাবেই যার পরে কিছু আছে তা হল আদি। আবার যা অনিবার্যভাবে কোন কিছুর পরবর্তী, কিন্তু তারপরে আর কিছু নেই, তা'হল শেষ। আর মধ্য হল যা কোন কিছুর পরবর্তী এবং তারপরেও কিছু আছে। সুতরাং সুনির্মিত কাহিনীর আদি ও অবসান এলোমেলো ভাবে হবে না। যে নিয়মের কথা বলা হল সেই নিয়মে গঠিত হওয়া উচিত।


সংসারে যা কিছু সুন্দর, তা সে কোন জীবন্ত পশু হোক কিংবা কোন প্রত্যঙ্গময় বস্তু হোক, তাদের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ শুধু নির্দিষ্ট শৃঙ্খলায় সজ্জিত হওয়াই যথেষ্ট নয়, তাদের প্রত্যেকের একটি বিশেষ আয়তন থাকা দরকার। কারণ আয়তন আর শৃঙ্খলার (সুষমার) ওপরেই সৌন্দর্য নির্ভরশীল। এর থেকে বলা চলে যে অতিক্ষুদ্র কিংবা অতিকায় জন্তু সুন্দর নয়। কারণ অতি ক্ষুদ্র হওয়ার ফলে, আমাদের দৃষ্টি বিভ্রান্তি ঘটে, আবার অতিশয় বৃহৎ হওয়ার ফলে, মনে করা যাক হাজার মাইল লম্বা একটি জন্তু, তাকে একেবারে সম্পূর্ণভাবে দেখতে পাই না, সমগ্রতার আবেদন আমরা হারাই। কাজেই জীবজন্তু এবং অন্যান্য জৈবগঠনের থাকা দরকার একটি বিশেষ আয়তন, সহজেই যেন তা আমাদের দৃষ্টিপথের আয়ত্ত হয়। কাহিনী সম্পর্কেও সেই কথা : তার দৈর্ঘ্য থাকবে অবশ্যই, কিন্তু তা যেন স্মৃতির আয়ত্তাধীনে হয় (যেন সহজেই মনে রাখা যায়)।


প্রতিযোগিতায় বা দর্শকদের সামনে প্রযোজনার প্রয়োজনের কথা মনে রেখে কাহিনীর দৈর্ঘ্য নিয়মিত করার ব্যাপার অবশ্য এই আলোচনার বিষয় নয়। যদি একশো ট্রাজেডি প্রযোজনা করতে হত, তাহলে আগেকার দিনে যেমন করা হত শুনেছি, প্রযোজনাগুলি জলঘড়ির সময় অনুসারে নিয়মিত হত। কিন্তু একটি ক্রিয়ার স্বাভাবিক সীমা হল, আয়তনের দিক থেকে যত দীর্ঘ হয় ততই ভালো, শুধু মনে রাখতে হবে, সমগ্রের এক্যবোধ যেন উপলব্ধি করা যায়। এর সহজ এবং সাধারণ নিয়ম হল : যে দৈর্ঘ্যের মধ্যে সম্ভাব্য এবং প্রয়োজনীয় ঘটনা-পরম্পরার মধ্য দিয়ে দুঃখ থেকে সুখ অথবা সুখ থেকে দুঃখের পরিবর্তন দেখানো যায়, সেই দৈর্ঘ্যই আয়তনের যথার্থ সীমা।




৮. অষ্টম অধ্যায়


[কাহিনীর ঐক্য]



অনেকে ভাবেন যে একজনের কথা বলা হয় ব'লেই বুঝি কাহিনীতে ঐক্য আসে। কিন্তু তা আদৌ নয়। একজন ব্যক্তির জীবনে অনেক ঘটনা, প্রকৃতপক্ষে অসংখ্য ঘটনা ঘটে, যাদের মধ্যে কোন ঐক্যই নেই। সেইরকম এক ব্যক্তি নানা ক্রিয়া সম্পন্ন করে, কিন্তু সব ক্রিয়া মিলে একটি ক্রিয়া গড়ে ওঠে না। সেজন্যই যে সব কবি হেরাক্লেইদা বা থেসেইদা বা ঐ জাতীয় কাব্য লিখছেন তাঁরা ভুল করছেন। তাঁরা ভেবেছেন যেহেতু হেরাক্লেস একটি ব্যক্তি, সেজন্যই কাহিনীর মধ্যে ঐক্য সঞ্চারিত হচ্ছে। কিন্তু হোমার, যিনি অন্য ব্যাপারেও সর্বশ্রেষ্ঠ, এক্ষেত্রেও স্বাভাবিক অনুভূতি থেকে বা তাঁর শিল্পের অভিজ্ঞতা থেকে এই সত্যটি ভালোভাবে জানতেন। তাই ওদিসি লেখার সময় ওদুস্‌সেউস-এর জীবনে যত কিছু ঘটনা ঘটেছিল তার সব কিছুর বর্ণনা করলেন না, যেমন পারনাস্‌সুস-এ আহত হওয়া, কিংবা সমবেত সৈন্যের সামনে মূর্ছিত হবার ভান করা ইত্যাদি ঘটনা; কারণ এই ঘটনাগুলি কোন সম্ভাবনার বা অপরিহার্যতার সূত্রে জড়িত নয়। তিনি একটি ক্রিয়াকে অবলম্বন করে, যাকে আমরা বলি 'ওদিসি' (ভ্রমণ/যাত্রা), তার কাব্য গড়ে তুললেন। ইলিয়াদ সম্পর্কেও তা সত্য। অন্যান্য অনুকরণাত্মক শিল্পেও যেমন প্রত্যেকটি অনুকরণের একটি মাত্র বিষয়, কাহিনীর ক্ষেত্রেও তাই, কারণ এটি একটি ক্রিয়ার অনুকরণ—সেই ক্রিয়াটি হবে একক এবং সমগ্র, তার অন্যান্য অংশগুলি এমনভাবে সাজানো হবে যে, তাদের একটিকেও যদি পরিবর্তিত করা হয়, বা পরিত্যাগ করা হয়, তাহলে সমস্ত কাহিনীটিই হবে বিচ্যুত ও বিধ্বস্ত, কারণ যদি কোন ঘটনার উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি কাহিনীর মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি না করে, তাহলে বুঝতে হবে তা কাহিনীর সমগ্রতার যথার্থ অঙ্গ নয়।






