৮টি বড়ো প্রশ্ন বাংলা চলচ্চিত্রের ধারা | দ্বাদশ শ্রেণি | Bangla Chalachitrer Dhara | Long Question Answer | PDF Download
৮টি বড়ো প্রশ্ন বাংলা চলচ্চিত্রের ধারা | দ্বাদশ শ্রেণি | Bangla Chalachitrer Dhara | Long Question Answer | PDF Download
[১] বাংলা চলচ্চিত্র ক্ষেত্রে হীরালাল সেনের অবদান আলোচনা করো। অথবা, বাংলা চলচ্চিত্রের জনক কাকে বলা হয়? তাঁর অবদান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
[উ] বাংলা চলচ্চিত্রের জনক বলা হয় হীরালাল সেনকে৷ তিনি বিভিন্ন বিদেশি পরিচালকের সিনেমার প্রদর্শনী দেখে চলচ্চিত্র নির্মাণে অনুপ্রাণিত হন। তাঁর ভাই মতিলাল সেনও তাঁর সহযোগী ছিলেন।
রয়্যাল বায়োস্কোপ কোম্পানি ও হীরালাল সেন
সিনেমার জন্মলগ্নে বাঙালির সন্তান হীরালাল সেন ও মতিলাল সেন ১৯৯৮ সালে গড়ে তোলেন ‘রয়্যাল বায়োস্কোপ কোম্পানি’। ছবি তোলা এবং ছবি দেখানোর জন্য তাঁরা যন্ত্রপাতি কিনে আনেন বিদেশ থেকে। বাংলার গ্রামে গ্রামে তিনি বায়োস্কোপ দেখাতে শুরু করেন।
হীরালাল সেন ৪ এপ্রিল, ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার ক্লাসিক থিয়েটারে ছবি দেখান। হীরালাল সেন চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বপ্ন দেখতেন। প্রথমদিকে তিনি বিভিন্ন মঞ্চসফল নাটক যেমন—‘আলিবাবা’, ‘সীতারাম’, ‘সরলা’, ‘ভ্রমর' ইত্যাদির খন্ডচিত্র নিয়ে একটি ছায়াছবি তৈরি করেন। এটি ক্লাসিক থিয়েটারে দেখানো হয়েছিল। এগুলি ছাড়াও তিনি বিজ্ঞাপনের জন্যেও ছবি বানিয়েছিলেন।
তথ্যচিত্র নির্মাণেরও পথপ্রদর্শক তিনি। বাংলা তথা ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে হীরালাল সেন প্রথম তথ্যচিত্রকার হিসেবে পরিচিত তিনি। তাঁর নির্মিত দুটি তথ্যচিত্র হলো—দিল্লি দরবার’ এবং বঙ্গভঙ্গ ও স্বদেশি আন্দোলন বিষয়কেন্দ্রিক।
দুর্ভাগ্যবশত দুই ভাইয়ের মত পার্থক্যে ১৯১৩ সালে ‘রয়্যাল বায়োস্কোপ কোম্পানি’ বন্ধ হয়ে যায়। এবং ১৯১৭ সালে এক বিধ্বংসী আগুনে কোম্পানির বহু ছবি ও যন্ত্রপাতি পুড়ে যায়। এককথায় নির্বাক যুগে হীরালাল সেন ও তাঁর বায়োস্কোপ কোম্পানির অবদান অবশ্য স্মরণীয়।
[] ম্যাডান কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেলে সেই শূন্যস্থান পূরণ করেছিল ‘নিউ থিয়েটার্স’। এবং পরবর্তী কয়েক দশকের সিনেমায় এই থিয়েটার্সের প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী।
[৪] বাংলা সিনেমার নির্বাক যুগের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
বাংলা সিনেমার জন্মলগ্ন ও হীলালাল সেন
বাংলা সিনেমার সূচনা হয়েছিল নির্বাক সিনেমার মাধ্যমে। ভারতীয় সিনেমার সূচনায় যাঁর নাম সর্বাগ্রে উচ্চারিত হয় তিনি হলে হীরালাল সেন এবং তাঁর ‘রয়্যাল বায়োস্কোপ কোম্পানি’। ১৮৯৮ সালে হীরালাল সেন ও তাঁর ভাই মতিলাল সেন এই কোম্পানিটি গড়ে তোলেন। বায়োস্কোপ দেখানো ছাড়াও হীরালাল সেন কয়েকটি ছবি ও তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। তথ্যচিত্র দুটি হলো—দিল্লি দরবার এবং স্বদেশি ও বঙ্গভঙ্গ বিষয়ক। ১৯১৩ সালে কোম্পানিটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বাংলার গ্রামে গ্রামে বায়োস্কোপ দেখিয়ে গিয়েছিল।
ম্যাডান থিয়েটার ও নির্বাক যুগ
জে. এফ. ম্যাডান প্রতিষ্ঠিত ‘ম্যাডান থিয়েটার’ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সিনেমা দেখাতে শুরু করেন। এই থয়েটারে প্রথম হিন্দি ছবি ‘রাজা হরিশ্চন্দ্র’ এবং এঁদের প্রযোজিত বাংলা ছবি ‘সত্যবাদী রাজা হরিশ্চন্দ্র’ দেখানো হয়েছিল। প্রথম বাংলা কাহিনিচিত্র ‘বিল্বমঙ্গল’ এই কোম্পানি উদ্যোগে তৈরি হয়েছিল। মোট ৬২টি ছবি এঁদের প্রযোজনায় তৈরি হয়। এককথায় ম্যাডান থিয়েটার সমস্ত দিক দিয়ে সফল হয়েছিল।বাংলা সিনেমায় এঁদের অবদান অবশ্য স্মরণীয়।
অন্যান্য
বায়োস্কোপ প্রদর্শনী এবং প্রযোজনায় নির্বাক যুগের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কোম্পানি ছিল—ধীরেন গাঙ্গুলির ‘ইন্দো-ব্রিটিশ ফিল্ম কোম্পানি’, শিশির কুমার ভাদুড়ীর ‘তাজমহল ফিল্ম কোম্পানি’, অনাদি বসুর ‘অরোরা ফিল্ম কোম্পানি’ প্রভৃতি। নির্বাক যুগের সিনেমার সঙ্গে জড়িত কয়েকজন ব্যক্তি হলেন—হীরালাল সেন, প্রিয়নাথ গাঙ্গুলি, ধীরেন গাঙ্গুলি, শিশিরকুমার ভাদুড়ি, জ্যোতিষ বন্দ্যোপাধ্যায়, অনাদি বসু প্রমুখ।
