অতীত স্মরণ ক্লাস-১২ অধ্যায় থেকে বড়ো ৮ নম্বরের প্রশ্ন | রচনাধর্মী প্রশ্ন | দ্বাদশ শ্রেণি | WB HS Class 12 XII | Atit Smaran 1st Chapter | Long Descriptive Questions & Answers PDF
প্রিয় উচ্চ-মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা,
আজকে তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো উচ্চ-মাধ্যমিক ইতিহাস প্রথম অধ্যায় || অতীত স্মরণ || ৮ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর | WBCHSE Higher Secondary HS History Question and Answer | 12th History Examination – দ্বাদশ শ্রেণির চতুর্থ অধ্যায় অতীত স্মরণ ৮ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর পেয়ে যাবে | ৮ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর | দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর পেয়ে যাবে এগুলি তোমাদের ফাইনাল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।
অতীত স্মরণ ক্লাস-১২ অধ্যায় থেকে বড়ো ৮ নম্বরের প্রশ্ন | রচনাধর্মী প্রশ্ন | দ্বাদশ শ্রেণি | WB HS Class 12 XII | Atit Smaran 1st Chapter | Long Descriptive Questions & Answers PDF
প্রথম অধ্যায় : অতীত স্মরণ
প্রশ্ন ১—বিভিন্ন ধরণের জাদুঘরের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
---------------------------------------------------------------------------------
সূচনা—
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আজ অসংখ্য জাদুঘরের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। বিভিন্ন জাদুঘর বিভিন্ন ধরনের, যেমন—শিল্প, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি প্রভৃতি বিষয়ের সামগ্রী সংরক্ষণ করে সেসব বিষয়ের প্রতি আলোকপাত করে। আবার কোনো কোনো জাদুঘর নির্দিষ্ট কোনো একটি বা গুটিকয় বিষয়ের সামগ্রী সংগ্রহ করে এবং সেগুলির প্রতি আলোকপাত করে। বিভিন্ন প্রকারের জাদুঘর সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হল
(১) বিশ্বকোশ জাদুঘর—
বিশ্বকোশ জাদুঘর বলতে সুবৃহৎ, বিশেষ করে বিভিন্ন দেশের জাতীয় জাদুঘরকে বোঝায়, যেখানে বিপুল সংখ্যক দর্শকের প্রবেশের সুযোগ থাকে এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন বিষয়ের বিপুল ও অসাধারণ সংগ্রহ থাকে। বিশ্বকোশ জাদুঘরের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হল ব্রিটিশ মিউজিয়াম। ব্রিটিশ মিউজিয়ামকে 'সর্বজনীন জাদুঘর' বলা হয়।
(২) প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর—
প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে কেবলমাত্র প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং প্রদর্শন করা হয়। এই ধরনের জাদুঘর দুইধরণের হতে পারে—খোলা জায়গায় অবস্থিত এবং অট্টালিকার অভ্যন্তরে অবস্থিত। প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরের উদাহরণ হল ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ান মিউজিয়াম।
(৩) শিল্প জাদুঘর—
শিল্প জাদুঘরে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকলা সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়। এসব শিল্পকলা মৃৎশিল্প, আসবাবপত্র, ধাতুর ফলকে খোদিত শিল্প, ভাস্কর্য, চিত্র, নকশা প্রভৃতি নানা ধরনের হতে পারে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসমোলিয়ান জাদুঘর হল পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক শিল্প জাদুঘরের উদাহরণ।
