সাহিত্যের পরিভাষা যা আপনার জানা উচিত
সাহিত্যের পরিভাষা
অণু-গল্প
- ছোটোগল্পের সংক্ষিপ্ততম রূপ, একেবারে একটি মুহূর্তের গল্প। একটি পোস্টকার্ডে ধরে যায় এমন তার আয়তন। একারণে একে Postcard Story-ও বলা হয়। গল্পের শুরু ও শেষ বেশ দ্রুত। একালের ভীষণ ব্যস্ততাময় জীবনের সঙ্গে এই গল্প মানানসই। বাংলা সাহিত্যে বনফুল অণুগল্পের দক্ষ রূপকার।
অতিনাটকীয়তা
- Melodrama শব্দটিকে বাংলায় ‘অতিনাটকীয়তা’ বলা হয়। গ্রিক ভাষায় ‘Melos’-এর অর্থ গান। তাই গীতধর্মী সকল নাটককেই ‘মেলোড্রামা’ অলা হত। পরবর্তীকালে নাটকে বা চলচ্চিত্রে অতিরঞ্জন, করুণরসের বাড়াবাড়ি ইত্যাদি থাকলে তাকে ‘অতিনাটকীয়’ আখ্যা দেওয়া হয়। শরৎচন্দ্রের রচনায় মাঝে মাঝে মেলোড্রামা লক্ষ করা যায়।
অ্যান্টি-নোভেল
- বাংলায় এর বাংলা হতে পারে প্রতি-উপন্যাস। উপন্যাসের যেসব গুণ সাধারণত থাকে, এই ধরনের রচনায় তা বর্জিত হয়। যেমন চরিত্রের পরিণতি বিশ্লেষণ, কালানুক্রমিক কাহিনি-বিন্যাস বর্জন করা হয়।
একোক্তি
- নাটকে কোনো চরিত্রের নিঃসঙ্গ অবস্থায় উচ্চারিত একক উক্তি যা নিজেকে উদ্দেশ করা বলা হয়। মনস্তাত্ত্বিক জটিলতার উন্মোচনে এই একোক্তি ব্যবহার করা হয়।
ক্যাথারসিস
- অ্যারিস্টটলের ‘পোয়েটিক্স’ গ্রন্থে এই শব্দটির ব্যবহার রয়েছে। নাটকের ঘটনাবলী দর্শকচিত্তে যে ভাবমোক্ষণ ঘটায়, তাকেই অ্যারিস্টটল Cathersis বলেছেন। দুঃখ-বেদনার কাহিনি কেন এবং কিভাবে দর্শকচিত্তে আনন্দ দেয় সেই রহস্যের সুত্র হিসেবে ‘ক্যাথারসিস’ শব্দটি তিনি ব্যবহার করেছিলেন।
পেরিপেতি
- ট্রাজেডির সঙ্গে peripeteia বা peripety শব্দটি জড়িত। নাটকে নায়কের হঠাৎ ভাগ্য-বিপর্যয় ও পতন বোঝাতে এই শব্দের ব্যবহার করা হয়েছিল।
পোয়েটিক জাসটিস
- সমালোচক টমাস রাইমার সপ্তদশ শতকে এলিজাবেথীয় নাটকের আলোচনায় Poetic Justice শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেছিলেন। এ হল এমন এক বিচার যা বাস্তবে হয় না, হয় নাটকে, নভেলে। বাস্তবজগতে মন্দের পরাজয় এবং ভালোর জয় সর্বত্র সম্ভব হয় না। কিন্তু সাহিত্যে কোনো এক অলক্ষ্য শক্তির প্রভাবে অন্যায়কারীর দন্ডবিধান হয়ই। আসলে সাহিত্যের জগৎ উচ্চতর ন্যায়-নীতির জগৎ, তাই তার ‘জাসটিস’ হবে ‘পোয়েটিক’।
মহাকাব্যিক উপমা
- মহাকাব্যে ব্যবহারের উপযোগী উপমা-- শক্তি, বিপুলত্ব ও সৌন্দর্যের গুণে যে উপমা মহাকব্যের ভাষা-শৈলীর সঙ্গে মানানসই হয়ে ওঠে। মহাকবি হোমার এই ধরণের উপমা বা epic simile-র আদি নির্মাতা বলে একে Homeric Simile-ও বলা হয়।
স্টাইল
- বাংলা প্রতিশব্দ ‘শৈলী’। শৈলী কাব্য বা গদ্যের স্বতন্ত্রতাকে পরিস্ফুট করে। লেখকের শব্দপ্রয়োগ, বাক্যগঠন, অলংকরণ, ছন্দের ধরণ, পদবিন্যাসরীতি ইত্যাদি যাবতীয় প্রকরণগত শৃঙ্খলাকে এককথায় Style বলা যায়। শৈলীভিত্তিক সাহিত্য বিচারের ধারা হল Stylistics.
চলবে........
আরও জানতে চাই। ধন্যবাদ