ভাত গল্পের রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর pdf download | মহাশ্বেতা দেবী | Vat Galper Descriptive Question Answer pdf download
ভাত গল্প | মহাশ্বেতা দেবী | রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর pdf download | Vat Galper Descriptive Question Answer pdf download
দ্বাদশ শ্রেণির অন্যতম একটি গল্প হলো 'ভাত'। গল্পটি থেকে গুরুত্বপূর্ণ রচনাধর্মী প্রশ্নের সংকলন এখানে উল্লেখ করা হল।
১—‘সে বুঝতে পারে সব ভাত ওরা পথে ফেলে দিতে যাচ্ছে!’—ওরা বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে? ওরা সব ভাত ফেলে দিতে যাচ্ছিল কেন? সে কে? বুঝতে পেরে সে কী করেছিল? [২০২০]
‘ওরা’ কারা—মহাশ্বেতা দেবীর লেখা ‘ভাত’ গল্পে ‘ওরা’ বলতে কলকাতা শহরের বড়ো বাড়ির লোকেদের কথা বলা হয়েছে।
কারণ—বুড়ো কর্তার মৃত্যু হয়েছে হোম-যজ্ঞ সত্ত্বেও। এবং অশৌচ বাড়ির বাসি ভাত খাওয়া অমঙ্গল বলে ওরা সব ভাত ফেলে দিতে যাচ্ছিল।
‘সে’ কে—সুন্দরবনের বাদা অঞ্চল থেকে ভাতের আশায় শহরে কাজ করতে আসা উচ্ছবের (উৎসব) কথা বলা হয়েছে।
উচ্ছবের কর্মকাণ্ড—দীর্ঘদিনের অভুক্ত উচ্ছব ভাতের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল। বড়ো বাড়িতে ভাত পাবার আশায় কাঠ কাটার কাজ নেয় উচ্ছব। আড়াই মণ কাঠ কেটেও ফেলে সে। কিন্তু যজ্ঞ শেষ হওয়ার আগেই বুড়ো কর্তা মারা গেলে অশৌচ বাড়ির ভাত ফেলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। উচ্ছবের সামনে দিয়ে বাসিনী ভাত ফেলে দিতে গেলে উচ্ছবের মাথার ঠিক থাকে না।
ভাতের অপচয় সহ্য করতে না পেরে উচ্ছব মোটা চালের ভাতের পিতলের ডেকচি নিয়ে পালায় উচ্চব। বাসিনীর নিষেধে রেগে যায় উচ্ছব এবং বাদার কামটের মতো দাঁত বের করে তার হিংস্রতা প্রকাশ করে।
২—এ সংসারে সব কিছুই চলে বড়ো পিসিমার নিয়মে—বড়ো পিসিমা কে? গল্পে তার চরিত্রের কীরূপ পরিচয় পাওয়া যায়, তা লেখ। [২০১৮]
প্রথম অংশ—মহাশ্বেতা দেবীর ‘ভাত’ গল্পের অন্যতম একটি চরিত্র হলো বড়ো পিসিমা। কলকাতা শহরের বড়ো বাড়িতে, যেখানে গল্পের ঘটনাগুলি ঘটেছে, সেই বাড়ির অবিবাহিতা বয়স্কা মহিলা। তিনি ঐ বাড়িরই মেয়ে। সংসারের দায়িত্ব সামলানোর কারণেই তার বিয়ে হয় নি।
দ্বিতীয় অংশ—বড়ো পিসিমার চরিত্রের যে যে দিকগুলি লক্ষ করা গেছে তা সূত্রাকারে আলোচিত হলো--