(৪) ঐতিহাসিক গৃহ জাদুঘর—
কোনো প্রাচীন ঐতিহাসিক গৃহকে কেন্দ্র করে যে জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়, তা ঐতিহাসিক গৃহ জাদুঘর নামে পরিচিত। ঐতিহাসিক গৃহ বলতে কোনো খ্যাতনামা ব্যক্তির জন্মস্থান বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী ছিল এমন বাড়ি হতে পারে। ঐতিহাসিক গৃহ জাদুঘরে বিভিন্ন নথিপত্র, মানুষের তৈরি করা বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন প্রভৃতি সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করা হয়। মুর্শিদাবাদ জেলার লালবাগে অবস্থিত হাজার দুয়ারি একটি ঐতিহাসিক গৃহ জাদুঘরের উদাহরণ।
(৫) সামরিক জাদুঘর—
সামরিক জাদুঘরে কোনো দেশের সামরিক বাহিনী ও যুদ্ধসংক্রান্ত নানা নিদর্শন সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করা হয়। সাধারণত এই জাদুঘরে যুদ্ধকালীন অস্ত্রশস্ত্র, অন্যান্য সামরিক সরপ্তাম, সেনাদের পোশাক প্রভৃতি নিদর্শন সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়। 'কানাডিয়ান ওয়ার মিউজিয়াম' প্রভৃতি হল সামরিক জাদুঘরের উদাহরণ।
(৬) বিজ্ঞান জাদুঘর—
বিজ্ঞান জাদুঘর বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত বিবর্তন, বিজ্ঞানের অগ্রগতি, বিস্ময় প্রভৃতি বিষয়ের নিদর্শন সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করে থাকে। বিজ্ঞানের জাদুঘরগুলি কম্পিউটার, জ্যোতির্বিজ্ঞান, পদার্থবিদ্যা প্রভৃতি পৃথক পৃথক বিষয়ের ওপর আলোকপাত করতে পারে। শিকাগোর 'মিউজিয়াম অব সায়েন্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি' হল একটি বিজ্ঞান জাদুঘর।
(৭) খোলা আকাশের নীচে জাদুঘর—
অতীতের কোনো প্রাচীন অট্টালিকার অনুকরণে খোলা জায়গায় যখন পরবর্তীকালে নতুন করে অট্টালিকা নির্মাণ করে তা দর্শকদের প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে খুলে দেওয়া হয়, তখন তাকে খোলা আকাশের নীচে জাদুঘর বলা হয়। নরওয়ের ‘দ্বিতীয় অস্কারে’র জাদুঘরটি হল খোলা আকাশের নীচে স্থাপিত প্রথম জাদুঘর।
(৮) চলমান জাদুঘর—
যখন কোনো চলমান যানের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে ঐতিহাসিক বা দুর্লভ নিদর্শনসমূহ দর্শকদের সামনে প্রদর্শন করা হয় তখন তাকে চলমান জাদুঘর বলে। ট্রেন, মোটর ভ্যান প্রভৃতি যানে চলমান জাদুঘর তৈরি করে তা স্থান থেকে স্থানান্তরে পাঠানো হয়। ২০১১ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মের সার্ধ শতবর্ষ উপলক্ষ্যে তাঁর জীবনকাহিনিকে কেন্দ্র করে ভারতীয় রেল একটি ট্রেনে জাদুঘর তৈরি করে। এটি চলমান জাদুঘরের একটি উদাহরণ।
(৯) জৈব পার্ক ও বৃক্ষের বাগান—
জৈব পার্ক অর্থাৎ চিড়িয়াখানা এবং বৃক্ষের বাগান এক ধরনের জাদুঘর বলে বিবেচিত হয়। 'কলকাতা চিড়িয়াখানা' প্রভৃতি এই ধরনের জাদুঘরের উদাহরণ।
(১০) ব্যক্তিগত জাদুঘর—
বিভিন্ন ধনী ব্যক্তি বা পরিবার নিজস্ব উৎসাহ ও ব্যয়ে ঐতিহাসিক উপাদান সংগ্রহ করে জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেন। এগুলি ব্যক্তিগত জাদুঘর নামে পরিচিত। ব্যক্তিগত জাদুঘরের একটি উদাহরণ হল নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে মোহিত রায়ের ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত জাদুঘর।
প্রশ্ন ২—জাদুঘর বলতে কী বোঝ? জাদুঘরের উদ্দেশ্য, কার্যাবলি ও গুরুত্ব লেখ। ২+৬