নির্বাক যুগের সিনেমার বিশিষ্টতা
(ক) পৌরাণিক কাহিনির পাশাপাশি প্রেম ও মানবিকতা—নির্বাক যুগের চলচ্চিত্রের বিষয় ছিল।
সূচনা =
[৭] বাংলা চলচ্চিত্রের ধারায় পরিচালক মৃণাল সেনের অবদান আলোচনা করো।
ভূমিকা =
[উ] বাংলা চলচ্চিত্রের জনক বলা হয় হীরালাল সেনকে৷ তিনি বিভিন্ন বিদেশি পরিচালকের সিনেমার প্রদর্শনী দেখে চলচ্চিত্র নির্মাণে অনুপ্রাণিত হন। তাঁর ভাই মতিলাল সেনও তাঁর সহযোগী ছিলেন।
রয়্যাল বায়োস্কোপ কোম্পানি ও হীরালাল সেন
সিনেমার জন্মলগ্নে বাঙালির সন্তান হীরালাল সেন ও মতিলাল সেন ১৯৯৮ সালে গড়ে তোলেন ‘রয়্যাল বায়োস্কোপ কোম্পানি’। ছবি তোলা এবং ছবি দেখানোর জন্য তাঁরা যন্ত্রপাতি কিনে আনেন বিদেশ থেকে। বাংলার গ্রামে গ্রামে তিনি বায়োস্কোপ দেখাতে শুরু করেন।
হীরালাল সেন ৪ এপ্রিল, ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার ক্লাসিক থিয়েটারে ছবি দেখান। হীরালাল সেন চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বপ্ন দেখতেন। প্রথমদিকে তিনি বিভিন্ন মঞ্চসফল নাটক যেমন—‘আলিবাবা’, ‘সীতারাম’, ‘সরলা’, ‘ভ্রমর' ইত্যাদির খন্ডচিত্র নিয়ে একটি ছায়াছবি তৈরি করেন। এটি ক্লাসিক থিয়েটারে দেখানো হয়েছিল। এগুলি ছাড়াও তিনি বিজ্ঞাপনের জন্যেও ছবি বানিয়েছিলেন।
তথ্যচিত্র নির্মাণেরও পথপ্রদর্শক তিনি। বাংলা তথা ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে হীরালাল সেন প্রথম তথ্যচিত্রকার হিসেবে পরিচিত তিনি। তাঁর নির্মিত দুটি তথ্যচিত্র হলো—দিল্লি দরবার’ এবং বঙ্গভঙ্গ ও স্বদেশি আন্দোলন বিষয়কেন্দ্রিক।
দুর্ভাগ্যবশত দুই ভাইয়ের মত পার্থক্যে ১৯১৩ সালে ‘রয়্যাল বায়োস্কোপ কোম্পানি’ বন্ধ হয়ে যায়। এবং ১৯১৭ সালে এক বিধ্বংসী আগুনে কোম্পানির বহু ছবি ও যন্ত্রপাতি পুড়ে যায়। এককথায় নির্বাক যুগে হীরালাল সেন ও তাঁর বায়োস্কোপ কোম্পানির অবদান অবশ্য স্মরণীয়।
[২] বাংলার চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ‘ম্যাডান থিয়েটার'-এর গুরুত্ব / অবদান আলোচনা করো।
[উ] সূচনা = স্টিফেন্সের হাত ধরে বাংলায় বায়োস্কোপের প্রদর্শনীর সূত্রপাত। বিদেশি বায়োস্কোপ নির্মাতারা কলকাতায় বায়োস্কোপ প্রদর্শনী করতে আগ্রহী হন স্টিফেন্সের সাফল্যে। পারসি ব্যবসায়ী জামশেদজি ফ্রামজি ম্যাডান বা জে. এফ. ম্যাডানের হাত ধরেই বাংলা সিনেমা প্রদর্শনীর বিষয়টি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছিল।
ম্যাডান থিয়েটার ও বাংলা সিনেমা
১৯০২ সালে ম্যাডান সাহেব প্রথমে ময়দানের একটি তাঁবুতে বায়োস্কোপ প্রদর্শন শুরু করেন এবং তাঁর কোম্পানির নাম দেন ‘এলফিনস্টোন পিকচার প্যালেস’। এরপর তিনি দু-বছরের মধ্যেই ‘ম্যাডান থিয়েটার লিমিটেড’ স্থাপন করেন। পরিচালক অমর চৌধুরী, অভিনেতা শিশির ভাদুড়ি, নরেশ মিত্র, কাননদেবী, অমৃতলাল বসু প্রমুখদের নিয়ে সবাক-নির্বাক, স্বল্পদৈর্ঘ্য, পূর্ণাঙ্গ ইত্যাদি একশোরও বেশি ছবি তৈরি করে ‘ম্যাডান থিয়েটার লিমিটেড’। মোট ৬২টি ছবি ম্যাডানের প্রযোজনায় তৈরি হয়েছিল।
প্রথমদিকে ম্যাডান থিয়েটারে ইংরেজি সিনেমা দেখানো হলেও ১৯১৩ সালের পরে হিন্দি সিনেমা দেখানো হতে থাকে। এরপর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে দাদাসাহেব ফালকের ‘রাজা হরিশচন্দ্র’, রুস্তমজী ধোতিওয়ালা পরিচালিত 'সত্যবাদী রাজা হরিশ্চন্দ্র' নামের পৌরাণিক ছবি দিয়ে ম্যাডানের বাংলা সিনেমা দেখানোর যাত্রা শুরু হয়। তারপর ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতের বিভিন্ন ভাষায় ‘বিল্বমঙ্গল’, ‘নল-দময়ন্তী’, ‘ভীষ্মপ্রতিজ্ঞা’, ‘বিষবৃক্ষ’, ‘সরলা’, ‘কপালকুণ্ডলা’ ইত্যাদি চলচ্চিত্র ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ম্যাডানকে চিরস্মরণীয় করেছে।
উল্লেখযোগ্য অবদান
1) ১৯১৯ ম্যাডান কোম্পানির প্রযোজনায় প্রথম বাংলা কাহিনিচিত্র ‘বিল্বমঙ্গল’ নির্মিত হয়।
