ঘরের বাহিরে দন্ডে শতবার, চণ্ডীদাস, পূর্বরাগ
প্রিয় শিক্ষার্থীরা,
বৈষ্ণব পদাবলীর মূল পদ ব্যাখ্যাসহ পোস্ট এখানে দেওয়া হলো।
বৈষ্ণব পদাবলীর মূল পদ ব্যাখ্যাসহ পোস্ট এখানে দেওয়া হলো।
ঘরের বাহিরে দন্ডে শতবার, চণ্ডীদাস, পূর্বরাগ
চণ্ডীদাস । পূর্বরাগ
ঘরের বাহিরে দন্ডে শতবার
তিলে তিলে আইসে যায়।
মন উচাটন নিশ্বাস সঘন
কদম্ব-কাননে চায় ||
রাই এমন কেন বা হৈল।
গুরুর দুরজন ভয় নাহি মন
কোথা বা কি দেব পাইল।।
সদাই চঞ্চল বসন-অঞ্চল
সম্বরণ নাহি করে।
বসি থাকি থাকি উঠয়ে চমকি
ভূষণ খসাঞা পড়ে।।
বয়সে কিশোরী রাজার কুমারী
তাহে কূলবধূ বালা
কিবা অভিলাষে বাঢ়য়ে লালসে
না বুঝি তাহার ছলা।।
তাহার চরিতে হেন বুঝি চিতে
হাত বাঢ়াইল চাঁদে
চণ্ডীদাস কয় কবি অনুনয়
ঠেকেছে কালিয়া-ফাঁদে।।
পূর্বসূত্র :
এটি পূর্বরাগের পদ। এখানে রাধার গভীর প্রেম তাকে কতদূর আত্মনিমগ্ন করেছে, আঁকা হয়েছে রাধার চাঞ্চল্য।
সামগ্রিক অর্থ :
ঘরের বাইরে দণ্ডে শতবার যাতায়াত করে। তিলে তিলে আসে যায়। তার মন উদাস, ঘন ঘন (দীর্ঘ) নিশ্বাস ফেলে। কদম্ব কাননের দিকে তাকিয়ে থাকে। ওগাে, রাধার এমন (দশা) হল কেন ?
গুরুজন কিংবা দুর্জন কাউকেই সে ভয় পায় না। কোথা থেকে তাকে কি অপদেবতা পেল। সর্বদা সে চঞ্চল হয়ে আছে। বুকের আঁচল সম্বরণ করে না। বসে থাকতে থাকতে চমকে ওঠে আর অলংকারাদি খসে পড়ে। রাধা বয়সে কিশােরী, সে রাজকন্যা (বৃষভানু রাজার কন্যা), তারও পর সে কুলবধূ। কীসের প্রত্যাশায় সে তার আকাঙ্ক্ষাকে প্রবর্ধিত করছে, তার এসব ছলা-কলা বুঝি না।
চণ্ডীদাস বলছেন, তার চরিতকথা থেকে মনে বুঝি, সে চাঁদে হাত বাড়িয়েছে। সে কালিয়া-ফাদে জড়িয়ে পড়েছে।
তাৎপর্য :
চণ্ডীদাসের অনুরাগের বা পূর্ণরাগের পদে বৈষ্ণব আলঙ্কারিকদের মতানুসারে অভিসারের পদের সাধন-কাঠিন্যের স্পর্শ ঘটে। চণ্ডীদাসের অনুরাগের পদের এই বৈশিষ্ট্য প্রমাণ করে যে তিনি চৈতন্য পূর্ববর্তী বা অন্তত বৈষ্ণব আলঙ্কারিকদের রস- বিভাজন রীতি প্রচারিত হবার পূর্ববর্তী। চণ্ডীদাসের রাধাকে বলা হয় জন্ম-যােগিনী। এখানে রাধা একবারেই ভয়-লজ্জা ইত্যাদি কাটিয়ে উঠেছেন। একে পূর্বরাগ বললে বুঝতেই হবে এ রাধা পূর্বরাগপালার শেষপর্বে এসে পৌঁছেছেন। এখাতে তার তদগততা সীমাহীন।
--------------------------------------------------------------
আমাদের টেলিগ্রাম ও ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হোন