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
জাদুঘর কী—
জাদুঘর বলতে সঠিক কী বোঝায় তা নিয়ে বিভিন্ন অভিমত পাওয়া যায়। সাধারণ অর্থে, জাদুঘর হল বিভিন্ন ঐতিহাসিক উপাদানের সংগ্রহশালা, যেখানে ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক, শিল্প-বিষয়ক প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন সংরক্ষণ করে তা জনসাধারণের উদ্দেশ্যে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়। এক কথায়, বিভিন্ন পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন সংগ্রহ করে সেগুলি যেসব প্রতিষ্ঠান বা ভবনে সংরক্ষণ করে রাখা হয় সেসব প্রতিষ্ঠান বা ভবনকে জাদুঘর বলে।
অভিধান অনুসারে, যে-ঘরে নানা অত্যাশ্চর্য জিনিস বা প্রাচীন জিনিস সংরক্ষিত থাকে, তাই হল ‘জাদুঘর'। আরবি 'আজায়ব্ ঘর' বা 'আজায়ব্ খানা' শব্দটির সঙ্গে বাংলা ‘জাদুঘর' শব্দটি তুলনীয়। বাংলায় 'জাদুঘর' শব্দটির অর্থ হল, “যে গৃহে অদ্ভুত অদ্ভুত পদার্থসমূহের সংগ্রহ আছে।“
'জাদুঘর' শব্দের ব্যুৎপত্তি—
বাংলা ‘জাদুঘর' শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হল 'Museum' (মিউজিয়াম)। 'মিউজিয়াম' শব্দটির মূল উৎস হল প্রাচীন গ্রিক শব্দ Mouseion (মউসিয়ন), যার অর্থ হল মিউসদের মন্দির।
জাদুঘরের উদ্দেশ্য, কার্যাবলি ও গুরুত্ব
পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত বিভিন্ন জাদুঘরের উদ্দেশ্যও বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। জাদুঘরের প্রধান উদ্দেশ্য ও কার্যাবলিগুলি হল—
(ক) সংগ্রহ—
জাদুঘরের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ও কাজ হল দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন দুর্লভ ঐতিহাসিক নিদর্শনসমূহ খুঁজে বের করা এবং সেগুলি সংগ্রহ করা। হারিয়ে যাওয়া ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলি সংগ্রহ করে ইতিহাস রচনার দরজা খুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে জাদুঘর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
(খ) সংরক্ষণ—
আধুনিক জাদুঘরগুলিতে বিভিন্ন ধরনের ঐতিহাসিক উপাদান সংরক্ষিত থাকে। জাদুঘরে সংরক্ষিত বিভিন্ন সংরক্ষিত জিনিসপত্র দীর্ঘস্থায়ী করতে বৈজ্ঞানিক সংরক্ষণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
(গ) প্রদর্শন—
জাদুঘর দুর্লভ ঐতিহাসিক বস্তুসামগ্রী সাধারণ দর্শক, পাঠক, গবেষক প্রভৃতি সব ধরনের মানুষের প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে উন্মুক্ত করে দেয়। জাদুঘরে সংরক্ষিত সামগ্রীগুলি জনসাধারণকে প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে 'ডিসপ্লে কেস'-এ সাজিয়ে রাখা হয়।
(ঘ) গবেষণার কাজ—
যে-কোনো মানুষের সংগ্রহ করা ঐতিহাসিক নিদর্শনই জাদুঘরে সংরক্ষিত হতে পারে। সেসব নিদর্শনগুলির প্রকৃত ইতিহাস কী তা নিয়ে যথেষ্ট গবেষণার সুযোগ করে দেওয়া জাদুঘরের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য ও কাজ। গবেষকদের বৃত্তি প্রদান করে জাদুঘরগুলি গবেষকদের কাজে উৎসাহ দেয়।
(ঙ) জ্ঞানের প্রসার ঘটানো—
জাদুঘরের একটি প্রাথমিক উদ্দেশ্য ও কাজ হল সংগ্রহশালার বস্তুসামগ্রীর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে জ্ঞানের প্রসার ঘটানো। পাঠ্য বইয়ের পাতায় বা দৈনন্দিন পড়াশোনায় পাঠকগণ যেসব ঐতিহাসিক বিষয় পড়ে থাকেন সেসব বিষয়ের ঐতিহাসিক নিদর্শন জাদুঘরে চোখের সামনে দেখে পাঠকের মনে বিষয়টি সম্পর্কে আরও কৌতূহল ও আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়।