2) ১৯২৮ সালে এই কোম্পানি প্রথপম সবাক চলচ্চিত্র হিসেবে Melody of Love দেখিয়েছিল।
3) ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে তারাই তৈরি করে প্রথম বাংলা সবাক চিত্র ‘জামাইষষ্ঠী'।
[উ] সূচনা = স্টিফেন্সের হাত ধরে বাংলায় বায়োস্কোপের প্রদর্শনীর সূত্রপাত। বিদেশি বায়োস্কোপ নির্মাতারা কলকাতায় বায়োস্কোপ প্রদর্শনী করতে আগ্রহী হন স্টিফেন্সের সাফল্যে। পারসি ব্যবসায়ী জামশেদজি ফ্রামজি ম্যাডান বা জে. এফ. ম্যাডানের হাত ধরেই বাংলা সিনেমা প্রদর্শনীর বিষয়টি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছিল।
ম্যাডান থিয়েটার ও বাংলা সিনেমা
১৯০২ সালে ম্যাডান সাহেব প্রথমে ময়দানের একটি তাঁবুতে বায়োস্কোপ প্রদর্শন শুরু করেন এবং তাঁর কোম্পানির নাম দেন ‘এলফিনস্টোন পিকচার প্যালেস’। এরপর তিনি দু-বছরের মধ্যেই ‘ম্যাডান থিয়েটার লিমিটেড’ স্থাপন করেন। পরিচালক অমর চৌধুরী, অভিনেতা শিশির ভাদুড়ি, নরেশ মিত্র, কাননদেবী, অমৃতলাল বসু প্রমুখদের নিয়ে সবাক-নির্বাক, স্বল্পদৈর্ঘ্য, পূর্ণাঙ্গ ইত্যাদি একশোরও বেশি ছবি তৈরি করে ‘ম্যাডান থিয়েটার লিমিটেড’। মোট ৬২টি ছবি ম্যাডানের প্রযোজনায় তৈরি হয়েছিল।
প্রথমদিকে ম্যাডান থিয়েটারে ইংরেজি সিনেমা দেখানো হলেও ১৯১৩ সালের পরে হিন্দি সিনেমা দেখানো হতে থাকে। এরপর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে দাদাসাহেব ফালকের ‘রাজা হরিশচন্দ্র’, রুস্তমজী ধোতিওয়ালা পরিচালিত 'সত্যবাদী রাজা হরিশ্চন্দ্র' নামের পৌরাণিক ছবি দিয়ে ম্যাডানের বাংলা সিনেমা দেখানোর যাত্রা শুরু হয়। তারপর ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতের বিভিন্ন ভাষায় ‘বিল্বমঙ্গল’, ‘নল-দময়ন্তী’, ‘ভীষ্মপ্রতিজ্ঞা’, ‘বিষবৃক্ষ’, ‘সরলা’, ‘কপালকুণ্ডলা’ ইত্যাদি চলচ্চিত্র ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ম্যাডানকে চিরস্মরণীয় করেছে।
উল্লেখযোগ্য অবদান
1) ১৯১৯ ম্যাডান কোম্পানির প্রযোজনায় প্রথম বাংলা কাহিনিচিত্র ‘বিল্বমঙ্গল’ নির্মিত হয়।
2) ১৯২৮ সালে এই কোম্পানি প্রথপম সবাক চলচ্চিত্র হিসেবে Melody of Love দেখিয়েছিল।
3) ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে তারাই তৈরি করে প্রথম বাংলা সবাক চিত্র ‘জামাইষষ্ঠী'।
[৩] বাংলার চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ‘নিউ থিয়েটার্স’-এর অবদান আলোচনা করো।
[উ] সম্পূর্ণভাবে বাঙালির উদ্যোগে বাংলা চলচ্চিত্র নির্মাণক্ষেত্রটি তৈরি হয় বীরেন্দ্রনাথ সরকারের ‘নিউ থিয়েটার্স' প্রতিষ্ঠার (১৯৩১ খ্রি.) মধ্যে দিয়ে। সবাক যুগের সূচনার দিকে নিউ থিয়েটার্স-এর উদ্যোগে বাংলা তথা ভারতীয় সিনেমা গুরুত্বপূর্ণ বাঁক নিয়েছিল।
নিউ থিয়েটার্সের কলাকুশলী
নিউ থিয়েটার্সের সূচনালগ্নে চলচ্চিত্রকে কেন্দ্র করে একদল প্রতিভাবান মানুষ একত্রিত হয়েছিল। চিত্র পরিচালনায় দেবকী কুমার বসু, প্রমথেশ বড়ুয়া, ক্যামেরায় নীতিন বসু, শব্দ প্রকৌশলে মুকুল বসু, গানে রাইচাঁদ বড়াল, কৃষ্ণচন্দ্র দে, পঙ্কজ মল্লিক, শচীনদেব বর্মণ, কমল দাশগুপ্ত, অজয় ভট্টাচার্য প্রমুখ নিউ থিয়েটার্সের প্রযোজনাকে সমৃদ্ধ করেছিল। অভিনয়ে ধীরেন গঙ্গোপাধ্যায়, প্রমথেশ বড়ুয়া, ছবি বিশ্বাস, পাহাড়ী স্যান্যাল, কানন দেবী প্রমুখ উল্লেখ্য।
প্রেমাঙ্কুর আতর্থী, নরেন্দ্র দেব, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, প্রেমেন্দ্র মিত্র প্রমুখ খ্যাতনামা সাহিত্যিকদের বীরেন্দ্রনাথ সরকার সিনেমা নির্মাণে নিয়ে আসেন। স্বাভাবিকভাবেই এইসমস্ত মানুষদের বহুবিধ চিন্তা তিরিশের দশকে বাংলা সিনেমায় বৈচিত্র্য নিয়ে আসে।
নিউ থিয়েটার্সের অবদান
নিউ থিয়েটার্সের ভারতজোড়া খ্যাতির পিছনে ছিলেন দেবকী কুমার বসু। তাঁর পরিচালিত ‘চন্ডীদাস’ সেসময় জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। তাঁর পরিচালনায় নিউ থিয়েটার্সের প্রযোজনায় 'বিদ্যাপতি' চলচ্চিত্রায়ণে যথাযথ ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক প্রয়োগ করা হয়। বীরেন্দ্রনাথের আমন্ত্রণে রবীন্দ্রনাথ ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে 'নটীর পূজা' নাটককে চলচ্চিত্রায়িত করেন। প্রেমাঙ্কুর আতর্থীর ‘দেনাপাওনা', 'কপালকুন্ডলা', নরেশচন্দ্র মিত্রের ‘নৌকাডুবি’, প্রমথেশ বড়ুয়ার ‘দেবদাস’, ‘মুক্তি' ইত্যাদি ছবিগুলি জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। 'মুক্তি' ছবির অভিনেত্রী কানন দেবী অভিনয়ের জন্য পরপর দু'বার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরষ্কার পান।