- [ক] সর্বময় কর্ত্রী—বড়ো পিসিমা ব্যাক্তিত্বসম্পন্ন মহিলা। তাঁর সিদ্ধান্তকে বাড়ির কেউ আপত্তি জানায় না। তিনি চিরকাল সংসারের সমস্ত দায়িত্ব সামলেছে, বাড়ির দেখভাল তিনিই করে থাকেন। বাড়িতে যে হোমযজ্ঞের আয়োজন হয়েছিল তার নেতৃত্বও তিনি দিচ্ছিলেন। তার অধিকারবোধ বড়ো বাড়িতে প্রবল ছিল।
- [খ] সেবাপরায়ণা— বড়ো পিসিমার মধ্যে একজন সেবাপরায়ণা নারীকে খুঁজে পাওয়া যায়। তিনি দাদাকে সেবা করেছেন নিষ্ঠার সঙ্গে।
- [গ] কুসংস্কার-আচ্ছন্না—সাধারণ বয়স্কা মহিলারদের মতো তিনি কুসংস্কারে বিশ্বাসী ছিলেন। হোম-যজ্ঞের অনুমতি দিয়েছেন এবং যজ্ঞের নিয়মকানুন সঠিক পালিত হচ্ছে কিনা তার দিকে নজর রেখেছেন। আবার বুড়ো কর্তা মারা গেলে তান্ত্রিক ও ছোটো বউয়ের বাবাকে দোষ দিয়েছেন।
- [ঘ] মানবিক চরিত্র—পিসিমাকে আপাতভাবে কঠোর মনে হলেও তার চরিত্রে মানবিকতার প্রকাশ লক্ষ করা যায়। সংস্কারের বশে হয়তো যজ্ঞের পরে তিনি উচ্ছবকে ভাত দেওয়ার কথা বলেছেন, তবু উচ্ছবের প্রতি তার সহানুভূতি ছিল। বড়ো বউয়ের কথার উত্তরে সেই অনুভূতি ধরা পড়েছে।
[] এককথায় বড়ো পিসিমা চরিত্রটি বাস্তবসম্মত, এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্র।
৩—‘এমন দুর্যোগে ভগবানও কাঁথামুড়ি দিয়ে ঘুমোন বোধ করি’—দুর্যোগের বর্ণনা দাও। এমন দিনে ভগবান কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমোন বলতে বক্তা কী বুঝিয়েছেন?
গল্প পরিচয়—মহাশ্বেতা দেবীর ‘ভাত’ একটি উল্লেখযোগ্য গল্প। ১৯৮২ সালে গল্পটি ‘ম্যানিফেস্টো’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। গল্পটি মহাশ্বেতা দেবীর ‘শ্রেষ্ঠগল্প’ বইয়ে সংকলিত হয়েছে। লেখিকা ‘উচ্ছব’ চরিত্রের মধ্যে দিয়ে বাদা অঞ্চলের সমস্ত ভূমিহীন, বঞ্চিত মানুষদের কথা পাঠকদের শুনিয়েছেন।
দুর্যোগের বর্ণনা—বাদার অধিবাসী উৎসব নাইয়ার জীবনে এই ‘দুর্যোগের’ রাত ছিল ভয়ংকর একটা রাত। মাতলার নদীর বন্যা উচ্ছবের জীবনকে সম্পূর্ণ পালটে দিয়েছিল। এই দুর্যোগের রাতে উচ্ছব ও তার বউ-ছেলে-মেয়ে পেট ভরে খেয়েছিল হিঞ্চে সেদ্ধ, গুগলি-গেঁড়ি।
এরপর শুরু হয় তুমুল ঝড়-বৃষ্টি। ছেলে-মেয়েকে জড়িয়ে ধরে ঠান্ডায় আর ভয়ে কাঁপছিল উচ্ছবের বউ, অন্যদিকে উচ্ছব ঘরের মাঝখানের খুঁটিটি শক্ত করে ধরে রেখেছিল। উন্মত্ত মাতলা কখন তার সংসার ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল সে জানে না।
