রূপনারানের কূলে [রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর] কবিতার রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর, দ্বাদশ শ্রেণি, Rupnaraner Kule, Class 12 Higher Secondary, Descriptive Long Questions & Answers
প্রিয উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা,
আজকে তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো উচ্চমাধ্যমিক বাংলা রূপনারানের কূলে কবিতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরে-র || উচ্চমাধ্যমিক রূপনারানের কূলে কবিতা থেকে ৫ নম্বরের রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর | Twelfth Bengali Examination - উচ্চমাধ্যমিক বাংলা থেকে ৫ নম্বরের বড় প্রশ্ন ও উত্তর | এগুলি তোমাদের ফাইনাল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।
রূপনারানের কূলে [রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর] কবিতার রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর, দ্বাদশ শ্রেণি, Rupnaraner Kule, Class 12 Higher Secondary, Descriptive Long Questions & Answers
প্র। ১। “সত্য যে কঠিন/ কঠিনেরে ভালোবাসিলাম” – কবির উপলব্ধি বিশ্লেষণ করে সত্যকে যেন কঠিন বলা হয়েছে তা আলোচনা কর।
(উত্তর) সূচনা : কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরে জীবন সায়াহ্নে রচিত ‘রূপনারানের কূলে’ (‘শেষলেখা’ কাব্য) জীবনের স্বরূপ, জীবনের অমোঘ সত্য প্রকাশ পেয়েছে।
কবির উপলব্ধি
কবি তাঁর দীর্ঘ জীবনপ্রবাহে বেদনায় আঘাতে জর্জরিত হয়েছেন। লক্ষ্য করেছেন জীবনের উত্থান পতন, স্বপ্নের মায়াজাল। তিনি জেনেছেন স্বপ্ন মানুষকে মোহগ্রস্ত করে। এইকারণে জীবনের প্রান্তসীমায় উপস্থিত হয়ে স্বপ্নকে প্রত্যাখ্যান করে সত্যকে বরণ করে নিয়েছেন।
(ক) সত্যের প্রতি অনুরাগ : সত্যের প্রকৃত মূল্য লাভ করতে গিয়ে কবি বারবার আঘাত পেয়েছেন। তবুও কবি ভালোবেসে সেই কঠিন সত্যকেই আলিঙ্গন করেছেন।
(খ) সত্য ও স্বপ্নের তফাৎ : স্বপ্ন কেবল মানুষকে বেদনা দেয়। প্রকৃতপক্ষে স্বপ্ন হল মিথ্যার মুখোশ অথচ সত্যের কোনো মুখোশ নেই। সত্য হলো দিনের আলোর মতো স্পষ্ট।
(গ) সত্য কেন বঞ্চনা করে না : কবি উপলব্ধি করেছেন, সত্যের কাছে পৌঁছাতে যত বাধাই আসুক না কেন কিংবা সত্যের পথ যতই বেদনাদায়ক হোক না কেন; সত্য কখনোই মানুষকে প্রতারিত করে না। তাই কবি উচ্চ কণ্ঠে বলেন,
“সত্য যে কঠিন,
কঠিনেরে ভালোবাসিলাম,
সে কখনও করেনা বঞ্চনা”।
অন্য কবিতায় কবি বলেন,
“ভালোমন্দ যাহাই আসুক
সত্যরে লও সহজে”।
সত্য কেন কঠিন
কবি সত্যকে চিনেছেন ত্যাগ ও তপস্যার মধ্যে দিয়ে। তাঁর উপলব্ধি – দুঃখের গর্ভে লুকিয়ে থাকে সত্য। সারাজীবন দুঃখের তপস্যার মধ্যে দিয়েই সত্য অনুসন্ধানের পথ আলোকিত হয়। অনেক দুঃখ-বেদনা, আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হতে হতে সত্যের কাছে পৌঁছাতে হয়। যেহেতু সত্যের পথ হলো দুঃখের সাধনা, তাই সত্য হলো কঠিন।
প্র। ২। “রূপনারানের কূলে জেগে উঠিলাম” – জেগে ওঠার পর কবির উপলব্ধি আলোচনা করো।
(উত্তর) কবিতা পরিচয় : কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শেষলেখা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতাটি কবির জীবন জিজ্ঞাসার এক নতুন দিকের উন্মোচন করে। আলোচ্য কবিতাটিতে কঠিন সত্যের জয়গান করা হয়েছে।
কবির উপলব্ধি
দীর্ঘ জীবন-যুদ্ধে ক্লান্ত জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে জীবন নদীর কূলে দাঁড়িয়ে নব উপলব্ধির সন্ধান পান –
“রূপনারানের কূলে
জেগে উঠিলাম,
জানিলাম এ জগৎ
স্বপ্ন নয়”।
অর্থাৎ মানবজীবন স্বপ্নের মায়ার আবদ্ধ নয়, সে জীবন হলো কঠিন বাস্তবভূমি।
কবি আলোচ্য কবিতায় মানবজীবনের এক পরম সত্য উদ্ঘাটন করেছেন। জীবন দর্শনের ব্যাখ্যায় তিনি জানিয়েছেন, সত্য হলো কঠিন। সত্য দুঃখ-যন্ত্রণা দিলেও তা মানুষকে প্রতারিত করে না। শত দুঃখ কষ্ট শোক সহ্য করেও কবি নিদারুণ সত্যকে পেতে চান। অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে কবি নিজের স্বরূপকে প্রত্যক্ষ করেছেন আঘাতে বেদনায় –
“চিনিলাম আপনারে
আঘাতে আঘাতে
বেদনায় বেদনায়।”
আলোচ্য কবিতায় মানব জীবনকে কল্পনার জগৎ থেকে বড়ো করে দেখিয়েছেন। দেরিতে হলেও কবির মোহমুক্তি ঘটেছে জীবনের উপান্তে। যে সত্য লাভের জন্য মানবজীবনের ঋণ জমা পড়ে, তার শোধ সম্পন্ন হয় মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে। ঔপনিষদিক এই আত্মদর্শন ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতায় প্রকাশ পেয়েছে।
প্র। ৩। “সে কখনও করেনা বঞ্চনা” – সে বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে? সে কেন বঞ্চনা করে না?