[উ] সম্পূর্ণভাবে বাঙালির উদ্যোগে বাংলা চলচ্চিত্র নির্মাণক্ষেত্রটি তৈরি হয় বীরেন্দ্রনাথ সরকারের ‘নিউ থিয়েটার্স' প্রতিষ্ঠার (১৯৩১ খ্রি.) মধ্যে দিয়ে। সবাক যুগের সূচনার দিকে নিউ থিয়েটার্স-এর উদ্যোগে বাংলা তথা ভারতীয় সিনেমা গুরুত্বপূর্ণ বাঁক নিয়েছিল।
নিউ থিয়েটার্সের কলাকুশলী
নিউ থিয়েটার্সের সূচনালগ্নে চলচ্চিত্রকে কেন্দ্র করে একদল প্রতিভাবান মানুষ একত্রিত হয়েছিল। চিত্র পরিচালনায় দেবকী কুমার বসু, প্রমথেশ বড়ুয়া, ক্যামেরায় নীতিন বসু, শব্দ প্রকৌশলে মুকুল বসু, গানে রাইচাঁদ বড়াল, কৃষ্ণচন্দ্র দে, পঙ্কজ মল্লিক, শচীনদেব বর্মণ, কমল দাশগুপ্ত, অজয় ভট্টাচার্য প্রমুখ নিউ থিয়েটার্সের প্রযোজনাকে সমৃদ্ধ করেছিল। অভিনয়ে ধীরেন গঙ্গোপাধ্যায়, প্রমথেশ বড়ুয়া, ছবি বিশ্বাস, পাহাড়ী স্যান্যাল, কানন দেবী প্রমুখ উল্লেখ্য।
প্রেমাঙ্কুর আতর্থী, নরেন্দ্র দেব, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, প্রেমেন্দ্র মিত্র প্রমুখ খ্যাতনামা সাহিত্যিকদের বীরেন্দ্রনাথ সরকার সিনেমা নির্মাণে নিয়ে আসেন। স্বাভাবিকভাবেই এইসমস্ত মানুষদের বহুবিধ চিন্তা তিরিশের দশকে বাংলা সিনেমায় বৈচিত্র্য নিয়ে আসে।
নিউ থিয়েটার্সের অবদান
নিউ থিয়েটার্সের ভারতজোড়া খ্যাতির পিছনে ছিলেন দেবকী কুমার বসু। তাঁর পরিচালিত ‘চন্ডীদাস’ সেসময় জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। তাঁর পরিচালনায় নিউ থিয়েটার্সের প্রযোজনায় 'বিদ্যাপতি' চলচ্চিত্রায়ণে যথাযথ ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক প্রয়োগ করা হয়। বীরেন্দ্রনাথের আমন্ত্রণে রবীন্দ্রনাথ ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে 'নটীর পূজা' নাটককে চলচ্চিত্রায়িত করেন। প্রেমাঙ্কুর আতর্থীর ‘দেনাপাওনা', 'কপালকুন্ডলা', নরেশচন্দ্র মিত্রের ‘নৌকাডুবি’, প্রমথেশ বড়ুয়ার ‘দেবদাস’, ‘মুক্তি' ইত্যাদি ছবিগুলি জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। 'মুক্তি' ছবির অভিনেত্রী কানন দেবী অভিনয়ের জন্য পরপর দু'বার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরষ্কার পান।
[] ম্যাডান কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেলে সেই শূন্যস্থান পূরণ করেছিল ‘নিউ থিয়েটার্স’। এবং পরবর্তী কয়েক দশকের সিনেমায় এই থিয়েটার্সের প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী।
[৪] বাংলা সিনেমার নির্বাক যুগের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
বাংলা সিনেমার জন্মলগ্ন ও হীলালাল সেন
বাংলা সিনেমার সূচনা হয়েছিল নির্বাক সিনেমার মাধ্যমে। ভারতীয় সিনেমার সূচনায় যাঁর নাম সর্বাগ্রে উচ্চারিত হয় তিনি হলে হীরালাল সেন এবং তাঁর ‘রয়্যাল বায়োস্কোপ কোম্পানি’। ১৮৯৮ সালে হীরালাল সেন ও তাঁর ভাই মতিলাল সেন এই কোম্পানিটি গড়ে তোলেন। বায়োস্কোপ দেখানো ছাড়াও হীরালাল সেন কয়েকটি ছবি ও তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। তথ্যচিত্র দুটি হলো—দিল্লি দরবার এবং স্বদেশি ও বঙ্গভঙ্গ বিষয়ক। ১৯১৩ সালে কোম্পানিটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বাংলার গ্রামে গ্রামে বায়োস্কোপ দেখিয়ে গিয়েছিল।
ম্যাডান থিয়েটার ও নির্বাক যুগ
জে. এফ. ম্যাডান প্রতিষ্ঠিত ‘ম্যাডান থিয়েটার’ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সিনেমা দেখাতে শুরু করেন। এই থয়েটারে প্রথম হিন্দি ছবি ‘রাজা হরিশ্চন্দ্র’ এবং এঁদের প্রযোজিত বাংলা ছবি ‘সত্যবাদী রাজা হরিশ্চন্দ্র’ দেখানো হয়েছিল। প্রথম বাংলা কাহিনিচিত্র ‘বিল্বমঙ্গল’ এই কোম্পানি উদ্যোগে তৈরি হয়েছিল। মোট ৬২টি ছবি এঁদের প্রযোজনায় তৈরি হয়। এককথায় ম্যাডান থিয়েটার সমস্ত দিক দিয়ে সফল হয়েছিল।বাংলা সিনেমায় এঁদের অবদান অবশ্য স্মরণীয়।
অন্যান্য
বায়োস্কোপ প্রদর্শনী এবং প্রযোজনায় নির্বাক যুগের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কোম্পানি ছিল—ধীরেন গাঙ্গুলির ‘ইন্দো-ব্রিটিশ ফিল্ম কোম্পানি’, শিশির কুমার ভাদুড়ীর ‘তাজমহল ফিল্ম কোম্পানি’, অনাদি বসুর ‘অরোরা ফিল্ম কোম্পানি’ প্রভৃতি। নির্বাক যুগের সিনেমার সঙ্গে জড়িত কয়েকজন ব্যক্তি হলেন—হীরালাল সেন, প্রিয়নাথ গাঙ্গুলি, ধীরেন গাঙ্গুলি, শিশিরকুমার ভাদুড়ি, জ্যোতিষ বন্দ্যোপাধ্যায়, অনাদি বসু প্রমুখ।
নির্বাক যুগের সিনেমার বিশিষ্টতা
(ক) পৌরাণিক কাহিনির পাশাপাশি প্রেম ও মানবিকতা—নির্বাক যুগের চলচ্চিত্রের বিষয় ছিল।
(খ) এই সময়ে বাংলা নাটকের সঙ্গে চলচ্চিত্রের গভীর যোগসূত্র গড়ে ওঠে। নাটকের কাহিনিই শুধু নয়, নাটকের পরিচালকরাও বাংলা সিনেমায় যোগ দিয়েছিলেন।
(গ) নির্বাক যুগের সিনেমা ছিল বিনোদনকেন্দ্রিক, সমকালীন রাজনীতির কোনো প্রভাব সিনেমায় দেখা যায় না।
(ঘ) এইসময়ে জনপ্রিয় গল্প-উপন্যাস অবলম্বনে সিনেমা তৈরির প্রবণতা লক্ষ করা যায়।
[৫] বাংলা সিনেমায় সত্যজিৎ রায়ের অবদান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো। [২০১৫]
সূচনা =
পড়াশোনা শেষে সত্যজিৎ রায় ‘ডি জে কিমার’ নামে একটি ব্রিটিশ বিজ্ঞাপনী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হন। একাধারে প্রচ্ছদশিল্পী, 'সন্দেশ' পত্রিকার সম্পাদক ও সাহিত্যিক রূপে খ্যাতি অর্জন করলেও চলচ্চিত্রেই তাঁর সাম্রাজ্য নির্মাণ। ফরাসি পরিচালক জঁ রেনোয়ার চলচ্চিত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল সত্যজিৎ রায়। তিনি মোট ৩৬টি পূর্ণদৈর্ঘ্য, স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র ও তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন।
অবদান
সত্যজিতের সিনেমায় অবদানের প্রসঙ্গে যে সিনেমাটির কথা সর্বপ্রথমে উল্লিখিত হয় তা হলো, ১৯৫৫ আসলে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পথের পাঁচালী’। বিভূতিভূষণের ‘পথের পাঁচালী’, ‘অপুর সংসার', 'অপরাজিত' নিয়ে অপু-ত্রয়ী তৈরি করায় তিনি বিশ্ব চলচ্চিত্রের সেরা পরিচালকদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হন।
পরিচালিত চলচ্চিত্র =
অবদান
সত্যজিতের সিনেমায় অবদানের প্রসঙ্গে যে সিনেমাটির কথা সর্বপ্রথমে উল্লিখিত হয় তা হলো, ১৯৫৫ আসলে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পথের পাঁচালী’। বিভূতিভূষণের ‘পথের পাঁচালী’, ‘অপুর সংসার', 'অপরাজিত' নিয়ে অপু-ত্রয়ী তৈরি করায় তিনি বিশ্ব চলচ্চিত্রের সেরা পরিচালকদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হন।
পরিচালিত চলচ্চিত্র =
সত্যজিৎ রায় পরিচালিত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হলো—‘জলসাঘর’, ‘মহানগর’, ‘আগন্তুক’, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’, ‘শতরঞ্জ কী খিলাড়ি’, ‘নায়ক’ প্রভৃতি। ‘রবীন্দ্রনাথ’, ‘সিকিম’, ‘দ্য ইনার আই’ প্রভৃতি ৫টি তথ্যচিত্র নিমার্ণ করে সত্যজিৎ স্মরণীয় হয়ে আছেন। ছোটদের জন্য তিনি—‘হীরক রাজার দেশে’, ‘সোনার কেল্লা’, ‘গুপি গাইন বাঘা বাইন’ প্রভৃতি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। চলচ্চিত্রে তিনি ‘অস্কার’, ‘লিজিয়ন অফ অনার'-সহ বহু পুরস্কার পান।
'পথের পাঁচালী' চলচ্চিত্রটির গুরুত্ব =
'পথের পাঁচালী' চলচ্চিত্রটির গুরুত্ব =
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে সত্যজিৎ রায় একই নামে ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে ‘পথের পাঁচালী’ ছবিটি তৈরি করেন। এই ছবিটি হয়ে ওঠে বাঙালি জীবনের আত্মকথা।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অর্থানুকূল্যে আন্তর্জাতিক মানের প্রথম ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মিত হলো সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরে। ‘কান চলচ্চিত্র উৎসবে’ সিনেমাটি Best Human Document বা ‘মানবতার শ্রেষ্ঠ দলিল’ রূপে বিবেচ্য হলো। এই সিনেমায় সুর দিয়েছিলেন পণ্ডিত রবিশঙ্কর। ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে ‘পথের পাঁচালী’ একটি মাইলফলক।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অর্থানুকূল্যে আন্তর্জাতিক মানের প্রথম ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মিত হলো সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরে। ‘কান চলচ্চিত্র উৎসবে’ সিনেমাটি Best Human Document বা ‘মানবতার শ্রেষ্ঠ দলিল’ রূপে বিবেচ্য হলো। এই সিনেমায় সুর দিয়েছিলেন পণ্ডিত রবিশঙ্কর। ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে ‘পথের পাঁচালী’ একটি মাইলফলক।
[৬] বাংলা চলচ্চিত্রের ধারায় পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের অবদান আলোচনা করো। [২০১৭]
ভূমিকা =
ভূমিকা =
ঋত্বিক কুমার ঘটক (১৯২৫—১৯৭৬), যিনি ঋত্বিক ঘটক হিসেবেই সচরাচর অভিহিত। তিনি বিংশ শতাব্দীর একজন খ্যাতিমান বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক। বাংলা চলচ্চিত্র পরিচালকদের মধ্যে তিনি সত্যজিৎ রায় এবং মৃণাল সেনের সাথে তুলনীয়।
চলচ্চিত্রে অবদান
মার্কসীয় আদর্শে বিশ্বাসী ঋত্বিক ঘটকের পরিচালিত ছবিতে বামপন্থা ও মানবতার প্রকাশ ঘটে। তাঁর প্রথম ছবি ‘নাগরিক' (১৯৫২) নিম্নমধ্যবিত্তের অসহায়তার ইতিহাস। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর মধ্যবিত্তের জীবনযন্ত্রণার প্রকাশ এ ছবি। এটি প্রথম নির্মিত ছবি হলেও মুক্তিপ্রাপ্ত হয়েছিল ১৯৭৭ সালে। তাঁর পরিচালিত দ্বিতীয় কিন্তু প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘অযান্ত্রিক’ যন্ত্র-মানব সম্পর্কের আশ্চর্য রূপকথা। এটি ঋত্বিক ঘটকের শ্রেষ্ঠ ছবি।
উদ্বাস্তু সমস্যা, আধুনিক জীবনে পাপের প্রতি ঘৃণা, আর পুনর্বাসনের লড়াইয়ে ক্ষতবিক্ষত মানুষ ‘মেঘে ঢাকা তারা’ (১৯৬০) চলচ্চিত্রটির বিষয়। ‘সুবর্ণরেখা’ (১৯৬২) দেশভাগের যন্ত্রণার সার্থক প্রকাশ। ১৯৭০ সালে তৈরি ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ তার এক অবিস্মরণীয় সৃষ্টি। সত্তর দশকের সমাজ ও মানুষের প্রতিরূপ ‘যুক্তি-তক্কো-গপ্পো’ (১৯৭৭)। এ ছাড়া ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’ (১৯৫৯) চলচ্চিত্র এবং ‘ফিয়ার’, ‘ছৌ’, ‘আমার লেনিন’ ইত্যাদি গোটা দশেক তথ্যচিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি তৈরি করেন তিনি।
বাংলাদেশের পটবদলকে অগণিত মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার তিনি বেছে নেন চলচ্চিত্র মাধ্যমকে। দেশভাগজনিত ট্র্যাজেডি বাঙালি জীবনের স্থায়ী যন্ত্রণা এবং এই যন্ত্রণাক্লিষ্ট বাঙালির সার্থক রূপকার ঋত্বিক ঘটক।
চলচ্চিত্র =
চলচ্চিত্রে অবদান
মার্কসীয় আদর্শে বিশ্বাসী ঋত্বিক ঘটকের পরিচালিত ছবিতে বামপন্থা ও মানবতার প্রকাশ ঘটে। তাঁর প্রথম ছবি ‘নাগরিক' (১৯৫২) নিম্নমধ্যবিত্তের অসহায়তার ইতিহাস। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর মধ্যবিত্তের জীবনযন্ত্রণার প্রকাশ এ ছবি। এটি প্রথম নির্মিত ছবি হলেও মুক্তিপ্রাপ্ত হয়েছিল ১৯৭৭ সালে। তাঁর পরিচালিত দ্বিতীয় কিন্তু প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘অযান্ত্রিক’ যন্ত্র-মানব সম্পর্কের আশ্চর্য রূপকথা। এটি ঋত্বিক ঘটকের শ্রেষ্ঠ ছবি।
উদ্বাস্তু সমস্যা, আধুনিক জীবনে পাপের প্রতি ঘৃণা, আর পুনর্বাসনের লড়াইয়ে ক্ষতবিক্ষত মানুষ ‘মেঘে ঢাকা তারা’ (১৯৬০) চলচ্চিত্রটির বিষয়। ‘সুবর্ণরেখা’ (১৯৬২) দেশভাগের যন্ত্রণার সার্থক প্রকাশ। ১৯৭০ সালে তৈরি ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ তার এক অবিস্মরণীয় সৃষ্টি। সত্তর দশকের সমাজ ও মানুষের প্রতিরূপ ‘যুক্তি-তক্কো-গপ্পো’ (১৯৭৭)। এ ছাড়া ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’ (১৯৫৯) চলচ্চিত্র এবং ‘ফিয়ার’, ‘ছৌ’, ‘আমার লেনিন’ ইত্যাদি গোটা দশেক তথ্যচিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি তৈরি করেন তিনি।