বন্যায় উচ্ছবের ভিটেমাটি, পরিবারের সবাই ভেসে গিয়েছিল। সেই সঙ্গে ভেসে গিয়েছিল টিনের কৌটোর মধ্যে রাখা দরখাস্তের নকল, জমি চাওয়ার আবেদনপত্র। সবকিছু হারিয়ে শুধুমাত্র বেঁচে গিয়েছিল একটা গাছে আটকে। নিঃস্ব উচ্ছব পরবর্তী কয়েকটি দিন পাগলের মতো তার হারিয়ে যাওয়া সংসারকে খুঁজে বেড়িয়েছিল। তার মতোই অন্য হতদরিদ্রদের অবস্থা হয়েছিল। প্রত্যেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
বক্তার মনোভাব—প্রকৃতির রোষের কাছে অসহায় উচ্ছব ভগবানকে স্মরণ করেছিল—“উচ্ছব বলে চলছিল ভগমান! ভগমান! ভগমান!” দীনদরিদ্র, বঞ্চিত মানুষদের কাছে ঈশ্বরের চেয়ে বড়ো আশ্রয় আর নেই। সেদিন রাতে উচ্ছবের পরিবারকে বাঁচাতে ঈশ্বর এগিয়ে আসেননি। তিনি যেন উদাসীন ক্ষমতাশালীর মতো কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমোচ্ছিলেন। ঈশ্বর যেন শুধু ধনীদেরই খেয়াল রাখেন, হতদরিদ্রদের কাছে তিনি ঘেঁষেন না। উচ্ছব সেই রাতের অসহায়তার প্রসঙ্গে এমন কথা ভেবেছিল। উচ্ছবের ভাবনা যে গল্পলেখকেরই নিজস্ব ভাবনার প্রকাশ--তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
**—সেই রাতের দুর্যোগ উচ্ছবের জীবনে কীরূপ প্রভাব ফেলেছিল?
স্ত্রী-পুত্র-কন্যার শোকে সরকারি লঙ্গরখানায় তার খিচুড়ি খাওয়া হয় না। যখন সে শোক সামলে উঠেছিল ততদিনে লঙ্গলখানার খিচুড়ি সব শেষ। এইসব ঘটনার ধাক্কায় সে ভাতের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল। তার পরিবারের সকলের ভাতের জন্য ব্যাকুলতা ও ভাতের খিদে নিয়ে উচ্ছব চলে এসেছিল শহরে—ভাত উচ্ছব খেয়েছিল, সকলের জন্যও খেয়েছিল।
৪—‘বাদার ভাত খেলে তবে তো আসল বাদারটার খোঁজ পেয়ে যাবে একদিন’—বাদা কাকে বলে? এরকম মনে হওয়ার কারণ কী?
প্রথম অংশ—‘বাদা’ কথার আক্ষরিক অর্থ জলময় নিচু অঞ্চল। এইধরনের জলা জমিতে ভালো ধান চাষ হয়। দক্ষিণবঙ্গের সুন্দরবন অঞ্চলকে ‘বাদা’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।
দ্বিতীয় অংশ—উচ্ছব সুন্দরবনের বাদা অঞ্চলের বাসিন্দা। মনিব সতীশ মিস্ত্রির ধানে মড়ক লাগলে ভূমিহীন উচ্ছবের সমস্যার সূত্রপাত হয়। একদিন মাতলার ভয়ঙ্কর বন্যায় তার গোটা পরিবার তলিয়ে যায়। দীর্ঘদিনের অনাহার থেকে মুক্তি পেতে উচ্ছব পাড়ি দেয় কলকাতা শহরে।
