দশম শ্রেণির ইতিহাস সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা থেকে ২ নম্বরের প্রশ্ন উত্তর ২০২২ | History Class 10 4th Chapter Question Answer PDF 2022
দশম শ্রেণির ইতিহাস সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা থেকে ২ নম্বরের প্রশ্ন উত্তর ২০২২ | History Class 10 4th Chapter Question Answer PDF 2022
২০২২ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায় ইতিহাসের যেকটি অধ্যায় (৫টি) পরীক্ষা হবে, তার মধ্যে চতুর্থ অধ্যায়টি হলো 'সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা' । এই অধ্যায় থেকে ২৫টির বেশি ২ নম্বরের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো।
প্রশ্নমান = ২
[১] ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের প্রত্যক্ষ কারণ কী ছিল?
@ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত মহাবিদ্রোহের প্রত্যক্ষ কারণ ছিল সিপাহিদের মধ্যে এনফিল্ড রাইফেলের কার্তুজের ব্যবহার সংক্রান্ত অসন্তোষ।
এনফিল্ড রাইফেলের টোটা একটি মোড়কের মধ্যে থাকত। মোড়কটি দাঁতে কেটে বন্দুকের মধ্যে ভরতে হত। রটিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, ওই মোড়কটিতে গোরু ও শূকরের চর্বি মাখানো থাকে। ফলে ধর্মচ্যুত হওয়ার ভয়ে হিন্দু ও মুসলমান সিপাহিরা এই কার্তুজ ব্যবহার করতে অসম্মত হয়। এই কার্তুজের ব্যবহারকে কেন্দ্র করেই তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল।
[২] ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের নেতানেত্রীদের নাম লেখ।
@ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের উল্লেখযোগ্য নেতানেত্রীরা ছিলেন— দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ, ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাঈ, নানাসাহেব কানপুরে, বেগম হজরত মহল লখনউতে, কুনওয়ার সিং জগদীশপুরে নেতৃত্ব দেন।
[৩] উনিশ শতককে কে, কেন ‘সভা-সমিতির যুগ’ বলে অভিহিত করেছেন?
@ উনিশ শতক ভারতের সাহিত্য-সংস্কৃতি, রাজনীতিতে এক নতুন যুগের সূচনা করে। এ যুগে বহু সভা-সমিতি গড়ে ওঠে। যেমন--বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা, ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি, ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন, ইন্ডিয়ান লিগ, ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন প্রভৃতি সমিতি গড়ে উঠেছিল। একারণে অনিল শীল উনিশ শতককে ‘সভা-সমিতির যুগ’ বলে অভিহিত করেছেন।
[৪] বাংলাদেশের প্রথম রাজনৈতিক সমিতি কোন্টি ছিল? কারা এই সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন?
@ বাংলাদেশের প্রথম রাজনৈতিক সমিতি ছিল বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা (১৮৩৬)।
@ দ্বারকানাথ ঠাকুর, কালীনাথ রায়চৌধুরী, প্রসন্নকুমার ঠাকুর ছিলেন এই সমিতির প্রতিষ্ঠাতা। এরা সবাই জমিদার ছিলেন।
[৫] বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা কেন প্রতিষ্ঠিত হয়? অথবা, বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভার উদ্দেশ্য কী ছিল ?
@ জমিদার শ্রেণির স্বার্থরক্ষা করা এই সমিতির অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। তাছাড়া পতিত জমিতে কর না বসানো, নিষ্কর জমি বাজেয়াপ্ত না করা প্রভৃতি দাবি এই সমিতির মাধ্যমে সরকারের কাছে পেশ করা অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল।
[৬] কবে, কারা জমিদার সভা প্রতিষ্ঠা করেন?
@ ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে জমিদার সভা প্রতিষ্ঠিত হয়।
@ কলকাতার বিশিষ্ট জমিদাররা নিজেদের স্বার্থে এই জমিদার সভা প্রতিষ্ঠা করেন। পরে এই সভার নাম হয় ল্যান্ডহোল্ডার্স সোসাইটি। রাজা রাধাকান্ত দেব, দ্বারকানাথ ঠাকুর ও প্রসন্নকুমার ঠাকুর এই সভার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
[৭] জমিদার সভা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কী ছিল? অথবা, কারণ ছিল?