৯. নবম অধ্যায়



[ইতিহাস ও কাব্য]



এতক্ষণ যে আলোচনা হল তার থেকে স্পষ্ট হয়েছে যে যা সত্যি সত্যি ঘটেছে তা বর্ণনা করাই কবির কাজ নয়, বরং যা ঘটা সম্ভব বা অনিবার্য তার বর্ণনা করাই কবির কাজ। কবি আর ঐতিহাসিকের পার্থক্য এই নয় যে একজন পদ্যে লেখেন আর একজন লেখেন গদ্যে—হেরোদোতস-এর লেখা পদ্যে পরিবর্তিত করা সম্ভব—কিন্তু গদ্যেই লেখা হোক আর পদ্যেই লেখা হোক, তাঁর রচনা ইতিহাস। আসল পার্থক্য হল যে একজন বলেন যা ঘটে গেছে তার কথা, আর একজন বলেন তার কথা যা ঘটা সম্ভব। এইজন্যই কাব্য ইতিহাসের চেয়ে বেশি দার্শনিক এবং বেশি গভীর, কারণ ইতিহাস বলে নির্দিষ্ট তথ্যের কথা, আর কাব্য বলে সার্বজনীন সত্য।


সার্বজনীন সত্য বলতে আমি বোঝাচ্ছি এমন কিছু, একধরনের লোক যা করতে বা যা বলতে বাধ্য। সেটাই হল কাব্যের লক্ষ্য, যদিও কাব্য চরিত্রগুলির বিশেষ বিশেষ নাম দেয়। আর বিশেষ তথ্য (বা নির্দিষ্ট তথ্য) হল যেমন আলকিবিয়াদেস কী করেছিল বা তার কী হয়েছিল। কমেডিতে এ ব্যাপারটা খুব স্পষ্ট, কমেডি রচয়িতারা সম্ভাব্য ঘটনা দিয়ে তাঁদের কাহিনী নির্মাণ করেন, তারপর যে নাম ইচ্ছে সেই নাম বসিয়ে দেন, আগেকার দিনের বিদ্রূপকাহিনী রচয়িতাদের মতো ব্যক্তিবিশেষের কথা লেখেন না।


অন্যপক্ষে ট্রাজেডিতে থাকে প্রকৃত নাম। কারণ হল, যা সম্ভাব্য তাই বিশ্বাসযোগ্য। যা ঘটে নি তার সম্ভাব্যতায় আমরা বিশ্বাস নাও করতে পারি, কিন্তু যা ঘটেছে তা অবশ্যই বিশ্বাসযোগ্য; কারণ সম্ভব না হলে ঘটল কী করে। যাই হোক, অনেক ট্রাজেডি আছে যেখানে একটি কি দুটি প্রসিদ্ধ নাম থাকে, বাদবাকি সব কাল্পনিক। অনেক সময় আবার কোন কোন ট্রাজেডিতে সব নামই কাল্পনিক ব্যক্তির, যেমন আগাথোন-এর আনথেউস নামক ট্রাজেডিতে। এখানে সব চরিত্রই কাল্পনিক, কিন্তু নাটকটি কম উপভোগ্য নয়। কাজেই যদিও প্রচলিত গল্পই বেশির ভাগ ট্রাজেডির বিষয়বস্তু, তবু প্রচলিত গল্প যে অবলম্বন করতেই হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। বাস্তবিকই, তা করার মানেও হয় না, কারণ পরিচিত গল্প সকলেরই পরিচিত নয়—কিছু লোকের পরিচিত—কিন্তু সকলেরই উপভোগ্য।