শহরের একটি ধনী বাড়িতে পেটভাতায় কাঠ কাটার কাজ নেয় উচ্ছব, যে বাড়িতে বুড়ো কর্তার জন্য হোম-যজ্ঞের প্রস্তুতি চলছে। উচ্ছব বাসিনীর মারফত একসময় জানতে পারে এই বাড়িতে পাঁচভাগে ভাত রান্না হয় আর সেইসব চাল আসে বাদা থেকে। বড়ো বাড়ির এই ঐশ্বর্য দেখে বিস্মিত হয় উচ্ছব। উপোসী পরিবারের কথা মনে পড়ে যায় উচ্ছবের। উচ্ছব তার অসহায়, নিরাপত্তাহীন জীবন থেকে মুক্তি পেতে, খাবারের সামান্য চাহিদাটুকু মেটাতে সেই বাদার খোঁজ করতে চেয়েছে। সে সমস্ত বঞ্চিত, অভুক্ত মানুষদের কাছে পৌঁছে দেবে সে ‘বিস্ময়কর বাদা’র সন্ধান। তারা সবাই ভরপেট খেয়ে বাঁচতে চায় এই পৃথিবীতে।
৫--‘ভাত' গল্প অবলম্বনে উৎসব নাইয়া চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।
সূচনা—মহাশ্বেতা দেবীর ‘ভাত’গল্পের প্রধান চরিত্র উচ্ছব অর্থাৎ উৎসব নাইয়া। এক ধনী পরিবারের কাহিনি দিয়ে গল্প শুরু হলেও গল্পের মুখ্য চরিত্র হয়ে ওঠে সুন্দরবনের বাদা অঞ্চলের হতদরিদ্র হতভাগ্য উৎসব নাইয়া। আঞ্চলিক উচ্চারণে যার নাম দাঁড়ায় ‘উচ্ছব’।
গল্পের শুরুতে দেখা যায়—তার উগ্র চাহনি, বুনো চেহারা, পরনের ছোটো লুঙ্গি বড়ো বাড়ির বড়ো বউয়ের সঙ্গে সঙ্গে পাঠকের মনেও শুরুতে সন্দেহ জাগায়। যদিও গল্প যত এগিয়েছে, উচ্ছব ততই উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়েছে।
পরিশ্রমী ও কর্মঠ--বাদার বাসিন্দা উচ্ছব খুব পরিশ্রমী। গ্রাম সম্পর্কিত বোন বাসিনীর মনিবের বাড়িতে শুধু খাবারের আশায় সে আড়াই মন কাঠ কাটে। কয়েকদিনের উপোসি উৎসব স্বজন হারানোর মানসিক যন্ত্রণাতেও পরিশ্রমী ও সে নিজের কাজে ফাঁকি দেয়নি।
হতভাগ্য উৎসব--উৎসব ট্র্যাজিক চরিত্র। বন্যায় জীবনের সমস্ত স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে উৎসব সর্বস্বান্ত হয়। এই আঘাত কাটিয়ে ওঠার আগেই সরকারি লঙ্গরখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। নিরুপায় উৎসব বাসিনীর সাহায্যে বড়ো বাড়িতে এলে, ভাতের বিচিত্র আয়োজন দেখে হতবাক হয়। সেখানে অফুরন্ত খাবারের আয়োজন থাকলেও, অভুক্ত, নিরন্ন মানুষকে একমুঠো ভাত দেওয়ার হুকুম নেই। শেষে উচ্ছবের ভাতের খিদে মিটলেও চুরির অপরাধে হতভাগ্য উৎসব অত্যাচারিত হয়।
বঞ্চিত উৎসব—মাতলার বন্যায় সংসার ভেসে গেলে শোকে উচ্ছব লঙ্গরখানায় যেতে পারেনি। আবার তার মনিব সতীশ মিস্ত্রি তাকে সামান্য চাল দিতেও কুন্ঠা বোধ করে। অথচ উচ্ছব সতীশের জমিতেই চাষের কাজ করে। একইভাবে বড়োবাড়িতে কাজের বিনিময়ে সে ভাত পায় না, তাকে চুরি করে সেই ভাত খেতে হয়। এককথায় উচ্ছব সমস্তক্ষেত্রে বঞ্চিত হয়েছে।
অন্যান্য—স্ত্রী-সন্তানদের হারিয়ে উচ্ছব শোকে পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিল। তাদের দেখার আশায় ভিটেমাটির ধ্বংসস্তূপে কয়েকদিন খুঁজেছিল তাদের। উচ্ছবের সর্বকাজে এদের কথা তার বারবার মনে পড়ছিল। স্টেশনে ডেকচি থেকে মুঠো মুঠো ভাত খাওয়ার সময়ও স্ত্রী-সন্তান হারানোর শোক সে ভোলেনি। তাছাড়া উচ্ছব খুব সরল মানুষ কিন্তু ভাতের ব্যাপারে উচ্ছব ছিল সচেতন। ভাত সে ফেলতে দেয়নি। কঠিন জীবনসংগ্রামের মধ্যে দিয়ে উচ্ছব সর্বহারা মানুষদের প্রতিনিধি হয়ে উঠেছে।
৬--“ভাতে হাত ঢুকিয়ে দিতে সে স্বর্গ সুখ পায় ভাতের স্পর্শে।”—কে, কীভাবে এই অভিজ্ঞতা লাভ করে? উদ্ধৃতাংশের তাৎপর্য লেখো।
অথবা, “ভাতে হাত ঢুকিয়ে দিতে সে স্বর্গ সুখ পায় ভাতের স্পর্শে।” কে, কীভাবে এই ভাত জোগাড় করেছিল? তার এই অনুভূতির কারণ ব্যাখ্যা করো।
প্রথম অংশ--মহাশ্বেতা দেবীর লেখা ‘ভাত’ গল্পে বর্ণিত ক্ষুধার্ত উৎসব অন্নসংস্থানের আশায় কলকাতার বড়ো বাড়িতে কাজ করতে যায়। সেখানে প্রতিদিন পাঁচ রকম চালে রান্না হয়, যা বাদা থেকে আসে।
বাদা অঞ্চলের বাসিন্দা উৎসব বড়ো বাড়ির বিপুল আড়ম্বরেও বিনা পরিশ্রমে ভাত পায় না। ‘ভাতের হুতাশে’ আড়াই মণ কাঠ কেটে ফেললে উৎসব দেখে বাড়ির কর্তা মারা যাওয়ায় বাসিনী সব ভাত অশৌচের সংস্কারবশত ফেলে দিতে যাচ্ছে। উৎসব সেই মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নেয় কোনোভাবেই সেই ভাত সে ফেলে দিতে দেবে না। তাই বাসিনীর থেকে মোটা চালের ভাতের ডেকচি নিয়ে দূরে ফেলে আসবে বলে প্রথমে হনহনিয়ে হাঁটে তারপর ডেকচি নিয়ে দৌড়ে পালাতে চায়। বাসিনী তাকে বাধা দিতে এলে ক্ষুধার্ত উৎসব দাঁত বের করে কামটের মতো হিংস্র ভঙ্গি করে। তারপর স্টেশনে গিয়ে পরম তৃপ্তিতে ভাত খায় উৎসব নাইয়া।
দ্বিতীয় অংশ—অভুক্ত উৎসব ভাতের ডেকচির মধ্যে হাত ঢুকিয়ে পরম তৃপ্তিতে শান্তি পায়। অনাহারী উৎসব তার ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য ভাত খেতে খেতে যেন জগতের শ্রেষ্ঠ সুখ পায়। চন্নুনীর মা-ও তাকে কখনও সেই সুখ দিতে পারে নি। তাই উৎসব ভাবতে থাকে তার সঙ্গে তার অভুক্ত পরিবারও যেন সেই ভাত খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করে। তাই ভাতের স্পর্শ উৎসবের কাছে ‘স্বর্গসুখ’-এর সমান। বঞ্চিত, দরিদ্র, জীবন-সংগ্রামে ক্লান্ত উচ্ছবদের কাছে ‘ভাত’-ই স্বর্গসুখের তুল্য উপভোগ্য বস্তু।
৭—‘আসল বাদাটার খোঁজ করা হয় না উচ্ছবের’—উচ্ছব কে? সে কোন বাদার খোঁজ করতে চেয়েছিল? সে বাদার খোঁজ করতে পারেনি কেন?
