কি কহব রে সখি আনন্দ ওর, বিদ্যাপতি, ভাব সম্মিলন
প্রিয় শিক্ষার্থীরা,
বৈষ্ণব পদাবলীর মূল পদ ব্যাখ্যাসহ পোস্ট এখানে দেওয়া হলো।
কি কহব রে সখি আনন্দ ওর, বিদ্যাপতি, ভাব সম্মিলন

মূলপদ
বিদ্যাপতি | ভাব সম্মিলন
কি কহব রে সখি আনন্দ ওর।
চিরদিনে মাধব মন্দিরে মোর।।
পাপ সুধাকর যত দুখ দেল।
পিয়া-মুখ-দরশনে তত সুখ ভেল।।
আঁচর ভরিয়া যদি মহানিধি পাই।
তব হাম পিয়া দূর দেশে না পাঠাই।।
শীতের ওঢ়নী পিয়া গীরিষির বা।
বরিষার ছত্র পিয়া দরিয়ার না।।
ভণয়ে বিদ্যাপতি শুন বরনারি।
সুজনক দুখ দিবস দুই-চারি।।
পূর্বসূত্র
এটি ভাব সম্মেলনের পদ। এখানে সম্মিলিত রাধিকা আপন আনন্দ অভিব্যক্ত করছেন। পূর্ব দুঃখকে আর দুঃখ বলে বোধ হচ্ছে না। ভবিষ্যৎ চিন্তাও কবিতাটিতে লক্ষ করবার মতো। সর্বশেষে শ্রীরাধা তার কাছে কৃষ্ণের স্বরূপকে অনুধাবনের চেষ্টা করেছেন।
শব্দার্থ, টীকা ও ব্যাখ্যা
কি কহব ... আনন্দ ওর : হে সখি ! আনন্দের সীমা পরিসীমা আমি কীভাবে বর্ণনা করব।
চিরদিনে : বহুদিন পরে।
পাপ সুধাকর ... সুখ ভেল : কবি প্রসিদ্ধ এই যে চাঁদের কিরণ বিরহীর যন্ত্রণার কারণ হয়। এতদিন শ্রীরাধা বিরহে কাল কাটিয়েছেন। কিন্তু কৃষ্ণসঙ্গ বঞ্চিত থাকায় চন্দ্র-কিরণ যে কামবেগ (মিলনেচ্ছা) বাড়িয়েছে, তা হয়েছে শ্রীমতীর পক্ষে পীড়াদায়ক। বিরহ বহুগুণিত হয়েছে। তাই রাধারাণী চন্দ্রকে 'পাপী' বলছেন। চন্দ্র এতদিনের নিপীড়নের নায়ক। কিন্তু নিপীড়ন 'ত' কতজনই করেছে। একমাত্র চন্দ্র তা' নয়। তবে হঠাৎ চন্দ্রের কথাই উল্লেখ করলেন কেন? কারণ কৃষ্ণের মুখ-ও যে চন্দ্রের মতো। এই চন্দ্র দেখে ওই চন্দ্রের স্মরণ হয়েছে। এক চন্দ্রের নির্যাতন ভুলেছেন আর এক চন্দ্রের সন্দর্শনে।
আঁচর : আঁচল।
তব : তবুও।
গীরিষির : গ্রীষ্মের
শীতের ওঢ়নী পিয়া গীরিষির বা : কৃষ্ণ শ্রীরাধার কাছে কেমন? তিনি সর্বরূপে অনিবার্য। শীতকালে উড়নী বা চাদর যেমন অনিবার্য, রাধার পক্ষে কৃষ্ণও তাই। গ্রীষ্মকালে বাতাস যেমন প্রাণদায়ক-রাধার কাছে কৃষ্ণও অনুরূপ।
বরিষার ছত্র পিয়া দরিয়ার না : কৃষ্ণ রাধার কৃষ্ণ বর্ষার ছাতার মতো। সবপ্রকার বর্ষণ রোধ করেন। তিনি ভব সমুদ্র পার হবার তরণী। নদীপার হতে নৌকা যেমন অনিবার্য। ঠিক তেমনি অনিবার্য শ্রীকৃষ্ণ পদচ্ছায়া
ভণয়ে বিদ্যাপতি … দিবস দুই চারি : বিদ্যাপতি বলছেন, ওহে বরণীয়া নারী শ্রেষ্ঠা ! আজ তোমার আনন্দ দেখে বুঝলাম, তোমার এতদিনের দুঃখ নিতান্ত তুচ্ছ বস্তু। প্রকৃতপক্ষে যিনি সুজন, তাঁর দুঃখ দু-চার দিনের মাত্র। দুঃখের ভিতর দিয়ে তাঁর পরীক্ষা। সুদিন আসবেই।
সামগ্রিক অর্থ
আমার আনন্দের সীমারেখা কি করে বর্ণনা করব সখি ! কতকাল পরে মাধব আজ আমার মন্দিরে এলেন। পাপী চন্দ্র আমাকে যত দুঃখ দিয়েছে, প্রিয়া মুখ দেখে আমি তার সব ভুলে গেলাম। আঁচল ভরা মহানিধির বদলেও আমি প্রিয়কে দূরদেশে পাঠাব না। প্রিয় যে আমার শীতকালের চাদর, গ্রীষ্মের বাতাস, শীতের ওড়না, বর্ষার ছাতা বা নদীর নৌকার মতো। বিদ্যাপতি বলছেন, হে বরণীয়া শুন ! যিনি সুজন, তার দুঃখ মাত্র দু-চার দিনের।
তাৎপর্য আলোচন, ব্যাখ্যা
এমন কথা বলা হয় যে, সদ্য সন্ন্যাস গ্রহণ করে চৈতন্যদেব শান্তিপুরে এলে স্বয়ং অদ্বৈত-আচার্য, এই সংগীত গেয়ে তাঁকে অভ্যর্থনা করেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর প্রিয় সমাগমের আনন্দ পদটিতে অভিব্যক্ত। কিন্তু শেষ চার চরণে কবি মানবী রাধার বেদনাকে অতিক্রম করে ভক্ত মানসকেই অভিব্যক্ত করেছেন। মোহবদ্ধ জীব বোঝে না যে পরমাত্মার সঙ্গে জীবাত্মার অনিবার্য সম্পর্ক। এই সম্পর্ককে নানাভাবে বর্ণনা করতে করতে কবি নৌকা এবং নদীর উপমা এনেছেন। বস্তুত কৃষ্ণ-এর পদতরী আশ্রয় ভিন্ন ভব নদী পার হতে আর কি উপায় আছে? কৃষ্ণাশ্রয় করা মাত্রই কৃষ্ণসঙ্গ লাভ হয় না। তীব্র বেদনা ও বিরহের ভিতর দিয়ে এগিয়ে গিয়ে ঘটে এ সম্মেলন। সু-সাধকের কাছে এ দুঃখ তুচ্ছ, দু-চারদিনের মাত্র। তারপরেই চিরদিনের মাধব প্রাপ্তি।
-------------------------------------------------
পিডিএফ লিঙ্ক নিচে
আমাদের টেলিগ্রাম ও ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হোন
File Name : কি কহব রে সখি আনন্দ ওর, বিদ্যাপতি, ভাব সম্মিলন
File Format : পিডিএফ
File Language : বাংলা
File Location : গুগল ড্রাইভ
Download Link : কি কহব রে সখি আনন্দ ওর, বিদ্যাপতি, ভাব সম্মিলন
File Language : বাংলা
File Location : গুগল ড্রাইভ
Download Link : কি কহব রে সখি আনন্দ ওর, বিদ্যাপতি, ভাব সম্মিলন
-------------------------------------------------------------