@ জমিদারদের বংশানুক্রমিক অধিকার সুরক্ষিত রাখতে এবং চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে রাজস্ব বিষয়ে যে অস্পষ্টতা ছিল সেই সুবিধাকে কাজে লাগাতে সচেষ্ট ছিলেন।
[৮] কবে, কারা ভারতসভা প্রতিষ্ঠা করেন?
@ ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতসভা (Indian Association) প্রতিষ্ঠিত হয়।
@ সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, আনন্দমোহন বসু ও শিবনাথ শাস্ত্রী এই সভার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
[৯] ভারতসভা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কী ছিল?
@ উদ্দেশ্য--[1] দেশে জনমত গঠন করা, [2] ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের অধিবাসীদের ঐক্যবদ্ধ করা, [3] রাজনৈতিক আন্দোলনে অশিক্ষিত মানুষদের যোগদানের ব্যবস্থা করা প্রভৃতি।
[১০] কবে, কারা হিন্দুমেলা প্রতিষ্ঠা করেন?
@ ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে হিন্দুমেলার সূচনা হয়।
@ নবগোপাল মিত্র, রাজনারায়ণ বসু এই মেলার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
[১১] হিন্দুমেলার উদ্দেশ্য ছিল?
@ [ক] হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ করা। [খ] আত্মনির্ভরতা গড়ে তোলা। [গ] দেশীয় শিল্প-সাহিত্যকে উৎসাহ দান করা প্রভৃতি।
[১২] ‘ভারতমাতা’ চিত্রটির ব্যঞ্জনা ব্যক্ত করো। [অথবা] জাতীয়তাবাদের উন্মেষে ভারতমাতা চিত্রটির ভূমিকা লেখ।
@ বিখ্যাত শিল্পী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা ‘ভারতমাতা’ চিত্রটি গভীর ব্যঞ্জনাময়। দেশমাতার প্রতিমূর্তি হিসেবে একটি নারীর চিত্র এঁকেছেন। তাঁর চারটি হাত। দেবীমূর্তির অনুকরণে প্রথম হাতে শস্য (ধান), দ্বিতীয় হাতে বস্ত্র, তৃতীয় হাতে বই, চতুর্থ হাতে জপমালা আছে। তিনি জাতীয়তার প্রতীক। বিদেশি শাসনের বন্ধন থেকে তিনি জাতিকে জেগে ওঠার আহ্বান জানাচ্ছেন।
[১৩] মহারানির ঘোষণাপত্র কী?
@ ১৮৫৮ সালের ১ নভেম্বর ‘মহারানির ঘোষনাপত্র’ ঘোষিত হয়।
@ কোম্পানির শাসনকে অবসান ঘটিয়ে ভারতীয় জনসাধারণের অনুগত্য লাভের উদ্দেশ্য মহারানির ভারতের শাসনভার গ্রহণ করা সম্পন্ন হলো এই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে।
[১৪] ইলবার্ট বিলের উদ্দেশ্য কী ছিল?
@ লর্ড রিপন কর্তৃক প্রবর্তিত ‘ইলবার্ট বিল’এর উদ্দেশ্য ছিল ইউরোপীয় ও ভারতীয় বিচারকদের সমমর্যাদা ও সমক্ষমতার অধিকারী করা।
কারণ ভারতীয়রা যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও ইউরোপীয় অপরাধীর বিচার করতে পারত না।
[১৫] অস্ত্র আইন কী?
@ ১৮৭৮ সালে লর্ড লিটনের সময়ে এই ‘অস্ত্র আইন’ পাশ হয়।
@ এই আইন দ্বারা ব্রিটিশ সরকারের বিনা অনুমতিতে কোনো ভারতীয়ের আগ্নেয় অস্ত্র রাখা নিষিদ্ধ হয়।
[১৬] ‘ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্ট’ কী?
@ ১৮৭৮ সালে লর্ড লিটনের সময়ে এই ‘ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্ট’ পাশ হয়। @ দেশীয় ভাষায় প্রকাশিত পত-পত্রিকার প্রকাশের উপর নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।
[১৭] ‘আনন্দমঠ’ কীভাবে জাতীয়তাবাদী ভাবধারাকে উদ্দীপ্ত করেছিল?
@ ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসের রচয়িতা হলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৮২ সালে।
@ এই উপন্যাসে দেশপ্রেমের আদর্শ ও দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য যুবশক্তির আত্মদান ও সংগ্রাম বিবৃত হয়েছে। উপন্যাসের ‘বন্দেমাতরম্’ গান বিপ্লবীদের গভীরভাবে উদ্বুদ্ধ করেছিল।
[১৮] ‘মহারানির ঘোষণাপত্রে’র উদ্দেশ্য কী ছিল?
@ ১৮৫৮ সালের ১ নভেম্বর ‘মহারানির ঘোষণাপত্র’ ঘোষিত হয়।
@ ভারতীয় শাসনব্যবস্থায় কোম্পানি শাসনের অবসান ঘটানো এবং দেশীয় রাজন্যবর্গ এবং ভারতবাসীর আনুগত্য লাভের উদ্দেশ্যে এই ঘোষণাপত্র জারি করা হয়।
[১৯] ব্যঙ্গচিত্র কেন আঁকা হয়?
@ ব্যঙ্গচিত্র বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে আঁকা হয়। সমাজের নানা দোষ-ত্রুটি, নানা শ্রেণির মানুষের পদস্খলন, আচার-ব্যবহারে ভণ্ডামি, বকধার্মিকতা প্রভৃতি ফুটিয়ে তুলতে সুকৌশলে চিত্রশিল্পীরা ব্যঙ্গচিত্র বা কার্টুনের আশ্রয় নেন।
@ গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর একজন প্রতিভাবান ব্যঙ্গচিত্র শিল্পী ছিলেন।
[২০] জমিদারসভা ও ভারতসভার মধ্যে দুটি পার্থক্য লেখ।
@ তফাত—[ক] জমিদার সভার উদ্যোক্তা এবং সদস্যরা ছিলেন অভিজাত এবং জমিদার। অন্যদিকে ভারতসভার উদ্যোক্তা ও সদস্যরা ছিলেন সূশিক্ষিত বিলেতফেরত মধ্যবিত্ত শ্রেণি। [খ] জমিদার সভার মূল উদ্দেশ্য ছিল ইংরেজদের সুনজরে থেকে জমিদারির স্বার্থরক্ষা। আর ভারতসভাই সর্বপ্রথম শক্তিশালী জনমত গঠন এবং বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীর ঐক্যবদ্ধতার উপর জোর দেয়।
[২১] মহারানির ঘোষণাপত্রের দুটি দিক লেখ।
@ এই ঘোষণাপত্রে বলা হয়--[ক] ভারতবাসীর ধর্ম ও সামাজিক বিষয়ে সরকার কোনোরূপ হস্তক্ষেপ করবে না। [খ] যোগ্যতা থাকা ভারতবাসী সরকারি চাকরিতে উপযুক্ত পদে নিযুক্ত হতে পারবে।
[২২] কে, কেন, কার শাসনকালকে ‘প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অধ্যায়’ বলে উল্লেখ করেছেন?
@ ‘মহারানির ঘোষণাপত্রে’ (১৮৫৮) উল্লিখিত বহু প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়নি, শুধুমাত্র ঘোষণা হয়েই ছিল। তাই ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার মহারানি ভিক্টোরিয়ার শাসনকালকে ‘প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অধ্যায়’ বলে উল্লেখ করেছেন।
[২৩] হিন্দু মেলার গুরুত্ব লেখ।
@ জাতীয়তাবাদী ভাবধারা প্রচার ও প্রসারে এই মেলা গুরুত্ব অপরিসীম। এই মেলা সর্বসাধারনের জন্য উন্মুক্ত ছিল ফলে সকল মানুষের মেলবন্ধন জাতীয় আন্দোলনের পথকে সুগম করেছিল।
[২৪] ভারতসভার মূল প্রতিষ্ঠাতা ও এর মুখপত্রের নাম লেখ।
@ ভারতসভার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়।
@ এই সভার মুখপত্র ছিল—দি বেঙ্গলি পত্রিকা।
[২৫] ন্যাশানাল মিত্র নামে কে, কেন পরিচিত ছিলেন?
@ নবগোপাল মিত্র প্রতিষ্ঠিত ‘হিন্দুমেলা’র মুখপত্র ছিল ‘ন্যাশানাল’ এবং নবগোপাল মিত্র ছিলেন এর সম্পাদক—একারণে তাঁকে ‘ন্যাশানাল মিত্র’ নামে অভিহিত করা হত।
আমাদের টেলিগ্রাম ও ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হোন
👇👇👇👇