(উত্তর) কবি ও কবিতা পরিচয় : কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শেষলেখা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতাটি কবির জীবন জিজ্ঞাসার এক নতুন দিকের উন্মোচন করে। আলোচ্য কবিতাটিতে ‘কঠিন সত্যে’র জয়গান করা হয়েছে।
প্রথমাংশের উত্তর : রূঢ় সত্যকে বহন করা মানব হৃদয়ের পক্ষে বরাবরই কঠিন। কিন্তু এই কঠিন সত্যকেই কবি রবীন্দ্রনাথ বরাবর গ্রহণ করেছেন। কারণ সত্য কখনোই মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে কবিকে দিশেহারা করেনি, বঞ্চনা করেনি।
দ্বিতীয়াংশের উত্তর : কবির অনুভূতিতে রাত্রি হলো মায়াময় স্বপ্নের আবরণ। স্বপ্নের চাওয়া-পাওয়া সবই আলেয়ার মতো মিথ্যে। স্বপ্ন মানুষকে মোহগ্রস্ত করে চিরকাল বঞ্চিত করে। কিন্তু বাস্তব হলো কঠিন সত্য, সে দিনের আলোর মতোই উজ্জ্বল। এই কারণে কবি স্বপ্নের বদলে কঠিন সত্যকে বরণ করেছেন,
“সত্য যে কঠিন
কঠিনেরে ভালোবাসিলাম।”
সত্যের প্রকৃত মূল্য লাভ করতে গিয়ে বারংবার ক্ষতবিক্ষত হলেও কবি আনন্দ পেয়েছেন। ভালোবেসে আলিঙ্গন করেছেন কঠিন সত্যকে।
বাস্তব জীবনের বিস্তৃত প্রাঙ্গণে সত্য বারবার উপস্থিত হয়েছে কঠোর নির্দয় রূপ নিয়ে। রূঢ় ও বাস্তবের আঘাতে বারবারই কবি আহত হয়েছেন। কিন্তু অপরিসীম জীবনীশক্তি নিয়ে, আঘাত বেদনায় কঠিন পথ অতিক্রম করে গ্রহণ করেছেন সেই সত্যকে। এবং এই উপলব্ধি থেকেই উচ্চকণ্ঠে জানিয়েছেন, কঠিন “সে কখনো করেনা বঞ্চনা।”
প্র। ৪। “মৃত্যুতে সকল দেনা শোধ করে দিতে” – বক্তা কে? সকল দেনা বলতে কী বোঝানো হয়েছে? সে দেনা কীভাবে শোধ করা সম্ভব?
(উত্তর) প্রথমাংশের উত্তর : ঔপনিষদিক কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘রূপনারানের কূলে’ (‘শেষলেখা’ কাব্য) কবিতা থেকে গৃহীত আলোচ্য অংশের বক্তা হলেন কবি স্বয়ং।
দ্বিতীয়াংশের উত্তর : রূপ-রস-গন্ধ-স্পর্শময় এই পৃথিবীতে মানুষ আজীবন যা অর্জন করে সেগুলিকেই কবি সকল দেনা বলে উল্লেখ করেছেন।
তৃতীয়াংশের উত্তর : জীবনের উপান্তে উপনীত হয়ে কবি স্বয়ং উপলব্ধি করেছেন, বিশ্ব প্রকৃতি থেকেই মানুষ জন্মলাভ করে। জন্ম-মৃত্যুর মাঝে যে ক্ষণিক সময়, ততদিন মানুষ অর্জন করে চলে সুখ-আনন্দ-হতাশা-প্রত্যাশা কিংবা দুঃখ। গোটা জীবনের এই সঞ্চয় বা দেনা মানুষ কখনোই তার জীবদ্দশায় পরিশোধ করতে পারে না। মৃত্যুর পর পঞ্চভূতে মিলিত হওয়ার মধ্যে দিয়েই সে দেনা শোধ করতে হয়। এই ভাবনা থেকেই কবি উচ্চারণ করেছেন,
“সত্যের দারুণ মূল্য লাভ করিবারে
মৃত্যুতে সকল দেনা শোধ করে দিতে।”
অর্থাৎ বিশ্ব প্রকৃতির মাঝে মানুষ আজন্ম ঋণী। জীবনের এই নির্মম তথা অনিবার্য সত্যকে গ্রহণ করে মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে জীবনের সকল অর্জিত দেনা পরিশোধের অঙ্গীকার করেছেন কবি।
File Name : রূপনারানের কূলে কবিতার রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর
File Language : বাংলা
File Location : গুগল ড্রাইভ
Download Link : রূপনারানের কূলে কবিতার রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর