ধ্বনিতত্ত্ব থেকে বড়ো প্রশ্ন রচনাধর্মী প্রশ্ন ২০২৪ | দ্বাদশ শ্রেণি | Dhonitotto Phonetics Class 12 2024 | Long Question Answer | PDF Download
ধ্বনিতত্ত্ব থেকে বড়ো প্রশ্ন রচনাধর্মী প্রশ্ন ২০২৪ | দ্বাদশ শ্রেণি | Dhonitotto Phonetics Class 12 2024 | Long Question Answer | PDF Download
[১] অবিভাজ্যধ্বনি কাকে বলে? অবিভাজ্য ধ্বনির পরিচয় দাও।[২০১৮]
[উ] ভাষার কিছু ধ্বনি উপাদান থাকে যেগুলিকে কৃত্রিমভাবেও খণ্ড করা যায় না। কারণ সেগুলি কোনো বিভাজ্য ধ্বনির অংশ নয়, সেগুলি একাধিক ধ্বনিখণ্ড জুড়ে অবস্থান করে। এগুলিকে বলে অবিভাজ্যধ্বনি।
কয়েকটি অবিভাজ্য ধ্বনি হলো—শ্বাসাঘাত, সুরতরঙ্গ, যতি প্রভৃতি।
অবিভাজ্যধ্বনির পরিচয়
শ্বাসাঘাত : সাধারণত একাধিক দলযুক্ত, বাংলা শব্দের প্রথম দলে বেশি জোর দিয়ে উচ্চারণ করাকে শ্বাসাঘাত বলে। শ্বাসাঘাত কোনো নির্দিষ্ট ধ্বনিতে শ্বাসাঘাত নয়, সম্পূর্ণ দল জুড়ে উপস্থিত থাকে বলে এটি অবিভাজ্যধ্বনি।
যেমন – ‘ছিপখান তিনদাঁড় তিনজন মাল্লা(মাল্লা)’--উদাহরণটির প্রত্যেক ক্ষেত্রে প্রথম দলে শ্বাসাঘাত লক্ষ করা যাচ্ছে।
সুরতরঙ্গ : বাক্যে সুরের ওঠা-নামাকে সুরতরঙ্গ বলে। সুরতরঙ্গ শুনে শ্রোতা বাক্যের অর্থ বা ভাব উপলব্ধি করতে পারে। যেমন—
বিবৃতিবাক্য – তুমি যাবে।
প্রশ্নবাক্য - তুমি যাবে?
--এখানে বিবৃতিমূলক বাক্যে ‘সুর’ ক্রমশ নেমেছে। অন্যদিকে প্রশ্নবোধক বাক্যের ক্ষেত্রে সুরতরঙ্গের বৃদ্ধি ঘটেছে।
দৈর্ঘ্য : দলের উচ্চারণে স্বরধ্বনির বিস্তৃতি দৈর্ঘ্য নামে পরিচিত। বাংলায় একদল শব্দের স্বরধ্বনির দৈর্ঘ্য বহুদল শব্দের স্বরধ্বনি অপেক্ষা বেশি।
যেমন--আমার, তোমার শব্দে ‘আ’ এবং ‘তো’ দলগুলির দৈর্ঘ্য ‘মার’ দলগুলি অপেক্ষা বেশি।
যতি : দল বা শব্দসীমার অপেক্ষাকৃত দীর্ঘচ্ছেদকে যতি বলে। যেমন তোমার নাম | জানতে চাই। এই বাক্যে ‘|’ হল যতিচিহ্ন।
[২] গুচ্ছধ্বনির পরিচয় দাও। [২০১৬]
[উ] সংজ্ঞা : পাশাপাশি উচ্চারিত দুটি ব্যঞ্জনধ্বনি সমাবেশকে গুচ্ছধ্বনি বলে।
গুচ্ছধ্বনির বৈশিষ্ট্য : গুচ্ছধ্বনির বৈশিষ্ট্যগুলি হল :
ক. সমবেত ব্যঞ্জনধ্বনির মধ্যে কোনো স্বরধ্বনি থাকে না।
খ. গুচ্ছধ্বনির দুটি ব্যঞ্জনের প্রথমটি পূর্ববর্তী দলের এবং পরেরটিকে পরবর্তী দলের অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়।
গ. গুচ্ছধ্বনি সব সময় দলের অভ্যন্তরে বসে, শুরুতে নয়।
উদাহরণ : বন্ধন, সস্তা।
বিশ্লেষণ : ‘বন্ধন’ শব্দে ‘ন্ধ’ হল গুচ্ছধ্বনি। [ন] ও [ধ] এর মাঝে কোনো স্বরধ্বনি নেই। উচ্চারণ বন্-ধন—এই দুটি দলে বিভক্ত হয়।
‘সস্তা' শব্দে 'স্ত’ হল গুচ্ছধ্বনি। এখানে [স] ও [ত] -এর মাঝে কোনো স্বরধ্বনি নেই। উচ্চারণ সস্-তা এই দুটি দলে বিভক্ত হয়।
গুচ্ছধ্বনির সংখ্যা : বাংলা ভাষায় দুটি ব্যঞ্জনধ্বনি সমাবেশকে গঠিত গুচ্ছধ্বনির সংখ্যা ২০০টির বেশি। বাংলা ভাষায় তিনটি ব্যঞ্জনধ্বনি সমাবেশকে গঠিত গুচ্ছধ্বনির সংখ্যা ৮টি। যেমন—মন্ত্র, বস্ত্র। আবার বাংলা ভাষায় চারটি ব্যঞ্জনের সমাবেশে গঠিত গুচ্ছধ্বনির সংখ্যা মাত্র একটি। তা হল ‘সংস্কৃত’ শব্দটি।
[৩] যুক্তধ্বনির পরিচয় দাও। [২০১৯]
[উ] সংজ্ঞা : শব্দ বা দলের আদিতে উচ্চারিত ব্যঞ্জনধ্বনির সমাবেশকে যুক্তধ্বনি বলে।
যুক্তধ্বনির বৈশিষ্ট্য : যুক্তধ্বনির বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
ক. যুক্তধ্বনি সর্বদা দলের আদিতে উচ্চারিত হয়।
খ. যুক্তধ্বনির মাঝে কোনো দলসীমা থাকে না।
গ. দুই ব্যঞ্জনের সমাবেশে গঠিত যুক্তধ্বনির প্রথম ব্যঞ্জনটি [স], নতুবা দ্বিতীয় ব্যঞ্জনটি [র] বা [ল] হয়।
ঘ. গুচ্ছধ্বনির তুলনায় যুক্তধ্বনি বেশি সংহত, কারণ যুক্তধ্বনির মাঝে কোনো দলসীমা থাকে না।
দৃষ্টান্ত : স্পৃহা, প্রাণ, ট্রফি।
বিশ্লেষণ : ‘প্রাণ’ শব্দে [প] ও [র] এই সমবেত দুটি ব্যঞ্জন হল যুক্তধ্বনি। কারণ এই ধ্বনি শব্দের আদিতে উচ্চারিত হয়েছে এবং মাঝে কোনো দলসীমা নেই। ‘স্পৃহা' শব্দের স্ প্ র্ এই তিনটি ধ্বনির সমাবেশে হল যুক্তধ্বনি। কারণ, এই ধ্বনি শব্দের আদিতে উচ্চারিত হয়েছে এবং মাঝে কোনো দল সীমা নেই।
যুক্তধ্বনির সংখ্যা : বাংলা ভাষায় দুই ব্যঞ্জনের ২৮টি যুক্তধ্বনি আছে এবং কৃতঋণ শব্দে যুক্তধ্বনির সংখ্যা ১৮টি। আবার তিন ব্যঞ্জনের সমাবেশে গঠিত যুক্তধ্বনি দুটি, যথা—স্ত্র এবং স্পৃ।
[৪] উদাহরণসহ ‘ধ্বনিমূল’ ও ‘সহধ্বনি'-র সম্পর্ক বুঝিয়ে দাও। [২০২০]
[উ] পরিচয় : ধ্বনি হলো মৌখিক ভাষার ক্ষুদ্রতম একক। বাংলা ভাষায় কথা বলার সময় যেসব ধ্বনি উচ্চারিত হয়, সেগুলোর দুরকমের ভূমিকা থাকে—ধ্বনিমূলের এবং সহধ্বনির।
প্রতিবেশ বিশেষে একটি ধ্বনির উচ্চারণবৈচিত্র্য-সহ মূল ধ্বনিটিকে ধ্বনিমূল বলে। অর্থাৎ একই ধ্বনির উচ্চারণ এক-এক শব্দে এক-এক রমকের হতে পারে। আবার একটি ধ্বনিমূলের উচ্চারণ বিভিন্ন শব্দে যে আলাদা রকমের হয়, সেই আলাদা রকমের উচ্চারণকে বলে সহধ্বনি। যেমন—লম্বা, পল্টু, চালতা—এই তিনটি শব্দে ‘ল’ হল ধ্বনিমূল, কিন্তু তিনটি শব্দের ‘ল্’ উচ্চারণ একরকমের নয়। তিনটি শব্দের ‘ল্’ নিজের নির্দিষ্ট প্রতিবেশে উচ্চারিত হয়, একটির স্থানে অন্যটি উচ্চারিত হয় না।
ধ্বনিমূল ও সহধ্বনির সম্পর্ক
১) একটি ধ্বনিমূল যেন একটি ধ্বনিপরিবার এবং সহধ্বনিগুলি সেই পরিবারের সদস্য।
২) ধ্বনিমূল হল কল্পনা, আর সহধ্বনি তার বাস্তব রূপ বা শ্রাব্য অস্তিত্ব ৷
৩) ধ্বনিমূল ভাষায় অর্থের পার্থক্য আনে, কিন্তু সহধ্বনি অর্থের তফাত করতে পারে না। যেমন—‘দান’ ও ‘দাম’ শব্দে ‘ন্’ ও ‘ম্’ ধ্বনিমূল দুটি শব্দে অর্থ-পার্থক্য ঘটিয়েছে আর সহধ্বনি এদের অর্থ বদলায়নি।
[৫] ন্যূনতম শব্দজোড় কী? উদাহরণসহ বুঝিয়ে দাও।
[উ] সংজ্ঞা : কোনো নির্দিষ্ট ভাষায় একটি ধ্বনি প্রতিবেশ বিশেষে বিভিন্ন ভাবে উচ্চারিত হতে পারে। অর্থাৎ একই ধ্বনির উচ্চারণ ভিন্ন শব্দে ভিন্ন রকমের হতে পারে। উচ্চারণ বৈচিত্র্য-সহ মূলধ্বনিটিকে ধ্বনিমূল মিল থাকলেও কোনো একটিমাত্র ধ্বনিমূল আলাদা হলে তাকে ন্যূনতম শব্দজোড় বলা হয়।
বিশ্লেষণ : দান (দ্+আ+ন্) ও দাম (দ+আ+ম্) ন্যূনতম শব্দজোড়। কারণ, ‘ন্’ ও ‘ম্’ দুটি পৃথক ধ্বনিমূল, কিন্তু বাকি ধ্বনিগুলি (দ+আ) সাদৃশ্যসূচক। ন্যূনতম শব্দজোড়ের পৃথক ধ্বনিদুটিকে সেই ভাষার দুটি আলাদা ধ্বনিমূল বলে চেনা যায়। অর্থাৎ দেখা গেল, কোনো ভাষার ধ্বনিমূল সনাক্ত করতে গেলে, ঐ ভাষার ন্যূনতম শব্দজোড়ের সন্ধান করতে হয়। এই শব্দজোড়ের মাধ্যমে ধ্বনিমূল চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।
প্র। বিভাজ্যধ্বনি কাকে বলে? দুটি অবিভাজ্যধ্বনির পরিচয় দাও। (২০২২)
(উত্তর) বিভাজ্যধ্বনি কী : বাগধ্বনি প্রধানত দু-ধরনের - বিভাজ্যধ্বনি ও অবিভাজ্যধ্বনি। কথা বলার সময়ে আমরা অবিচ্ছিন্নভাবে পর পর ধ্বনি উচ্চারণ করে কথা বলি। একটি ধ্বনির শেষ ও পরের ধ্বনিটির শুরুর সীমায় কোনো ছেদ থাকে না। ফলে পাশাপাশি ধ্বনির উচ্চারণ সদাসর্বদাই পরস্পরকে প্রভাবিত করে। যেমন 'পাঁচ শো টাকা' কথাটা মুখের উচ্চারণে হয়ে যায় 'পাঁশ্শো টাকা'।
কিন্তু ব্যাকরণে ভাষার ধ্বনি বিশ্লেষণের সময়ে, বিশ্লেষণের সুবিধার জন্যে, প্রতিটি ধ্বনিকে আলাদা আলাদা খণ্ড একক হিসেব ধরে নেওয়া হয়। অতএব আমরা মনে রাখব যে, যদিও ধ্বনিখণ্ডের চেয়ে ধ্বনিপ্রবাহের বাস্তবতা অনেক বেশি; তবুও বিশ্লেষণের উদ্দেশ্যে ব্যাকরণের গন্ডিতে আমরা খণ্ডধ্বনিকেই গুরুত্ব দেবো। খণ্ডধ্বনির নাম বিভাজ্যধ্বনি।
বিভাজ্যধ্বনির পরিচয়
বিভাজ্যধ্বনির দুটি মূল ভাগ - স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি।
স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি : মুখের মান্য বাংলার স্বরধ্বনি ৭টি, ব্যঞ্জনধ্বনি ৩০টি। প্রতিটি স্বরধ্বনিরই অনুনাসিক উচ্চারণ হয় এবং ৪টি অর্ধস্বরধ্বনিও ভাষায় আছে।
বাংলা স্বরধনি : ৭টি স্বরধ্বনির বিবরণ ও ধ্বনিটি উচ্চারিত হয় এমন কয়েকটি করে শব্দের উদাহরণ দেওয়া হল,
ই = উচ্চ, সম্মুখ, সংবৃত, তালব্য : ইলিশ, রীতিনীতি, ইত্যাদি।
উ = উচ্চ, পশ্চাৎ, বর্তুল, সংবৃত, কণ্ঠ্য : রুদ্ধ, আলু, ভীমরুল।
এ = উচ্চমধ্য, সম্মুখ, প্রসূত, অর্ধসংবৃত, তালব্য : এদিকে, কে, ধনে।
ও = উচ্চমধ্য, পশ্চাৎ, বর্তুল, অর্ধসংবৃত, কণ্ঠ্য : অতি, তরু, চোখ, মন।
অ্যা = নিম্নমধ্য, সম্মুখ, অর্ধবিবৃত, তালব্য : এক, এখন, কেন।
অ = নিম্নমধ্য, পশ্চাৎ, বর্তুল, অর্ধবিবৃত, তালব্য : অনেক, অল্প, কমল।
আ = নিম্ন, কেন্দ্রীয়, বিবৃত : আম, নাম, কেনা।
বাংলা উচ্চারণে চারটি অর্ধস্বরধ্বনি আছে। এগুলির জন্য বাংলার কোনো বর্ণ নির্দিষ্ট নেই। খই, বউ, আয়, যাও- এই চারটি শব্দ যে যে অসম্পূর্ণ স্বরধ্বনির উচ্চারণে শেষ হয় সেই চারটি অর্ধস্বর, যদিও বাংলা অর্ধস্বর নিয়েও বিতর্ক আছে।
বাংলা ব্যঞ্জনধ্বনি : বাংলা ব্যঞ্জনধ্বনিগুলি বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত, যথা–স্পর্শ, উষ্ম, নাসিক্য, কম্পিত, তাড়িত, পার্শ্বিক। ক্–ম্ পর্যন্ত পঁচিশটি ব্যঞ্জন স্পর্শবর্ণ।
৩০টি ব্যঞ্জনধ্বনির মধ্যে স্ ও ঢ়্ -এর অস্তিত্ব নিয়ে বির্তক আছে। বাংলা শব্দে স্ শুধুমাত্র যুক্তধ্বনিতে উচ্চারিত হয়, একক ব্যঞ্জন হিসেবে বিদেশি শব্দে এর উচ্চারণ থাকলেও (যেমন সিনেমা) বাংলা শব্দে নেই। খুব পরিশীলিত উচ্চারণ ছাড়া ঢ় ও ড়্ -এর উচ্চারণে তফাত হয় না, দুটোই ড়্ হয়ে যায়। আবার অনেকের উচ্চারণেই র, ড়্ ও ঢ়্ – তিনটি ধ্বনির উচ্চারণই র্ হয়ে যায়।
------------------------------------
------------------------------------
------------------------------------
------------------------------------
------------------------------------
শব্দার্থতত্ত্ব থেকে প্রশ্ন
------------------------------------
--------------------------------------
------------------------------------------
PDF নিচে
আমাদের টেলিগ্রাম ও ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হোন
👇👇👇👇