ক্রন্দনরতা জননীর পাশে কবিতার বড়ো প্রশ্ন উত্তর | রচনাধর্মী | মৃদুল দাশগুপ্ত | দ্বাদশ শ্রেণি | Krandanrata Jananir Pashe by Mridul Dashgupta | Long Answer Type Question Answer
ক্রন্দনরতা জননীর পাশে কবিতার বড়ো প্রশ্ন উত্তর | রচনাধর্মী | মৃদুল দাশগুপ্ত | দ্বাদশ শ্রেণি | Krandanrata Jananir Pashe by Mridul Dashgupta | Long Answer Type Question Answer
দ্বাদশ শ্রেণির অন্যতম একটি কবিতা 'ক্রন্দনরতা জননীর পাশে'। কবি মৃদুল দাশগুপ্ত'র লেখা কবিতাটি অনন্য। আলোচ্য কবিতা থেকে কিছু প্রশ্নের নমুনা উত্তর উল্লেখ করা হল।
এই পোস্টে ৫টি প্রশ্নের নমুনা উত্তর দেওয়া হলো। নিচের পয়েন্ট সবকটি প্রশ্ন উল্লিখিত হয়েছে, যাতে ক্লিক করলে সেই উত্তরে যাওয়া যাবে।
প্রশ্ন (toc)
=======================================================
[১] “আমি তা পারি না।”—কবি কী পারেন না? “যা পারি কেবল”—কবি কী পারেন? [২০১৮]
[ক] কবিতা পরিচয়--‘ধানক্ষেত থেকে’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতায় কবি মৃদুল দাশগুপ্তের সমাজসচেতনতার পরিচয় পাওয়া যায়। সমকালীন সমাজের অবক্ষয়ের চিত্র ফুটে উঠেছে এই কবিতায়।
[খ] প্রথম অংশ—কবি সমাজের চরম অবক্ষয়ের দিনে চুপ করে থাকতে পারেননি। ‘নিহত ভাইয়ের শবদেহ দেখে’ বিবেকবান কবি ক্রোধে গর্জে উঠতে চেয়েছেন। ‘যে মেয়ে নিখোঁজ, ছিন্নভিন্ন/জঙ্গলে তাকে পেয়ে’ কবি ভাগ্যের হাতে বিচারের ভার দিতে চাননি।
[গ] দ্বিতীয় অংশ—কবি জানেন তাঁর কলম জন্ম দিতে পারে বিদ্রোহের। দেশবাসীর কাছে রাজনীতি যখন পরিণত হয়েছিল রণনীতিতে, শাসকদলের রক্তচক্ষুর আস্ফালনে আপামর জনগণ নীরব হয়ে গেলে, কবি তাঁর প্রতিবাদী সত্তায় জাগ্রত হন। তিনি সমাজের বিপদের সময়ে জন্মভূমির পাশে দাঁড়ান। তাই আলোচ্য কবিতার মাধ্যমে কবি বৃহত্তর আন্দোলনের সূচনা করতে চেয়েছেন।
বিবেক, মূল্যবোধের তাড়নায় কবি কবিতার মধ্যে শব্দের শক্তি দিয়ে মানুষের মনে বিস্ফোরণ ঘটাতে চেয়েছেন—
“আমার বিবেক, আমার বারুদ
বিস্ফোরণের আগে।”
কবির বিবেক কবিকে জন্মভূমির প্রতি দায়বদ্ধ থাকতে, মানুষের পাশে দাঁড়াতে বাধ্য করে। আর এই অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে কবির প্রতিবাদী সত্তাটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
=======================================================
[২] ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতায় কবি জননীকে ‘ক্রন্দনরতা’ বলেছেন কেন? এই পরিস্থিতিতে কবি কী করা উচিত বলে মনে করেছেন?