(চ) আনন্দদান—
জাদুঘরের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল সাধারণ দর্শকদের আনন্দদান করা। দর্শকরা সর্বদা গবেষকের দৃষ্টি নিয়ে জাদুঘরে আসবে এমন কোনো কথা নেই। বরং জাদুঘরে গবেষকের তুলনায় সাধারণ দর্শকদের সংখ্যাই বেশি হয়। এরুপ দর্শকদের কাছে জাদুঘর হল হালকা জ্ঞান সংগ্রহের মাধ্যমে কিছু আনন্দলাভের স্থান।
প্রশ্ন ৩—কিংবদন্তি কী? কিংবদন্তির বৈশিষ্ট্য উলেখ করে ইতিহাসের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব লেখ। ৪+৪
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
কিংবদন্তি কী—
পাশ্চাত্য জগতে প্রচলিত লেজেন্ড বাংলায় 'কিংবদন্তি' রূপে পরিচিত। কিংবদন্তি কাহিনিগুলিতে যেসব ঘটনার বিবরণ দেওয়া হয় বা যেসব চরিত্রের উল্লেখ করা হয়, অতীতে একসময় সেসব ঘটনা ঘটেছিল বা সেসব চরিত্র জীবন্ত ছিল বলে লোকসমাজ বিশ্বাস করে থাকে। অতীত কাল থেকে লোকসমাজে প্রচলিত কিংবদন্তি কাহিনিগুলিতে সামান্য পরিমাণে হলেও অতীতের বহু ঐতিহাসিক তথ্য ও সূত্র থাকে।
কিংবদন্তির বৈশিষ্ট্য
বিষয়বস্তু—
কিংবদন্তির বিষয়বস্তু বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। ইতিহাস-নির্ভর কাহিনি, প্রেম-বিরহ সম্পর্কিত কাহিনি, ভূত-প্রেতের কাহিনি ইত্যাদির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের ঘটনা কিংবদন্তির বিষয়বস্তু হয়ে থাকে।
চরিত্রের অস্তিত্ব—
একথা সাধারণভাবে স্বীকার করে নেওয়া হয় যে, কিংবদন্তির চরিত্রগুলি অতীতকালে একসময় জীবিত ছিলেন। রামচন্দ্র, শ্রীকৃষ্ণ, হারকিউলিস, প্রমিথিউস প্রমুখ কিংবদন্তি চরিত্রের অস্তিত্ব সম্পর্কে ঐতিহাসিকগণ প্রায় নিশ্চিত। তাঁরা যে, সাধারণ মানুষের চেয়ে বেশি ক্ষমতাবান, সাহসী, মানবদরদী ছিলেন সেকথাও স্বীকার করতে বাধা নেই।
অতিরঞ্জন—
কিংবদন্তীর ঘটনায় প্রায়শই অতিরঞ্জন লক্ষ করা যায়। অনেক কিংবদন্তিতে ভিত্তিহীন ঘটনার অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়।
কয়েকটি কিংবদন্তি—
রামচন্দ্র (রামায়ণ কাব্য), শ্রীকৃষ্ণ (মহাভারত), হারকিউলিস (গ্রিক পুরাণ), গোপাল ভাঁড় প্রভৃতি কিংবদন্তির উল্লেখযোগ্য চরিত্র। এইসব চরিত্রগুলিকে ঘিরে রয়েছে নানা কল্পকথা, কাহিনি।
কিংবদন্তির গুরুত্ব
মৌখিক ইতিহাসের উপাদান হিসেবে কিংবদন্তিগুলির গুরুত্বগুলি হল
ঐতিহাসিক তথ্যের সূত্র—
বিভিন্ন কিংবদন্তির ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার সত্যতা নিরূপণ করা সম্ভব হয়। প্রচলিত কিংবদন্তি রয়েছে এমন স্থানে খনন করে প্রাচীন বৌদ্ধ বিহারের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
আনন্দদান—
কিংবদন্তির ঘটনাগুলি অতীত কাল থেকে মানুষের মুখে মুখে প্রচারিত হয়ে লোকসমাজকে আনন্দ দিয়ে যাচ্ছে। কিংবদন্তিতে আনন্দদায়ক উপাদান আছে বলেই এগুলি বংশপরম্পরায় বর্তমানকালে এসে পৌঁছেছে।
শিক্ষাদান—
বর্তমানকালের মানুষকে কিংবদন্তির ঘটনাগুলি অতীতের নৈতিকতা, বীরত্ব প্রভৃতি বিষয়ে তথ্য সরবরাহ করে। এগুলি থেকে বর্তমানকালের মানুষ নৈতিকতার শিক্ষা লাভ করতে পারে।
ঐতিহাসিক ভিত্তি—
বহু ক্ষেত্রেই কিংবদন্তির কাহিনিগুলির বাস্তব ভিত্তি আছে। বাংলার কিংবদন্তি চরিত্র রঘু ডাকাতের কালী পুজোর ভিত্তিতে আজও একটি কালী মন্দিরকে চিহ্নিত করা হয়। তাই কিংবদন্তি থেকে ঐতিহাসিক উপাদান পাওয়া সম্ভব।