এই আলোচনা থেকে বোঝা যাচ্ছে পদ্যলেখার জন্য নয়, কাহিনীগঠনের জন্যই লোকে কবি আখ্যা পায়, কারণ কবির পরিচয় অনুকরণ ক্ষমতায় ক্রিয়ার অনুকরণে। যদি ধরা যায় যে যা ঘটে গেছে এমন ঘটনারই তিনি অনুকরণ করেছেন, তাহলেও তিনি কবি। কারণ একটি ঐতিহাসিক ঘটনার ঘটনা হিসেবে সম্ভাব্যতা ও অনিবার্যতা সম্বন্ধে সন্দেহ করার কোন কারণ নেই। আর সেজন্যেই তিনি 'কবি'।


[ বিভিন্ন শ্রেণীর কাহিনী]



সমস্ত রকম সরল কাহিনী ও ক্রিয়ার মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট হল উপকাহিনীতে ভরা কাহিনী। উপকাহিনীতে ভরা কাহিনী বলতে বোঝাচ্ছি যেখানে উপকাহিনীগুলির মধ্যে কোন সম্ভাব্য ও অনিবার্য যোগসূত্র নেই। এরকম কাহিনী নিকৃষ্ট কবিরা রচনা করেন তাঁদের প্রতিভার দৈন্যের জন্যে, আর ভালো কবিরাও করেন অভিনেতাদের তুষ্ট করার জন্যে। প্রতিযোগিতার জন্য নাটকগুলি লেখা হয়, ফলে ভালো কবিরাও তাঁদের কাহিনীগুলিকে বহুদূর প্রলম্বিত করেন, তার ফলে ঘটনাক্রমের মধ্যে বিকৃতি ঘটে। অথচ, ট্রাজেডি তো শুধু একটা সমগ্র ক্রিয়ার অনুকরণ মাত্র নয়, তা হল ভয় ও করুণা জাগিয়ে তোলার ঘটনা। তা সম্ভব হয়, যখন ঘটনাশৃঙ্খলের মধ্যে থাকে একটা অপূর্বতা। যান্ত্রিকভাবে বা দৈবাৎ না ঘটে, (যুক্তিসঙ্গতভাবে) ঘটলে সৃষ্টি হয় অপরূপত্বের। এমনকি দৈবাৎ যে সব ঘটনা ঘটে তাদেরও অপরূপত্ব অনেক বেশি হয়, যদি তাদের মধ্যে থাকে একটা আপাত পরিকল্পনা। যেমন যে লোকটি মিতুস-এর মৃত্যুর জন্য দায়ী, যখন একটি উৎসবে তার ওপরে আর্গোসের মিতুসের মূর্তিটি ভেঙে পড়ল এবং লোকটির মৃত্যু হল এই ঘটনাকে নিতান্তই অর্থহীন আকস্মিক ঘটনা বলা যায় না। এই ধরনের কাহিনী অবশ্যই অন্য কাহিনীর চেয়ে উৎকৃষ্ট।




১০. দশম অধ্যায়



[সরল ও জটিল কাহিনী]



কোন কোন কাহিনী সরল, কোন কোন কাহিনী জটিল। কাহিনী যে ক্রিয়ার অনুকরণ করে সে ক্রিয়াও তাই কোনটি সরল, কোনটি জটিল। 'সরল ক্রিয়া' অর্থে আমি বোঝাচ্ছি, আমাদের পূর্বে উল্লেখিত সংজ্ঞা অনুসারে যে ক্রিয়া একক এবং অবিচ্ছিন্ন, যার মধ্যে অবস্থার পরিবর্তন ঘটে 'বিপ্রতীপতা' এবং 'উদঘাটন' ছাড়াই আর জটিল ক্রিয়া হল যেখানে অবস্থার পরিবর্তন এবং বিপ্রতীপতা বা উদঘাটন, কিংবা উভয়েই উপস্থিত। এ সমস্ত অবশ্য কাহিনীর গঠন থেকেই স্বাভাবিক ভাবে উদ্ভূত হবে, যাতে করে পরের ঘটনাকে অনিবার্য ফলশ্রুতি। কারণ একটি ঘটনা আর-একটি ঘটনারই অনিবার্য ফল, আর-একটি ঘটনা আর-একটি ঘটনার পরবর্তী—এই দুটো ব্যাপারের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য।




চলবে...।





















[গ্রন্থঋণ : কাব্যতত্ত্ব - শিশিরকুমার দাশ ]





আমাদের টেলিগ্রাম ও ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হোন








-------------------------------------------------------------
File Name : অ্যারিস্টটলের কাব্যতত্ত্ব এর মূলপাঠ

File Format : পিডিএফ

File Language : বাংলা

File Location : গুগল ড্রাইভ

Download Link :  অ্যারিস্টটলের কাব্যতত্ত্ব এর মূলপাঠ
-------------------------------------------------------------
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url