বাংলাদেশের পটবদলকে অগণিত মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার তিনি বেছে নেন চলচ্চিত্র মাধ্যমকে। দেশভাগজনিত ট্র্যাজেডি বাঙালি জীবনের স্থায়ী যন্ত্রণা এবং এই যন্ত্রণাক্লিষ্ট বাঙালির সার্থক রূপকার ঋত্বিক ঘটক।
চলচ্চিত্র =
ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত চলচ্চিত্রসমূহ—নাগরিক, অযান্ত্রিক, বাড়ী থেকে পালিয়ে, মেঘে ঢাকা তারা, কোমল গান্ধার, সুবর্ণরেখা, তিতাস একটি নদীর নাম, যুক্তি তক্কো আর গপ্পো। শর্টফিল্ম ও তথ্যচিত্রের তালিকা—দ্য লাইফ অফ দ্য আদিবাসিজ, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খান, আমার লেলিন, পুরুলিয়ার ছৌ প্রভৃতি।
পুরস্কার ও সম্মাননা =
পুরস্কার ও সম্মাননা =
১৯৭০ সালে ভারত সরকার তাকে শিল্পকলায় পদ্মশ্রী উপাধিতে ভূষিত করেন। ‘হীরের প্রজাপতি’ চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ শিশুতোষ চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’ চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার বিভাগে ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
[৭] বাংলা চলচ্চিত্রের ধারায় পরিচালক মৃণাল সেনের অবদান আলোচনা করো।
ভূমিকা =
মৃণাল সেন (১৯২৩—২০১৮) বাংলা চলচ্চিত্রের এক ব্যতিক্রমী পরিচালক। ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে তাঁর প্রথম ছবি ‘রাতভোর’ এবং ২০০২ খ্রিস্টাব্দে শেষ চলচ্চিত্র ‘আমার ভুবন' মুক্তি পায়। তাঁর চলচ্চিত্র শিল্পগুণে সমৃদ্ধ, সময় ও সমাজের ইতিহাস প্রতিফলিত হয়। তিনি ছিলেন প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকার ও লেখক।
চলচ্চিত্রে মৃণাল সেনের অবদান
১৯৫৫ সালে মৃণাল সেনের প্রথম পরিচালিত ছবি ‘রাত-ভোর’ মুক্তি পায়। এই ছবিটি বেশি সাফল্য পায় নি। তাঁর দ্বিতীয় ছবি ‘নীল আকাশের নিচে’ তাঁকে স্থানীয় পরিচিতি এনে দেয়। আর তৃতীয় ছবি ‘বাইশে শ্রাবণ’ থেকে তিনি আন্তর্জাতিক পরিচিতি পান।
চলচ্চিত্র সমূহ =
চলচ্চিত্রে মৃণাল সেনের অবদান
১৯৫৫ সালে মৃণাল সেনের প্রথম পরিচালিত ছবি ‘রাত-ভোর’ মুক্তি পায়। এই ছবিটি বেশি সাফল্য পায় নি। তাঁর দ্বিতীয় ছবি ‘নীল আকাশের নিচে’ তাঁকে স্থানীয় পরিচিতি এনে দেয়। আর তৃতীয় ছবি ‘বাইশে শ্রাবণ’ থেকে তিনি আন্তর্জাতিক পরিচিতি পান।
চলচ্চিত্র সমূহ =
মৃণাল সেন পরিচালিত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি চলচ্চিত্রের নাম এখানে উল্লিখিত হলো--নীল আকাশের নীচে, বাইশে শ্রাবণ, পুনশ্চ, প্রতিনিধি, আকাশ কুসুম, ভুবন সোম, ইন্টারভিউ, কলকাতা ৭১, পদাতিক, আকালের সন্ধানে, খারিজ, আমার ভুবন প্রভৃতি। মৃণাল সেন বাংলা ভাষা ছাড়াও হিন্দি, ওড়িয়া ও তেলুগু ভাষায় চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। তিনি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যচিত্রও নির্মাণ করেন, যথা—মুভিং পার্স্পেক্টিভ, ক্যালকাটা মাই এল ডোরাডো, ত্রিপুরা প্রসঙ্গ প্রভৃতি।
মৃণাল সেনের ছবি বিশ্ব মানব সমাজের রূপ-গুণ-স্বভাব-চরিত্র প্রকাশ করেছে। মৃণাল সেন তাঁর ছবিতে সামাজিক ও মানবিক সম্পর্কগুলি সমালোচনার দৃষ্টিতে দেখেছেন। পরিচালক যদিও মনে করেন ‘আমার একটাও ছবি নেই যা নির্ভুল।' মৃণাল সেনের এই অতৃপ্তিই তাঁকে বাংলা তথা ভারতীয় তথা বিশ্ব চলচ্চিত্রের জগতে এক মাইলফলক করে গড়ে তুলেছে।
পুরস্কার ও সম্মাননা =
মৃণাল সেনের ছবি বিশ্ব মানব সমাজের রূপ-গুণ-স্বভাব-চরিত্র প্রকাশ করেছে। মৃণাল সেন তাঁর ছবিতে সামাজিক ও মানবিক সম্পর্কগুলি সমালোচনার দৃষ্টিতে দেখেছেন। পরিচালক যদিও মনে করেন ‘আমার একটাও ছবি নেই যা নির্ভুল।' মৃণাল সেনের এই অতৃপ্তিই তাঁকে বাংলা তথা ভারতীয় তথা বিশ্ব চলচ্চিত্রের জগতে এক মাইলফলক করে গড়ে তুলেছে।
পুরস্কার ও সম্মাননা =
মৃণাল সেন পরিচালিত চলচ্চিত্রগুলি প্রায় সবকটি বড় চলচ্চিত্র উৎসব থেকে পুরস্কার জয় করেছে। ভারত এবং ভারতের বাইরের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে। তিনি ভারত সরকার দ্বারা পদ্মভূষণ পুরস্কার লাভ করেন। ২০০৫ সালে তিনি দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার পান।
[৮] বাংলা সিনেমায় তথ্যচিত্রের ধারা সম্পর্কে আলোচনা করো।