পরিচয়—উচ্ছব হলো মহাশ্বেতা দেবী রচিত ‘ভাত’ গল্পের প্রধান চরিত্র উৎসব। সে বাদা অঞ্চলের মানুষ হয়েও শাকপাতা, গুগলি, গেঁড়ি খেয়ে দিন কাটাতো।
কোন বাদা—শহরে কাজ করতে এসে উৎসব জেনেছিল, বড়ো বাড়ির চাল আসে বাদা থেকে। উৎসব চেয়েছিল সেই বাদার খোঁজ করতে, যে বাদা থেকে বড়ো বাড়ির চাল আসে।
কারণ—দীর্ঘদিনের উপোসী উৎসব ভাতের আশায় কলকাতায় এসে বড়ো বাড়িতে কাজ নিয়েছিল। সেখানে বিভিন্নরকমের চালের বহর দেখে উৎসব অবাক হয়ে যায়। বড়ো বড়িতে পাঁচ রকমের ভাত রান্না হয় প্রতিদিন—এমন কথা আগে সে শোনেনি কোথাও। উৎসব জানতে পারে, এইসব চাল বাদা থেকে আসে। অথচ উৎসব বাদা অঞ্চলের বাসিন্দা হয়েও তার ভাত জোটে না। এদিকে বড়ো বাড়িতে ভাতের ছড়াছড়ি। উৎসবের ইচ্ছা করে সেই বাদাটার খোঁজ করতে।
বুড়ো কর্তা মারা গেলে অশৌচের সমস্ত ভাত ফেলে দিতে যায় বাসিনী। কিন্তু বাসিনীর নিষেধ অমান্য করে ভাতের ডেকচি নিয়ে পালায় উচ্ছব। প্রাণভরে ভাত খেয়ে স্টেশনেই ডেকচি নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে সে। আর পরদিন পিতলের ডেকচি চুরির অপরাধে উৎসবকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। ট্রেনে করে ক্যানিং হয়ে দেশে যেতে চেয়েছিল উৎসব। আসল বাদার খোঁজ করতে চেয়েছিল। কিন্তু থানায় যাওয়ার পর তার আর আসল বাদার খোঁজ করা সম্ভব হবে না।
৮—‘উৎসব কৌটোটা চেয়ে এনেছিল’—কোন কৌটোর কথা বলা হয়েছে? কৌটোটা কেমন ছিল? সেই কৌটো থাকলে কী হবে?
কোন কৌটো—মহাশ্বেতা দেবীর ‘ভাত’ গল্প থেকে এই অংশটি উদ্ধৃত হয়েছে। উৎসবের মনিব ছিল সতীশ মিস্ত্রি। সতীশের নাতি ফুট অর্থাৎ বেবিফুড খায়। সেই বেবিফুডের কৌটো উৎসব সতীশের কাছ থেকে চেয়ে এনেছিল। ের মধ্যে উৎসব রেখেছিল জমির দরখাস্তের নকল। যদিও মাতলা নদীর বন্যায় সে কৌটো ভেসে গিয়েছিল।
কৌটোর পরিচয়—মুখবন্ধ সুন্দর টিনের কৌটোটি উৎসবের খুব প্রিয় ছিল। উৎসব মনিবের কাছ থেকে সেটি চেয়ে এনেছিল।
কী হবে—উৎসব ভেবেছিল সেই টিনের কৌটো থাকলে তার সুবিধা হতো। ভেবেছিল চন্নুনীর মা ও তার ছেলে-মেয়েরা বেঁচে থাকতো তাহলে সবাই কৌটোটি নিয়ে এক সঙ্গে ভিক্ষায় যেতে পারত। কিংবা দরকারে ভাত ফুটিয়েও নেওয়া যেত। এককথায় সেই কৌটো হারানোর যন্ত্রণা তার সন্তান হারানোর সমতুল ছিল।
৯--‘ভাত’গল্পে বাসিনী চরিত্রটি আলোচনা করো।
