দাঁড়াইয়া নন্দের আগে গােপাল কান্দে অনুরাগে, বলরাম দাস, কৃষ্ণের বাল্যলীলা
প্রিয় শিক্ষার্থীরা,
বৈষ্ণব পদাবলীর মূল পদ ব্যাখ্যাসহ পোস্ট এখানে দেওয়া হলো।
দাঁড়াইয়া নন্দের আগে গােপাল কান্দে অনুরাগে, বলরাম দাস, কৃষ্ণের বাল্যলীলা
বলরাম দাস । কৃষ্ণের বাল্যলীলা
দাঁড়াইয়া নন্দের আগে গােপাল কান্দে অনুরাগে
বুক বাহিয়া পড়ে ধারা।
না থাকিব তােমার ঘরে অপযশ দেহ মােরে
মা হইয়া বলে ননিচোরা ।।
ধরিয়া যুগল করে বাঁধিয়া ছান্দন ডােরে
বাঁধে রাণী নবনী লাগিয়া।
আহীর রমণী হাসে দাঁড়াইয়া চারিপাশে
হয় না দেখ সুধাইয়া ।।
অন্যের ছাওয়াল যত তারা ননি খায় কত
মা হইয়া কেবা বান্ধে কারে।
যে বল সে বল মোরে না থাকিব তাের ঘরে
এ না দুঃখ সহিতে কে পারে।।
বলাই খায়্যাছে ননি মিছা চোর বলে রানী
ভাল মন্দ না করি বিচার।
সঙ্গের সঙ্গীরে পাইয়া মারিতে আসেন ধাইয়া
শিশু বলি দয়া নাহি তার।।
অঙ্গদ বলয় তাড় আর যত অলঙ্কার
আর মণিমুকুতার হার।
সকল খসায়্যা লহ আমারে বিদায় দেহ
এ দুঃখে যমুনা হব পার ।।
বলরাম দাসে কয় এই কৰ্ম্ম ভাল নয়
ধাইয়া গােপাল কর কোরে।
যশােদা আসিয়া কাছে গোপালের মুখ মুছে
অপরাধ ক্ষমা কর মোরে ।।
আলােচনা :
বৈষ্ণব মতে, পঞ্চরসের সাধনায় বাৎসল্য রসের স্থান অতি উচ্চে। স্বয়ং ভগবানের কথা--
আমারে তাে যে যে ভক্ত ভজ যেই ভাবে।তারে সেই তাবে ভজি এ মাের স্বভাবে।।
সেই সূত্র ধরে ভক্ত নিজেকে মাতা বা পিতা জ্ঞান করে ভগবানকে সন্তান-জ্ঞানে দেখেন এবং যথােচিত লালন-পালন, তাড়ন-'ভৎর্সনা করেন। এখানে ঈশ্বর সম্পর্কে ঐশ্বর্যবােধ থাকে না। বরং ভক্তই গৌরববােধে অম্বিত।
আলােচ্য পদটি বাল্যলীলা পর্যায়ের ।এখানে গােপাল নন্দের কাছে মাতা সম্পর্কে অভিমান প্রকাশ করেছেন। বলা বাহুল্য সে অভিমান ও অনুযােগের মধ্যে স্নেহের আধিকারই কিন্তু প্রকাশিত। গােপালের বক্তব্য তিনি ননী চুরি করেন নি। অথচ মা তাঁকে ননীচোর বলে কঠোর শাস্তি দিয়েছেন। তিনি গোপালের হাত বেঁধেছেন ছাদন দড়ি দিয়ে। গােপ-নারীরা সেখানে ভীড় করে দাঁড়িয়ে তা দেখতে এসেছে। এতে গােপালের মনের ব্যথা আরও বেড়ে গেছে। অন্য ছেলেরা তাে কত ননী খায়, তাদের কি এমন করে কোন মা বাঁধে ? গোপাল এ দুঃখ আর সইতে পারছেন না। তাই তিনি আর নন্দের বাড়িতে থাকবেন না। ননী তাে খেয়েছে বলাই। অথচ রানী ভালমন্দ বিচার না করে গােপালকে চোর বলে মিথ্যা অপবাদ দেন। আসল দোষী পলাতক। সঙ্গের সঙ্গী ছিল বলে শাস্তি পান গোপাল। তাই গােপাল পিতাকে অনুরােধ জানান তার অঙ্গের অলঙ্কারাদি সব খুলে নিতে। তিনি যমুনার ওপারে চলে যাবেন। কবি যশােদাকে বলেন যে, যশােদা একাজ ঠিক করেননি। মা যশােদাও কষ্ট পেয়ে আদর করে গােপালের মুখ মুছিয়ে দিয়ে তাকে কোলে তুলে নেন।
পদটিতে বাৎসল্য প্রতি-বাৎসল্য রসের এক অনাবিল চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। কাব্যগুণে উৎকৃষ্ট হলেও স্নেহরসের প্রকাশে এটি উপভােগ্য।
---------------------------------------------------------------