[উ] জন গ্রিয়ারসন প্রথমে তথ্যচিত্র বা ‘Documentry' শব্দটি ব্যবহার করেন ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে। তথ্যচিত্রকে বলা হয় একটি অকল্পিত ছায়াছবি যা ঐতিহাসিকতাকে রক্ষণাবেক্ষণের উদ্দেশ্যে কোনো বিষয়কে তথ্যপূর্ণ হিসেবে পরিবেশন করে। তথ্যচিত্র এবং সাধারণ চলচ্চিত্রের মধ্যে তফাত রয়েছে। যেমন—তথ্যচিত্র বাস্তব্জীবনের প্রতিরূপ হলেও কাহিনিচিত্র তা নয়। তথ্যচিত্র বাস্তনির্ভর হলেও কাহিনিচিত্র আবেগনির্ভর।
বাংলা তথ্যচিত্র
বাংলা তথ্যচিত্রের ধারাকে অন্তর্নিহিত বিষয়ের নিরিখে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করে আলোচনা করা যায়—বিষয়নির্ভর ও চরিত্রনির্ভর তথ্যচিত্র।
[] বাংলায় বিষয়নির্ভর তথ্যচিত্র নির্মাণের সূচনা করেন হীরালাল সেন। বলা যেতে পারে তিনিই বাংলা তথ্যচিত্রের পথ প্রদর্শক। ‘রানি ভিক্টোরিয়ার শবযাত্রা’, ‘দ্য বেঙ্গল পার্টিশন ফিল্ম’ ইত্যাদি তাঁর উল্লেখযোগ্য কীর্তি। তারপর অরোরা ফিল্মসের ‘পুলিশের লাঠিচালনা’, ‘রবীন্দ্রনাথের শেষযাত্রা’ বাংলার তথ্যচিত্র ধারাকে সমৃদ্ধ করে। পরবর্তীতে হরিসাধন দাশগুপ্তের ‘কোনারক’, ‘পুণ্যতীর্থ দক্ষিণেশ্বর’, ‘পৌষমেলা’, ‘বেঙ্গল টাইগারস’, কিংবা সত্যজিৎ রায়ের ‘সিকিম’, মৃণাল সেনের ‘ক্যালকাটা মাই এল ডোরাডো’—বাংলা বিষয়ভিত্তিক তথ্যচিত্রকে চিরন্তন করে তুলেছে।
[] বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে নির্মিত বাংলা জীবন বা চরিত্রনির্ভর তথ্যচিত্র ধারাটিও অত্যন্ত সমৃদ্ধ। হরিসাধন দাশগুপ্তের--‘আচার্য প্রফুল্লচন্দ্ৰ রায়’, ‘ওস্তাদ বড়ে গুলাম আলি খাঁ সাহেব’, ‘বাঘাযতীন’, ‘নন্দলাল’; পূর্ণেন্দু পত্রীর--‘অবনীন্দ্রনাথ’; সত্যজিৎ রায়ের--‘রবীন্দ্রনাথ’ বা ‘দ্য ইনার আই’ (বিনোদবিহারীকে নিয়ে), ‘বালা’ (বালাসরস্বতী), ‘সুকুমার রায়’, ঋত্বিক ঘটকের--‘ওস্তাদ আলাউদ্দিন খান’ ছাড়াও রামকিঙ্কর বেইজকে নিয়ে ‘আর্টিস্ট অব দ্য সোল’ ইত্যাদি অজস্র জীবনভিত্তিক তথ্যচিত্রে বাংলা তথ্যচিত্রের ধারা সমৃদ্ধ।
[উ] জন গ্রিয়ারসন প্রথমে তথ্যচিত্র বা ‘Documentry' শব্দটি ব্যবহার করেন ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে। তথ্যচিত্রকে বলা হয় একটি অকল্পিত ছায়াছবি যা ঐতিহাসিকতাকে রক্ষণাবেক্ষণের উদ্দেশ্যে কোনো বিষয়কে তথ্যপূর্ণ হিসেবে পরিবেশন করে। তথ্যচিত্র এবং সাধারণ চলচ্চিত্রের মধ্যে তফাত রয়েছে। যেমন—তথ্যচিত্র বাস্তব্জীবনের প্রতিরূপ হলেও কাহিনিচিত্র তা নয়। তথ্যচিত্র বাস্তনির্ভর হলেও কাহিনিচিত্র আবেগনির্ভর।
বাংলা তথ্যচিত্র
বাংলা তথ্যচিত্রের ধারাকে অন্তর্নিহিত বিষয়ের নিরিখে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করে আলোচনা করা যায়—বিষয়নির্ভর ও চরিত্রনির্ভর তথ্যচিত্র।
[] বাংলায় বিষয়নির্ভর তথ্যচিত্র নির্মাণের সূচনা করেন হীরালাল সেন। বলা যেতে পারে তিনিই বাংলা তথ্যচিত্রের পথ প্রদর্শক। ‘রানি ভিক্টোরিয়ার শবযাত্রা’, ‘দ্য বেঙ্গল পার্টিশন ফিল্ম’ ইত্যাদি তাঁর উল্লেখযোগ্য কীর্তি। তারপর অরোরা ফিল্মসের ‘পুলিশের লাঠিচালনা’, ‘রবীন্দ্রনাথের শেষযাত্রা’ বাংলার তথ্যচিত্র ধারাকে সমৃদ্ধ করে। পরবর্তীতে হরিসাধন দাশগুপ্তের ‘কোনারক’, ‘পুণ্যতীর্থ দক্ষিণেশ্বর’, ‘পৌষমেলা’, ‘বেঙ্গল টাইগারস’, কিংবা সত্যজিৎ রায়ের ‘সিকিম’, মৃণাল সেনের ‘ক্যালকাটা মাই এল ডোরাডো’—বাংলা বিষয়ভিত্তিক তথ্যচিত্রকে চিরন্তন করে তুলেছে।
[] বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে নির্মিত বাংলা জীবন বা চরিত্রনির্ভর তথ্যচিত্র ধারাটিও অত্যন্ত সমৃদ্ধ। হরিসাধন দাশগুপ্তের--‘আচার্য প্রফুল্লচন্দ্ৰ রায়’, ‘ওস্তাদ বড়ে গুলাম আলি খাঁ সাহেব’, ‘বাঘাযতীন’, ‘নন্দলাল’; পূর্ণেন্দু পত্রীর--‘অবনীন্দ্রনাথ’; সত্যজিৎ রায়ের--‘রবীন্দ্রনাথ’ বা ‘দ্য ইনার আই’ (বিনোদবিহারীকে নিয়ে), ‘বালা’ (বালাসরস্বতী), ‘সুকুমার রায়’, ঋত্বিক ঘটকের--‘ওস্তাদ আলাউদ্দিন খান’ ছাড়াও রামকিঙ্কর বেইজকে নিয়ে ‘আর্টিস্ট অব দ্য সোল’ ইত্যাদি অজস্র জীবনভিত্তিক তথ্যচিত্রে বাংলা তথ্যচিত্রের ধারা সমৃদ্ধ।
আমাদের টেলিগ্রাম ও ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হোন
👇👇👇👇