[ক] কবিতা পরিচয়--‘ধানক্ষেত থেকে’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতায় কবি মৃদুল দাশগুপ্তের সমাজসচেতনতার পরিচয় পাওয়া যায়। সমকালীন সমাজের অবক্ষয়ের চিত্র ফুটে উঠেছে এই কবিতায়।
[খ] ‘ক্রন্দনরতা’ বলার কারণ—কবি অনুভব করেছেন সমকালীন অবক্ষয়িত সময়ের অভিঘাতে জননী-জন্মভূমি ক্রন্দনরতা। আলোচ্য কবিতায় এক বিশেষ সময়ের অশান্তির বাতাবরণের উল্লেখ করেছেন। কবি প্রত্যক্ষ করেচিলেন শাসকের চোখরাঙানি কেমন করে সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের ভাষাকে স্তদ্ধ করে দিয়েছিল। শিল্পীর সৃষ্টি অর্থ হারাচ্ছিল; মূল্যহীন হয়ে পড়ছিল ভালোবাসা, সমাজ, মূল্যবোধ। ‘নিহত ভাইয়ের শবদেহ দেখে’ কিংবা ‘যে-মেয়ে নিখোঁজ, ছিন্নভিন্ন/জঙ্গলে তাকে পেয়ে’ অধিকাংশ মানুষ প্রতিক্রিয়াহীন থাকলে ব্যক্তি-জননী এবং সেইসূত্রে দেশজননীর চোখ যে জলে ভরে যাবে—এমন বাস্তবতাকেই কবি আলোচ্য কবিতায় ব্যক্ত করেছেন। একদিকে সামাজিক অনাচার, অন্যদিকে প্রতিবাদহীন মানুষের মূল্যবোধের ভাঙন জননীকে আহত করেছে বলে কবি মনে করেছেন।
[গ] কবি যা করতে চেয়েছেন—সময়ের সংকটাপন্ন অবস্থায় কবি তাঁর জন্মভূমির পাশে দাঁড়িয়েছেন। কবি তাঁর কবিতায় বিদ্রোহী ভাবনার শক্তি দিয়ে মানুষের মনে বিস্ফোরণ ঘটাতে চেয়েছেন। সামাজিক অনাচারের প্রকৃত বিচারের জন্য তিনি বিধাতার শরণাপন্ন হননি, নিজেরই উদ্যোগে বিক্ষত সময়কে সারিয়ে তুলতে চেয়েছেন। ‘কবির বিবেক’ কবিকে জননী-জন্মভূমির প্রতি দায়বদ্ধ থাকতে, মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে বাধ্য করেছে।
=======================================================
[৩] “আমার বিবেক, আমার বারুদ/বিস্ফোরণের আগে।”—এমন অনুভূতি কার? তাঁর এই অনুভূতির কারণ কী?
[ক] প্রথম অংশ—‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ (কাব্যগ্রন্থ-- ‘ধানক্ষেত থেকে’) কবিতা থেকে গৃহীত উদ্ধৃত-অংশে এই অনুভূতি হয়েছে কবি মৃদুল দাশগুপ্তের।
[খ] দ্বিতীয় অংশ--কবিতাটি সমকালীন সময়ের যাবতীয় ক্ষয়ক্ষতির বিরুদ্ধে কবির ঘোষিত ইস্তেহার। কবির বিবেক, মূল্যবোধ সমাজের চরম দুর্দিনেও অক্ষত থাকে বলে কবি তাঁর কবিতাকেই প্রতিবাদের হাতিয়ার করে নেন। কৃষি-জমি আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রাজনীতি যখন রণনীতিতে পরিণত হয়েছিল, শাসকের চোখরাঙানিতে মানুষ যখন ভুলতে বসেছিল ভালোবাসা, মূল্যবোধ; তখন কবি হিসেবে তিনি অনুভব করেছিলেন জননী-জন্মভূমির ব্যথা। আর সেই ব্যথাকেই কবি আলোচ্য কবিতায় ব্যক্ত করেছেন।
মাতৃভূমির ক্রন্দন সৃষ্টিশীল লেখা, গান গাওয়া কিংবা আঁকাআঁকিকে অর্থহীন করে তুলেছে। সামাজিক সম্পর্কের অবনমন কবিকে বিস্মিত করেছে। ‘নিহত ভাইয়ের শবদেহ দেখে’ মানুষের হৃদয়ে ক্রোধ জাগ্রত না হওয়ায় কবি ক্রুদ্ধ হয়েছেন। রাজনীতির নেতারা যখন ঘর থেকে মেয়েকে তুলে নিয়ে গিয়ে তার ছিন্নভিন্ন দেহ ফেলে দিয়েছে জঙ্গলে, কবির বিবেক বিধাতার বিচারের অপেক্ষায় বসে থাকাকে নির্বুদ্ধিতা মনে করে প্রতিবাদে গর্জে উঠতে চেয়েছে। কবি সামাজিক অনাচার মেনে নিতে পারেননি। তাই তাঁর বিপ্লবী মন কবিতায় প্রকাশ করেছে বিদ্রোহ। কবি জানেন রক্ত-ঝরানো বিপ্লব করা তাঁর একার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই কবিতার মধ্যে তিনি লিখে যান, তা যে বহু মানুষের মনে বিপ্লবের ইন্ধন জোগাবে এ বিশ্বাস কবির রয়েছে। কবির আশ্বাস—কবিতায় জমিয়ে রাখা প্রতিবাদ একদিন বিস্ফোরণ ঘটাবেই। আলোচ্য কবিতায় এইভাবে কবি প্রতিবাদ গড়ে তুলে মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছেন।
=======================================================
[৪] “কেন ভালোবাসা, কেন-বা সমাজ / কীসের মূল্যবোধ!”—প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
[ক] প্রসঙ্গ—মৃদুল দাশগুপ্তের ‘ধানক্ষেত থেকে’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতা থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশে সামাজিক অবক্ষয়ের চিত্র ফুটে উঠেছে।
জমি আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে শাসকের রাজনীতির নগ্নতা প্রত্যক্ষ করে কবি ক্রুদ্ধ হয়েছেন। অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে নিহত শহীদকে দেখেও যদি কবির বিবেক না জেগে ওঠে, তবে ভালোবাসা, মূল্যবোধ সবই অর্থহীন হয়ে যায়।
[খ] তাৎপর্য—সামাজিক অবক্ষয়ের যুগে শাসকের রক্তচক্ষু দেখে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদের ভাষা হারিয়েছিল। শিল্পীর সৃষ্টিকর্ম অর্থহীন হয়ে পড়ছিল। মূল্যহীন হয়ে পড়েছিল ভালোবাসা-সমাজ-মূল্যবোধ। ‘নিহত ভাইয়ের শবদেহ দেখে’ অথবা ‘যে মেয়ে নিখোঁজ, ছিন্নভিন্ন / জঙ্গলে তাকে পেয়ে'ও যখন সাধারণ মানুষ নির্বিকার তখন কবি বিস্মিত হন। আসলে স্বদেশের সীমাহীন দুর্দশায় কবি শুনতে পেয়েছেন জননীর কান্না। জননীর হাহাকারে ক্রুদ্ধ কবি অনুতপ্ত বোধ করেছেন। তাঁর বিবেক জাগরিত হয়েছে।
ক্রন্দনরতা জননীকে কোনোভাবেই তিনি ত্যাগ করতে পারেন না। স্বজনের মৃত্যু দেখে বিধির বিচার চেয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ থাকতে পারেন না। সমাজের প্রতি কবির কর্তব্য এবং মানুষের প্রতি ভালোবাসা থেকে কবি অন্যায়ের সঙ্গে আপস করতে পারেন না। ভাইয়ের শবদেহ দেখে প্রতিহিংসা জাগ্রত না হলে ভালোবাসা, সমাজ মূল্যহীন হয়ে পড়বে। এই বক্তব্যই কবিতার উদ্ধৃত অংশে প্রকাশ পেয়েছে।
=======================================================
[৫] ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতাটির নামকরণের সার্থকতা লেখ।
[ক] ভূমিকা—সাহিত্য-সৃষ্টির নামকরণ খুব গুরুত্বপূর্ণ। নামকরণের মাধ্যমে সাহিত্য-পাঠের বিষয় পাঠকের কাছে ইঙ্গিতপূর্ণ হয়ে ওঠে। বিষয়ভিত্তিক, চরিত্রকেন্দ্রিক, ব্যঞ্জনাধর্মী প্রভৃতি দৃষ্টিকোণে নামকরণ করা হয় সাহিত্যের। কবি মৃদুল দাশগুপ্তের ‘ধানক্ষেত থেকে’কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত 'ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’কবিতাটির নামকরণ বিষয়কেন্দ্রিক।
[খ] কবিতার মূলভাব—দেশের সংকটময় পরিস্থিতিতে কবির জননীর পাশে থাকার অঙ্গীকার আলোচ্য কবিতার উপজীব্য। যেসময় রাজনৈতিক হানাহানিতে সমাজে নেমে এসেছে গভীর অবক্ষয়, শাসকের রাজনৈতিক চোখরাঙানিতে মানুষের মধ্যে থেকে মুছে গেছে ভালোবাসা-সহানুভূতি-সম্প্রীতিবোধ, যেসময় রাজনীতি পরিণত হয়েছে রণনীতিতে, প্রতিদিন রক্তাক্ত হয়েছে সমাজের প্রতিটি কোণ ; সেই অবক্ষয়িত সমাজ-রাজনৈতিক পরিবেশে কবি অনুভব করেছেন জননী-জন্মভূমির কান্না। অগণিত ব্যক্তিমানবীর বেদনা দেশজননীর হৃদয়কেই ভারাক্রান্ত করে তুলেছিল।
কবি দেখেছিলেন মানুষ হারিয়ে ফেলেছে প্রতিবাদের ভাষা। কবি বুঝেছিলেন ভাগ্যের হাতে ভবিষ্যতের ভার দিয়ে অসহায় বাংলার মানুষ বেঁচে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে কবি অনুভব করেছিলেন তাঁর কলম থেকে সূচনা হতে পারে বিপ্লবের ৷ তাই তিনি তাঁর কবিতায় বিদ্রোহের বাণী দিয়ে মানুষের মনে বিস্ফোরণ ঘটাতে চেয়েছেন।
[গ] সার্থকতা বিচার—কবির সজাগ বিবেক ‘ক্রন্দনরতা জননী’ জন্মভূমির পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে। কবি সমাজের কাছে দায়বদ্ধ একজন নাগরিকের মতো সমাজের বিপদে আতঙ্কিত হয়েছেন। নৈতিকতা, মূল্যবোধের চরম অবমূল্যায়নের যুগে কবির মনে প্রশ্ন জেগেছে—
“ক্রন্দনরতা জননীর পাশেএখন যদি না থাকিকেন তবে লেখা, কেন গান গাওয়াকেন তবে আঁকাআঁকি?”
সমগ্র কবিতা জুড়ে কবির প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছে এবং তার মূল কারণ অসহায়া ক্রন্দনরতা জননী। জননীর পাশে কবি দাঁড়াতে চান তার কবিতা-অস্ত্র নিয়ে। এই সূত্রে কবিতাটির নামকরণ সার্থক হয়েছে।
==============================================
আমাদের টেলিগ্রাম ও ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হোন
👇👇👇👇