পরিচয়—মহাশ্বেতা দেবীর 'ভাত' (মহাশ্বেতা দেবীর ‘শ্রেষ্ঠগল্প’ থেকে সংকলিত) গল্পে বাসিনী অপ্রধান চরিত্র হলেও তার মাধ্যমে কর্তা চরিত্রের প্রকাশ ঘটে। সুন্দরবনের বাদা অঞ্চলের বাসিন্দা উৎসব নাইয়ার গ্রাম সম্পর্কে বোন ছিল বাসিনী। বড়ো বাড়ির পরিচারিকা বাসিনীই বন্যার কবলে সর্বস্বান্ত উৎসবকে যজ্ঞের কাঠ কাটার জন্য ‘বড়ো বাড়ি’তে নিয়ে এসেছিল।
- মানবিকতা—সহানুভূতিশীল ও মানবিক চরিত্রের বাসিনী নিশ্চিন্ত কাজের সুযোগ পেয়েও শহুরে বিলাসিতা দেখে অমানবিক হয়ে ওঠেনি। মনিবের নিষ্ঠুর আচরণে সে ক্রোধ প্রকাশ করেছে। নিরন্ন উৎসবকে না খাইয়ে, তাকে দিয়ে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করানো বাসিনীর মতো নিম্নবৃত্তের মানুষের কাছেও অমানবিক মনে হয়েছে এবং তার জন্য সে ধিক্কার জানাতে ভোলেনি। পাশাপাশি সে উৎসবকে এক ঠোঙা ছাতু দিয়ে তার ক্ষুধা নিবারণের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে।
- বিশ্বাসী ও অসহায়—বড়ো পিসিমার বিশ্বাসী লোক এই বাসিনী। পিসিমার নির্দেশে লুকিয়ে চাল বিক্রি করে। বহুকালের লোক হওয়ায় বাড়ির সমস্ত মানুষ তার চেনা। তাই বড়ো বাড়িকে ‘পিশাচের বাড়ি’বলতেও তার বাধেনি। আবার বন্যায় দেশ ভেসে গেলেও সে খোঁজ নিতে যেতে পারেনি। যা তার পরাধীনতা ও অসহায়তার পরিচায়ক। আবার এও সত্য যে, বাসিনী তার গ্রামতুতো দাদা উচ্ছবকে সামান্য ভাত খাওয়াতেও অসমর্থ হয়েছে।
- বাস্তববাদী—বাসিনী একটি বাস্তববাদী চরিত্র। গ্রাম্যমনস্কতার মানুষ বাসিনী বুড়োকর্তার ‘খাস ঝি’সম্পর্কে তার বহুদিনের সঞ্চিত ক্রোধ প্রকাশ করেছে সংলাপে।
- কুসংস্কারগ্রস্ত—বাসিনী মন্ত্র-তন্ত্রে, সংস্কারে বিশ্বাসী। একদিকে সে যজ্ঞগুণে বিরাশি বছরের বুড়োকর্তার আয়ুবৃদ্ধিতে অবিশ্বাসী, অন্যদিকে বুড়োকর্তার মৃত্যুতে অশৌচগ্রস্ত ভাত নিয়ে উৎসবের পালানো দেখে ভীতসন্ত্রস্ত। মোটের উপর, চরিত্রটি অত্যন্ত বাস্তবোচিত অর্থাৎ বাস্তবগুণসম্পন্ন।
-------------------------------
PDF Download
নিচে দেখুন
-------------------------------
-------------------------------
আমাদের টেলিগ্রাম ও ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হোন
👇👇👇👇
-------------------------------------------------------------
File : ভাত গল্পের রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর pdf
Source : Google Drive
Format : PDF
Size : 1MB
Very good this website for me
ধন্যবাদ
দারুণ লিখেছেন, সত্যিই উপকৃত হলাম।