সমালোচনা
কিংবদন্তির কাহিনিগুলির বিভিন্ন গুরুত্ব থাকলেও এর কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মুখে মুখে প্রবাহিত হওয়ার ফলে ইতিহাসের অতীত ঘটনাবলির সঙ্গে বহু কাল্পনিক ঘটনা এতে যুক্ত হয়ে পড়ে।
প্রশ্ন ৪—মিথ (পৌরাণিক কাহিনি/উপকথা) ও লিজেন্ড (কিংবদন্তী) বলতে কী বোঝো? অতীত বিষয়ে মানুষের ধারণাকে এরা কীভাবে রূপদান করে? [২০১৫]
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
মিথ কী :
জনশ্রুতির দুটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল—মিথ বা পৌরাণিক কাহিনি এবং লিজেন্ড বা কিংবদন্তী। গ্রিক শব্দ 'Muthos' থেকে ইংরেজি ‘Myth’ শব্দটির উদ্ভব, যার বাংলা প্রতিশব্দ ‘পৌরাণিক কাহিনি’ বা ‘উপকথা’। সাধারণভাবে, প্রাগৈতিহাসিক যুগের বিভিন্ন কাহিনি বা ঘটনার বিবরণ যে প্রায়-ঐতিহাসিক উপাদানে তুলে ধরা হয়, তাকে পৌরাণিক কাহিনি বলে। এগুলি সাহিত্যের সর্বপ্রথম রূপ।
নানা কাল্পনিক ঘটনা থেকেই পৌরাণিক কাহিনির উৎপত্তি। এগুলি মুলত স্মৃতির পথ বেয়ে বংশ পরম্পরায় পরবর্তী যুগে পৌঁছোয়। বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই পৌরাণিক কাহিনির অস্তিত্ব রয়েছে। দেবী দুর্গার জন্ম ও অসুর বধের কাহিনি বা চাঁদ সদাগর ও বেহুলা লখীন্দরের কাহিনি জনপ্রিয় ভারতীয় পৌরাণিক কাহিনির উদাহরণ। ঐতিহাসিক জে. এফ. বিয়ারলেইন তাঁর Parallel Myths গ্রন্থে লিখেছেন, এগুলি হল 'আমাদের অবচেতন মনের কাহিনি বিশেষ, যা সম্ভবত আমাদের জিনের মধ্যেই লিপিবদ্ধ থাকে।
লিজেন্ড কী :
ল্যাটিন শব্দ 'Legenda' থেকে ইংরেজি 'Legend' শব্দটির উদ্ভব, যার বাংলা প্রতিশব্দ 'কিংবদন্তী’ বা ‘বীরগাথা'। সাধারণভাবে বলা যায়, খানিক ইতিহাস ও বাকিটা কল্পনার সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা বিশেষ লোককাহিনি হল কিংবদন্তী। কোনো এক অসামান্য ব্যক্তি-চরিত্র ও তাঁর অলৌকিক কার্যকলাপই হল কিংবদন্তী বিষয়বস্তু। এগুলি মূলত মনুষ্য-কেন্দ্রিক ঘটনা।
অতীতের পুনর্গঠনে মিথের ভূমিকা
মিথ বা পৌরাণিক কাহিনি অতীত বিষয়ে মানুষের ধারণাকে নানাভাবে সমৃদ্ধ করে, যেমন—
ঐতিহাসিক সত্যতা :
মিথ বা পৌরাণিক কাহিনিগুলি হল 'গল্পের ছলে সত্য ঘটনার প্রকাশ’। অতীতের বিভিন্ন রাজবংশের বংশতালিকা বা রাজবংশগুলির ক্রমিক তালিকা, রাজাদের কার্যকলাপ, প্রাচীন নদ-নদী, পাহাড়-পর্বত, প্রাচীন শহর-নগর-তীর্থস্থান প্রভৃতি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পৌরাণিক কাহিনিগুলি থেকে আহরণ করা সম্ভব।
সময়কাল নির্ণয় :
বিভিন্ন মিথ বা পৌরাণিক কাহিনিগুলি তুলনামূলক পদ্ধতিতে যাচাই করে ইতিহাসের সাল-তারিখ নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছে। ফলে অতীতের ধারাবাহিক ছবি মিথের মাধ্যমে মানুষের কাছে স্পষ্ট হতে পারে।
অতীতের পুনর্গঠনে লিজেন্ডে-র ভূমিকা
প্রচলিত কিংবদন্তীগুলি অতীত বিষয়ে মানুষের ধারণাকে নানাভাবে সমৃদ্ধ করে।
ঐতিহাসিক তথ্যের সূত্র :
প্রচলিত বিভিন্ন কিংবদন্তীর উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা তথা চরিত্রের সত্যতা নিরূপণ করা যেতে পারে।
ঐতিহাসিক ভিত্তি :
কিংবদন্তীর কাহিনি রূপকথার কাহিনির মতো সম্পূর্ণ কাল্পনিক নয়, বহুক্ষেত্রেই প্রচলিত কিংবদন্তীগুলির একটা বাস্তব ভিত্তি থাকে।
অনুপ্রেরণা লাভ :
কিংবদন্তীর ঘটনা ও চরিত্রাবলির বীরত্ব, নৈতিকতা ও জীবনদর্শন মানুষকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। শ্রীকৃষ্ণ, রামচন্দ্র প্রমুখ কিংবদন্তী চরিত্রের সাহসিকতা, বীরত্ব ও মূল্যবোধ আজও ভারতীয়দের কাছে অনুকরণীয়। আবার হারকিউলিসের সাহস ও বীরত্ব আজও গ্রিকদের অনুপ্রাণিত করে।
মূল্যায়ন :
মানব সমাজের ফেলে আসা অতীতের পুনর্গঠনে মিথ ও লিজেন্ড নানাভাবে সাহায্য করলেও এগুলি থেকে ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিককে হতে হবে সতর্ক এবং সাবধানী। এগুলিতে কল্পনা এবং অবাস্তবতা মিশে থেকে তথ্যের ঐতিহাসিকতা ক্ষুণ্ণ করতে পারে। তাই যুক্তির কষ্টিপাথরে যাচাই করে তবেই এগুলিকে গ্রহণ করতে হবে।
প্রশ্ন ৫— অতীতকে স্মরণ করার ক্ষেত্রে মিথ এবং স্মৃতিকথার ভূমিকা আলোচনা করো।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(a) মিথ কী :
জনশ্রুতির দুটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল—মিথ বা পৌরাণিক কাহিনি এবং লিজেন্ড বা কিংবদন্তী। গ্রিক শব্দ 'Muthos' থেকে ইংরেজি ‘Myth’ শব্দটির উদ্ভব, যার বাংলা প্রতিশব্দ ‘পৌরাণিক কাহিনি’ বা ‘উপকথা’। সাধারণভাবে, প্রাগৈতিহাসিক যুগের বিভিন্ন কাহিনি বা ঘটনার বিবরণ যে প্রায়-ঐতিহাসিক উপাদানে তুলে ধরা হয়, তাকে পৌরাণিক কাহিনি বলে। এগুলি সাহিত্যের সর্বপ্রথম রূপ।
নানা কাল্পনিক ঘটনা থেকেই পৌরাণিক কাহিনির উৎপত্তি। এগুলি মুলত স্মৃতির পথ বেয়ে বংশ পরম্পরায় পরবর্তী যুগে পৌঁছোয়। বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই পৌরাণিক কাহিনির অস্তিত্ব রয়েছে। দেবী দুর্গার জন্ম ও অসুর বধের কাহিনি বা চাঁদ সদাগর ও বেহুলা লখীন্দরের কাহিনি জনপ্রিয় ভারতীয় পৌরাণিক কাহিনির উদাহরণ। ঐতিহাসিক জে. এফ. বিয়ারলেইন তাঁর Parallel Myths গ্রন্থে লিখেছেন, এগুলি হল 'আমাদের অবচেতন মনের কাহিনি বিশেষ, যা সম্ভবত আমাদের জিনের মধ্যেই লিপিবদ্ধ থাকে।
(b) অতীতের পুনর্গঠনে মিথের ভূমিকা
মিথ বা পৌরাণিক কাহিনি অতীত বিষয়ে মানুষের ধারণাকে নানাভাবে সমৃদ্ধ করে, যেমন—
(b.1) ঐতিহাসিক সত্যতা :
মিথ বা পৌরাণিক কাহিনিগুলি হল 'গল্পের ছলে সত্য ঘটনার প্রকাশ’। অতীতের বিভিন্ন রাজবংশের বংশতালিকা বা রাজবংশগুলির ক্রমিক তালিকা, রাজাদের কার্যকলাপ, প্রাচীন নদ-নদী, পাহাড়-পর্বত, প্রাচীন শহর-নগর-তীর্থস্থান প্রভৃতি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পৌরাণিক কাহিনিগুলি থেকে আহরণ করা সম্ভব।
(b.2) সময়কাল নির্ণয় :
বিভিন্ন মিথ বা পৌরাণিক কাহিনিগুলি তুলনামূলক পদ্ধতিতে যাচাই করে ইতিহাসের সাল-তারিখ নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছে। ফলে অতীতের ধারাবাহিক ছবি মিথের মাধ্যমে মানুষের কাছে স্পষ্ট হতে পারে।
(c) স্মৃতিকথা কী :
যে আখ্যানধর্মী সাহিত্যে লেখক তাঁর অতীত জীবনে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনার স্মৃতিচারণা করে থাকেন, তাই-ই হল স্মৃতিকথা। স্মৃতিকথার উপর নির্ভর করেই মানুষ তাঁর ফেলে আসা অতীতের দিকে ফিরে তাকায়। সাধারণভাবে বলা যায়, ইতিহাসের যেখানে শেষ, সেখান থেকেই শুরু হয় স্মৃতিকথার পথ চলা।
দক্ষিণারঞ্জন বসুর ‘ছেড়ে আসা গ্রাম’, মনিকুন্তলা সেনের ‘সেদিনের কথা', সুফিয়া কামালের ‘একাত্তরের ডায়েরি', মান্না দে-র ‘জীবনের জলসাঘরে’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য স্মৃতিকথার উদাহরণ।
(d) অতীতের পুনর্গঠনে স্মৃতিকথার ভূমিকা
(d.1) প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ :
স্মৃতিকথা অথবা আত্মজীবনী একজন ব্যক্তি ও তাঁর সময়ের কথা তুলে ধরে। এই থেকে নানান তথ্য, সমকালীন ঘটনা ও দৃষ্টিভঙ্গির হদিশ পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, দেশভাগের অপরিসীম দুঃখ-দুর্দশা, যন্ত্রণা, ছন্নছাড়া জীবন, বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয়গ্রহণ ও পুনর্বাসন প্রভৃতি সমকালীন অনেক বিষয় সমসাময়িক মানুষের আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথায় স্থান পেয়েছে।
(d.2) ঐতিহাসিক তথ্যসূত্র প্রদান :
স্মৃতিকথা বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার মূল্যবান তথ্যসূত্র হিসেবে কাজকরে। যেমন—১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বর্বর পাকবাহিনী পূর্ববঙ্গের সাধারণ মানুষের উপর যে অত্যাচার ও হত্যালীলা চালায়, তার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক উপাদান হল সমকালীন স্মৃতিকথাগুলি।
(d.3) গুণীজনদের বিবরণ :
অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্মৃতিকথাগুলি কোনো না কোনো গুণী ব্যক্তির রচনা। ফলে, এগুলিতে অবান্তর বা অতিরঞ্জিত ঘটনাবলির অনুপ্রবেশের সম্ভাবনা অপেক্ষাকৃত কম।
(e) মূল্যায়ন :
পরিশেষে বলা যায়, মানব সমাজের ফেলে আসা অতীতের পুনর্গঠনে মিথ বা স্মৃতিকথাগুলির স্বকীয় বৈশিষ্ট্য থাকলেও এগুলি থেকে ইতিহাস রচনা বহুক্ষেত্রেই ঝুঁকি সাপেক্ষ। এগুলিতে সত্য-মিথ্যা-সম্ভাবনা, ব্যক্তিগত অভিরুচি, অতিরঞ্জন প্রভৃতি মিলে-মিশে থাকায় ইতিহাস বিকৃতির সম্ভাবনা প্রবল। তাই এগুলি থেকে ইতিহাস লিখনের পূর্বে অন্যান্য যুক্তির কষ্টিপাথরে যাচাই করে নেওয়াই বাঞ্ছনীয়।
প্রশ্ন ৬—পেশাদারি ইতিহাস বলতে কী বোঝায়? অপেশাদারি ইতিহাসের সঙ্গে পেশাদারি ইতিহাসের পার্থক্য কী? [২০১৭]
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
পেশাদারি ইতিহাস কী
বর্তমানে ঐতিহাসিকদের অনেকেই ইতিহাসচর্চাকে তাদের পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন এবং পূর্ণসময়ের জন্য ইতিহাসচর্চায় নিয়োজিত থাকেন। তারা ‘পেশাদার ঐতিহাসিক’ এবং তাদের ইতিহাসচর্চা ‘পেশাদারি ইতিহাসচর্চা' নামে অভিহিত হয়। এককথায়, ভাবাবেগ, কল্পনা প্রভৃতিকে বর্জন করে কেবলমাত্র যুক্তিবাদ ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে প্রামাণ্য তথ্যের ওপর ভিত্তি করে উনিশ শতকের শেষ দিকে যে ধরনের ইতিহাসচর্চা শুরু হয়েছে, তাকেই পেশাদারি ইতিহাস বলা হয়।
মোটামুটিভাবে উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিক থেকে ইউরোপে এই ধরনের ইতিহাসচর্চা জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। জার্মান ঐতিহাসিক লিওপোল্ড ভন র্যাঙ্কে ইউরোপে আধুনিক তথ্যনির্ভর পেশাদারি ইতিহাসচর্চার অন্যতম পথিকৃৎ।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, জাদুঘর, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা প্রভৃতির অর্থানুকূল্যে পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে নানান ধরনের ঐতিহাসিক গবেষণার কাজ আজ নিরন্তর হয়ে চলেছে এবং উন্মোচিত হচ্ছে ইতিহাসের নব-নব দিগন্ত। এগুলি পেশাদারি ইতিহাসচর্চার অন্যতম উদাহরণ।
পেশাদারি ও অপেশাদারি ইতিহাসের পার্থক্য
প্রাচীনত্ব :
অপেশাদারি ইইতহাসচর্চার ধারা অপেক্ষাকৃত প্রাচীন। গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডোটাসের যুগ থেকেই ক্রমে সমগ্র তা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। অন্যদিকে পেশাদারি ইতিহাসর্চার ধারা অপেক্ষাকৃত নবীন। মূলত ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে জার্মানির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইউরোপের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পেশাদারি ইতিহাসচর্চার পথ চলা শুরু।
পদ্ধতিগত পার্থক্য :
পেশাদারি ইতিহাস চর্চায় কোনো ঐতিহাসিক ঘটনার পশ্চাতে কার্য-কারণ সম্পর্ক নির্ণয় একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এই ধরনের ইতিহাসচর্চায় যুক্তি ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাব সুস্পষ্ট এবং নিত্য-নতুন গবেষণা পদ্ধতি প্রভৃতির ব্যাপক প্রয়োগ পরিলক্ষিত হয়।
অন্যদিকে, অপেশাদারি ইতিহাসচর্চায় এগুলি উপেক্ষিত থাকে।
আর্থিক সম্পর্কৰ্গত পার্থক্য :
পেশাদারি ইতিহাসচর্চায় আর্থিক সম্পর্কের বিষয়টি জড়িত থাকে। এই ধরনের ইতিহাসচর্চায় একজন ঐতিহাসিক পূর্ণ সময়ের জন্য ইতিহাস চর্চায় নিয়োজিত থাকেন এবং ইতিহাসচর্চাকে তার পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। বিভিন্ন সরকারী প্রকল্প থেকে আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তি পেশাদারি ইতিহাসর্চার একটি অন্যতম দিক। কিন্তু অপেশাদারি ইতিহাসচর্চা মূলত বিনোদন মূলক এবং অবসর বিনোদনের অঙ্গ। এক্ষেত্রে ইতিহাসচর্চা ঐতিহাসিকের জীবন-জীবিকায় তেমন কোনো প্রভাব ফেলে না।
ব্যাপ্তিগত পার্থক্য :
পেশাদারি ইতিহাসচর্চার ব্যাপ্তি বা পরিসর অপেক্ষাকৃত বৃহৎ এবং তা দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশেও পরিব্যাপ্ত। অন্যদিকে, অপেশাদারি ইতিহাসর্চা মূলত ক্ষুদ্র প্রেক্ষাপটে হয়ে থাকে এবং স্থানীয় বা আঞ্চলিক ইতিহাসের বিভিন্ন দিক অপেশাদারি ইতিহাসচর্চায় প্রতিভাত হয়।
নিরপেক্ষতার পার্থক্য :
পেশাদারি ইতিহাসচর্চা সাধারণত পক্ষপাতশূন্য হয়ে থাকে। এই ইতিহাসচর্চায় একজন ঐতিহাসিক স্বাধীন চিন্তা ও যুক্তির দ্বারা ঘটনার ব্যাখ্যা দেন। ফলে ইতিহাস বিকৃতির সম্ভাবনা অপেক্ষাকৃত কম। কিন্তু, অপেশাদারি ইতিহাসচর্চায় এই সম্ভাবনা প্রবল। এক্ষেত্রে ঐতিহাসিক ব্যক্তিগত অভিরুচি বিশেভাবে কাজ করে।
মূল্যায়ন :
সামগ্রিক আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে পরিশেষে বলা যায়, ঐতিহাসিক মানব সমাজের বাইরের কোনো জীব নন। স্বভাবতই ব্যক্তি-ঐতিহাসিকের সংস্কার, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী, ধর্ম বিশ্বাস তাঁর লেখনীকে প্রভাবিত করতে বাধ্য। ফলে পেশাদারি ইতিহাসচর্চাতেও ঘটে বড়সড় ছন্দপতন। তাই ঐতিহাসিক অমলেশ ত্রিপাঠীকে উদ্ধৃত করেই আলোচনার ইতি টানা যায়—“ইতিহাস জানার আগে ঐতিহাসিককে জানতে হবে।”
পিডিএফ লিঙ্ক নিচে
আমাদের টেলিগ্রাম ও ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হোন
File Name : অতীত স্মরণ ক্লাস-১২ অধ্যায় থেকে বড়ো ৮ নম্বরের প্রশ্ন
File Format : পিডিএফ
File Language : বাংলা
File Location : গুগল ড্রাইভ
Download Link : ডাউনলোড
---------------------------------------------------------------------------------
File Language : বাংলা
File Location : গুগল ড্রাইভ
Download Link : ডাউনলোড
---------------------------------------------------------------------------------
----------------------------------------------------------------------------------